Column

Bangladesh promoting regional connectivity
তা সম্ভব হয়েছে দক্ষিণ এবং দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের বাংলাদেশের সক্রিয় প্রচেষ্টার ফলে। বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেকটরাল টেকনিকাল অ্যান্ড ইকনমিক কোঅপারেশন (বিমস্টেক), যা বহুমুখী সহযোগিতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, নেপাল এবং ভুটানের একটি গোষ্ঠী, তাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সাল থেকেই এই গোষ্ঠীর সেক্রেটারিয়েট মিটিং হচ্ছে ঢাকাতে।
দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে থাকা বাংলাদেশ অবস্থানগত সুবিধা আদায় করার মত চমৎকার জায়গায় আছে। বাংলাদেশ, ভুটান,ভারত এবং নেপালকে আসিয়ান এবং অন্যান্য পূর্ব এশীয় দেশগুলির সঙ্গে যুক্ত করার বিভিন্ন প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। এশিয়ার এই উপ-অঞ্চলের মধ্যে আরও গভীর বাণিজ্য, লগ্নি এবং যোগাযোগের ফলে বাংলাদেশ নতুন নতুন বাজার, উচ্চ মানের পণ্যের আমদানি উৎস, ক্রমবর্ধনা পরিবহন এবং লজিস্তিক্সের পরিষেবার সুবিধা নিয়ে লাভবান হতে পারে।
ভারতের সঙ্গে সড়ক, রেল এবং সমুদ্রপথে যুক্ত হওয়ার বেস কিছু উপ আঞ্চলিক সংযোগকারী প্রকল্প নিয়েছে বাংলাদেশ। এই সব নতুন যোগাযোগের ফলে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের আরও বেশি করে বাণিজ্যের সুযোগ তইরি করবে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তরপূর্বাঞ্চলে যাওয়ার জন্য সড়ক এবং রেলপথ তৈরি করায় ভারত আগ্রহী। কারণ এর ফলে পরিবহণের সময় এবং খরচ দুই-ই কমবে। উত্তরপূর্বাঞ্চলে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিটের সুবিধা এবং ভুটান, নেপাল এবং ভারতের সংগে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ - এই দু'টি অতি গুরুত্বপূর্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারত।
বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে প্রথম ট্রানজিটের শুরু হয়ে ২০১৬ সালের জুন মাসে কলকাতা থেকে বাংলাদেশের আশুগঞ্জে আগরতলাগামী একটি জাহাজ নোঙর করার সংগে। এখন কলকাতা থেকে আগরতলার জলপথে দূরত্ব ৩০০০ নটিকাল মাইল থেকে কমে হয়েছে ৬২০ নটিকাল মাইল, যার ফলে পণ্যপরিবহনের খরচ কমেছে ৫০ শতাংশ। একই সাথে স্থল এবং সমুদ্রপথে ট্রানজিটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে ভারতকে। টনপ্রতি শিপমেন্টের জন্য বাংলাদেশের আয় হয় ১৯২. ২২ টাকা।
বাংলাদেশ এবং নেপাল তাদের প্রোটোকল অফ ইংল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড সম্প্রসারিত করেছে। এর ফলে শুধু বাণিজ্যের প্রসারণ নয়, সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারীত্বের মাধ্যমে পরিবহন পরিকাঠামোতেও আরও বেশী লগ্নীর সুবিধা হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশকে চ্যানলেগুলি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল এবং ভারত (বি বি এন), যারা পূর্ব দক্ষিণ এশিয়ায় একট গোষ্ঠী, ২০১৫ সালে এই চারটি প্রতিবেশী এশিয় দেশের মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তি এবং পণ্যবাহী গাড়ি গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে 'মোটর ভেহিকলস এগ্রিমেন্ট' নামে একটি দিকনির্দেশক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আদলে করা এই এম ভি এ এই চারটি দেশের সীমান্তের এ দিক ওদিক থেকে বিপুল পণ্য এবং যাত্রী চলাচলের পথ প্রশস্ত করে। এর ফলে সংহতি এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হয় এই অঞ্চল।
এম ভি এ-র লক্ষ্য স্থল দিয়ে ঘেরা ভুটান, বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং ভারতের কলকাতা বন্দর এবং সেই সঙ্গে নেপালের সঙ্গে যুক্ত করা। এই এম ভি এ চুক্তি অনুযায়ী ২৪শে এপ্রিল, ২০১৮ সালে ঢাকা-কলকাতা-আগরতলা বাস পরিষেবা চালু করা হয়। একই ভাবে ঢাকা-শিলিং-গুয়াহাটি বাস পরিষাবাও শুরু হয়। খুলনা-কলকাতা এবং যশোর-কলকাতার মধ্যে নতুন বাস পরিষেবা চালু করতেও সম্মত হয় ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়েই।
যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ও ভারত পুরনো রেলপথগুলিকে আবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আটটি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট রয়েছে-সেগুলি হল, দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, রহনপুর-সিঙ্গাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর, শাহবাজপুর--মহসিনাসান, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী, বুড়িমারি-চেঙড়াবান্ধা এবং মোগলহাট-গিতলদহ।
সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালে তিনটি প্রকল্প- বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউরা- শাহবাজপুর সেকশন রিহ্যাবিলিটেশন, আখাঊরা-আগরতলা এবং চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়। খুলনা থেকে মনগলা বন্দর অবধি একটি ৩৪ কিমি রেল লাইন পাতার কাজ চলছে। এর ফলে মঙ্গলা থেকে নিকটবর্তী নেপাল এবং ভুটান সরাসরি রেলযোগাযোগ ঘটানো যাবে।
ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সালে ভারত এবং নেপাল একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার ফলে বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যে ট্রেড ট্রানজিটের পথ সুগম হয়। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি ভারতের প্রধানমন্তী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলার পর যে চুক্তি সম্পাদিত হয়, সেই অনুযায়ী ভারতের সিঙ্ঘাবাদের মধ্য দিয়ে নেপাল ও বাংলাদেশ তাদের মধ্যে বাণিজ্য পণ্য আদানপ্রদান করতে পারবে। নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে ট্রানজিট বর্তমানে চলছে কাকরাবিটা (নেপাল)- বাঙ্গাবান্ধা (বাংলাদেশ) করিডর দিয়ে।
ভারত এবং মায়ানমারের সংগে সমুদ্র সীমানার ব্যাপারে আরবিট্রেশনের মাধ্যমে যে রায় বাংলাদেশের পক্ষে গেছে, তার সাহায্যে প্রস্তুত করা হয়েছে "ব্লু ইকনমির পরিকল্পনা, যা প্রয়োগ করার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে তার প্রতিবেশীদের মধ্যে সমুদ্রপথে যোগাযোগ আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে, এই অজুহাতে অতীতের খালেদা জিয়া সরকার প্রতিবেশী দেশগুলির সংগে যোগাযোগ এবং তাদের ট্রানজিটের সুযোগ দেওয়ার তীব্র বিরোধী ছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই প্রথম উপলব্ধি করে যে, এ পথে এগোলে দুই পক্ষেরই লাভ, বাংলাদেশের তো বিশেষ করে, কারণ দেশের অতিরিক্ত আয় ছাড়াও বাংলাদেশের বণিক সম্প্রদায় এর ফলে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং তার থেকে দূরের জায়গায় সরাসরি পণ্য নিয়ে যেতে পারবেন এবং সেই সাথে সহজভাবে দু'দিকের মানুষজনের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে।
ভারত বাংলাদেশের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য নতুন করে দু' বিলিয়ন ডলার সাহায্য মঞ্জুর করার ফলে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল এবং ভারতের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং ভারতের পূব দিকের প্রতিবেশী দেশের মধ্য দিয়ে মানুষ ও পণ্যের ট্রানজিট সম্ভব হবে। বাণিজ্য যে হেতু সব দেশেরই প্রধান অগ্রাধিকার, একটি সুসংহত আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলা তাই বুদ্ধিমানের কাজ- শুধু রাজনৈতিক সম্পর্ক নয়, বাণিজ্যিক সম্পর্ককেও দৃঢ় করে তোলার জন্য।