Column

Awami League completes 70 years of journey

Awami League completes 70 years of journey

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 02 Dec 2019, 02:32 pm
২৩শে জুন, ২০১৯-এ আওয়ামী লীগ তাদের ৬৯তম বার্ষিকী পালন করল। শুরুতে দলের নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে, ১৯৫৫ সালে, 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে পার্টির নতুন নাম হয় আওয়ামী লীগ এবং এইভাবেই দেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পথে যাত্রা শুরু হয় তাদের।

১৯৪৯ সালে দলের গঠনের সময় থেকে  বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে এসেছে আওয়ামী লীগ। অনেক সীমাবদ্ধতা এবং ত্রুটি সত্ত্বেও বাংলাদেশকে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক বিশ্বাসযোগ্যতাসম্পন্ন, তুলনামূলকভাবে উদার মুসলমানপ্রধান একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে অবদান রেখেছে এই দল।

 

  স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বড় সময় জুড়ে এই দলটিকে তথাকথিত ইসলামি জাতীয়তাবাদী এবং পাকিস্তানপন্থী শক্তিগুলির হিংস্র চ্যালঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই শক্তিগুলির প্রতিনিধি মূলত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) এবং জামাত-এ-ইসলামি।  এই শক্তিগুলি সবসময়েই ধর্মকে একটি সুবিধাজনক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে এবং তাই তারা একটি  জোরালো ইসলামি জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের পক্ষে সওয়াল করে।  মানুষের মধ্যে মনস্তাত্বিক নিরাপত্তাহীনতা জাগিয়ে তুলতে ভারতের নেতিবাচক চিত্র আঁকে এরা।

 

দেশে এখনও আওয়ামী লীগেরই বৃহত্তম সমর্থনভিত্তি রয়েছে, যদিও সামরিক বাহিনী, সংবাদমাধ্যম এবং ব্যবসাক্ষেত্রের মত বৃহৎ ক্ষমতাকেন্দ্রিক পরিকাঠামোগুলিতে এদের উপস্থিতি সীমাবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার, বাংলাদেশ সৃষ্টির দাবিদার এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিভূমির প্রতিষ্ঠাতা এই  দলটিকে একটি অনন্য প্রতীকী পরিচিতি এনে দিয়েছে।

 

যখন শেখ হাসিনা  ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হন, তখন  তিনি দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করা  একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন।

 

শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন, কিন্তু মৌলবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের শিকড় ইতিমধ্যে এতটাই গভীরে গিয়েছে যে, তাঁর সরকারকে বিপুল বাধা এবং চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে এবং কোনও কার্যকরী ফল পেতে হলে যথেষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হবে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ আরও একবার নির্বাচনে জয়লাভ করে।  ২০২১ সালের মধ্যে  দারিদ্র্য ও   ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়া এবং সেই সাথে হাসিনার পরিকল্পনামত ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে 'পূর্বের সুইতজারল্যান্ডে' পরিণত করার লক্ষ্যে তারা উন্নয়নকর্ম চালিয়ে যেতে থাকে।

 

ডিসেম্বর, ২০১৮ সালে সংসদের নির্বাচনে  আওয়ামী লীগ বিপুল ভাবে জয়লাভ করে উপর্যুপরি তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে। এই নির্বাচনে তারা ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৩৪ টি আসন লাভ করে। নির্বাচন চলার সময় আওয়ামী লীগ সুশাসন এবং উন্নয়নের ব্যাপারে মনোনিবেশ করে এবং সেই সাথে সন্ত্রাসবাদ ও হিংসা দমনের প্রতিশ্রুতি দেয়।  আন্তর্জাতিক মহল থেকে এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সব থেকে পরিচ্ছন্ন নির্বাচন বলে বর্ননা করা হয়েছে।

 

এখন আওয়ামি লিগ-নেতৃত্বাধীন সরকারের  আশু লক্ষ্য তাদের রাজনৈতিক জয়কে সুসংহত করা। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা  দেশে স্বচ্ছ সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অতি সচেতন। দলের মধ্যে এ কথা তিনি বার বার বলেছেন যে, দূর্নীতি দমন এবং মানুষের  আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থতা দলের ভাগ্যে বিএনপি-র মতই দুর্দশা নিয়ে আসতে পারে।

 

আটচল্লিশ বছর আগে স্বাধীনতা ছিল জাতির স্বপ্ন  জাতিকে সেই স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিল যে দল, তার নাম আওয়ামী লীগ। জাতির এখন অন্য স্বপ্ন- বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের রূপে দেখা। এই লক্ষ্যে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই আওয়ামী লীগই। দলের লক্ষ্য অর্থনীতির উন্নতি ঘটানো, যার ফলে  জি ডি পি-র বৃদ্ধি ঘটেছে ৭.৬৫ শতাংশ হারে, মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯৯২ ডলার  এবং দারিদ্র্য হার কমে অর্ধেক হয়েছে ২২ শতাংশ। জুলাই ২০১৮ থেকে মে, ২০১৯-এর মধ্যে অনাবাসী বাংলাদেশীরা ঘরে পাঠিয়েছেন ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষেত্র এখন উপমহাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম।

 

আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ে তোলার। এই লক্ষ্যে পৌঁছোতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অক্লান্তভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। চেষ্টা চলছে যাতে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা প্রত্যেকটি নাগরিকের অধিগত হয়। স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পরে আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল গড়েছে। যথাযথ আইনি  প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে এ পর্যন্ত ছ' জনের ফাঁসি হয়েছে।

 

আওয়ামী লীগই পৃথিবীর একমাত্র দল যারা জাতির ভাষা, স্বাধীনতা এবং পতাকার জন্য লড়াই করেছে। উনিশশো একাত্তরে যখন এই দল দেশকে স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদান করে, সেই সময় তারা ছিল আশার প্রতীক। তার সুদীর্ঘ যাত্রাপথের বছরগুলিতে এই দল সবসময় সমস্ত সংগ্রামের পুরোভাগে থেকেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনও, যা অবশেষে স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে এগিয়ে যায় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম নেওয়ার পিছনে কাজ করে। স্বাধীনতার কয়েক দশক পরে, বর্তমানে, সেই আওয়ামী লীগ এখনও দেশে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মানবিকতার সব থেকে বড় পূজারী।