Column

BNP in the doldrums

BNP in the doldrums

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 07 Dec 2018, 06:15 am
একটি অখণ্ড কাঠামো থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টিতে (বি এন পি ) বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তির সমাবেশ - অতি বামপন্থী থেকে অতি দক্ষিনপন্থী, একে অপরের সংগে অস্বস্তিকর সহাবস্থানে রয়েছে।

 এদের মধ্যে  একমাত্র মিল ভারত-বিরোধী এবং আওয়ামী লীগ-বিরোধী নীতির প্রতি বিশ্বস্ততায়। ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া বি এন পি দলের ভিতর থেকেই দক্ষিনপন্থী গোষ্ঠী এবং মিত্রশক্তি জামাত ও অন্যান্য  অন্তর্ঘাত প্রবণ পাকপন্থী নেতাদের থেকে অন্তর্ঘাত এবং ব্ল্যাকমেলের আশংকায় থাকে। এটি এমন একটি দল, যাকে নিচের থেকে তোলার বদলে উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়ার পার্টির বিপরীতে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ একটি প্রকৃত রাজনৈতিক দল, যার শিকড়ের শুরু বাংলাদেশের স্বাধীনতারও আগে।
 

বি এন পি তার জন্মলগ্ন থেকে বরাবরই সমস্ত বিষয়ে ভারতকে তুলোধোনা করা ভারত-বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত। বি এন পি -র ভারতবিরোধী অবস্থান, যা তার মূল দর্শন, শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর প্রকাশ্যে মাথা তোলে। এই ঘটনা দেশকে আবার একটি পাকিস্তান ধাঁচের কাঠামোর মধ্যে ফিরিয়ে আনে, যেখানে ভারতকে বাংলাদেশের শত্রু হিসেবে দেখানো হত। বি এন পি -র প্রতিষ্ঠাতা, দেশের প্রথম সামরিক শাসক, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর ইসলামি শক্তিগুলি, বিশেষত যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় স্পষ্টতই স্বাধীনতাবিরোধী এবং পাকিস্তানপন্থী  ভূমিকা নিয়েছিল, তাদের সমর্থন সংগ্রহ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর বি এন পি ১৯৯১ এবং তারপর আবার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে সেই ভারতবিরোধী জিগির তুলে।  জন্মলগ্ন থেকেই বি এন পি এমন একটি দল যেখানে আদর্শের থেকে বেশি ব্যক্তিগত লাভের জন্য মানুষ ভিড় করে বেশি। সাড়ে তিন দশক পরেও বি এন পি কখনওই একটি প্রকৃত রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে পারলনা। ক্ষমতায় না থাকলে দলটির মধ্যে কিছু লোকের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে এবং তারা তখন অন্য কোনও দলের আশ্রয়ে চলে যায়।
 

বি এন পি এখন কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্য ফ্রন্টের সংগে করেছে । বি এন পি নেতারা বুঝতে পেরেছেন যে, নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি তাঁদের ভোগাবে এবং সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে কোনও আন্দোলন গড়ে তোলা তাঁদের পক্ষে কঠিন হবে। তাই আগামী নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তাঁদের অন্য কোনও বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে।
 

জানুয়ারি ৫, ২০১৪ সালে শেষ যে নির্বাচন হয়ে গেল, দেশজুড়ে ব্যাপক হিংসা এবং হত্যালীলার মাধ্যমে তা বানচাল করে দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলে বি এন পি এবং তাদের সঙ্গী জামাত। পেট্রল বোমা ছুঁড়ে মানুষ খুন করে, তাদের জীবন্ত জ্বালিয়ে,জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করে, হরতাল ডেকে এবং পথ অবরোধ করে খালেদা জিয়ার পরিকল্পনা রূপায়িত করতে সে সময় পথে পথে তাণ্ডব চালিয়েছিল বি এন পি এবং জামাত কর্মীরা। মৃতের সংখ্যা ছিল দুশোর বেশি, আহত হয়েছিলেন   কমপক্ষে দু'হাজার মানুষ, পোড়ানো হয়েছিল হাজার হাজার ট্রাক, বাস এবং অন্যান্য গাড়ি। কিন্তু নির্বাচন ভণ্ডুল করার উদ্দেশ্যে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।
 

তবে সেই নির্বাচন বয়কট করা ঠিক হয়েছিল কি না, এই নিয়ে দলের নেতা এবং কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সামনে চলে আসে। দলের বরিষ্ঠ নেতা সহ অনেকেই এই ব্যাপারে পার্টি হাইকমান্ডের বিচার-বিবেচনার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। তারিক রহমানের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে দলের মধ্যে এক নীরব অসন্তোষ বিরাজ করতে থাকে এবং তিনি যে লণ্ডণে স্বেচ্ছানির্বাসনের আরামের মধ্যে থেকে দলকে বিপথে পরিচালনা করছেন, সে বিষয়ে বিশ্বাস করতে থাকেন অনেকেই। এমন কি এখনও অনেকেই মনে করেন যে তারিক রহমানের নির্দেশে  ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত ছিল অযৌক্তিক এবং তার ফলেই আজ দলের এই ছত্রভঙ্গ অবস্থা।

 

ঢাকার একটি নিম্ন আদালত ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে অনাথ আশ্রমের তহবিল তছরুপের দায়ে বি এন পি -র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। পরে হাইকোর্ট এই মেয়াদ বাড়িয়ে দশ বছর করে। অন্য একটি তহবিল তছরুপের মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩৬ টি মামলা ঝুলছে তাঁর নামে।

 

দু'টি দূর্নীতি মামলা এবং ২০০৪ সালের ২১ শে অগাস্টের গ্রেনেড বিস্ফোরণ মামলায় কেএইচএএলইডিএ জিয়ার পুত্র তারিক রহমানের যথাক্রমে সাত বছর এবং দশ বছরের কারাবাসের আদেশ হয়েছে।  তবে তিনি ২০০৮ সালে থেকেই পলাতক।
 

এই বছরের শুরুর দিকে দল তাড়াহুড়ো করে দলীয় সংবিধানের সংশোধন করে  দূর্নীতিতে দোষী প্রমাণিত ব্যক্তির কোনও পদে থাকার উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা উঠিয়ে নেয়। এই সংশোধন যাতে গ্রহণ করা না হয়, সেই মর্মে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
 

দলীয় সংবিধানের যে অনুচ্ছেদটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটি খালেদা জিয়া  এবং তারিক রহমানের পক্ষে বিপজ্জনক ছিল, কারণ সেখানে লেখা ছিল যে কেউ,  দূর্নীতিতে দোষী প্রমাণিত হলে দলের সদস্য থাকা এবং নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার অধিকার হারাবে। এই অনুচ্ছেদটি খালেদা জিয়া এবং তারিক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের পক্ষে বিপজ্জনক ছিল। হাই কোর্টের নির্দেশের ফলে এখন খালেদা জিয়া অথবা তাঁর পুত্র তারিক রহমান কেউই আর দলীয় পদে থাকতে পারবেন না, অংশ নিতে পারবেন না নির্বাচনে।
 

খালেদা জিয়ার অনপস্থিতিতে দলকে বাইরে থেকে ঐক্যবদ্ধ মনে হলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন যে উর্ধমুখী অন্তর্কলহ,  নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং যোগাযোগের বিচ্ছিন্নতার কারণে দল সাংগঠনিক দিক দিয়ে দূর্বল হয়ে পড়ছে।
 

দেখা যাচ্ছে যে দলের সেন্ট্রাল কমিটির নেতাদের  মধ্যে দু'টি শিবির আছে, যা দলীয় কর্মসূচীকে ব্যহত করছে। খন্দকার মোশারফ হোসেন এবং মওদুদ আহমেদের মত সেন্ট্রাল কমিটির সিনিয়র নেতারা নরম ধরনের কর্মসূচী নিয়ে ধীরে চল নীতির পক্ষপাতী। অন্যদিকে মির্জা আব্বাস এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মত     অপেক্ষাকৃত কমবয়সী নেতারা

 

তীব্রতর অ্যাকশন প্ল্যান নিতে চাইছেন। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বি এন পি -র মধ্যে অন্তর্দলীয় সংঘাত তত বেড়ে চলেছে। নির্বাচন দলের নমিনেশন পেতে পারেন এমন নিজেদের এলাকায় প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে অন্য শিবিরের লোকেদের হেয় করতে চাইছেন।

 

দেশের মানুষ এখন যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন, তা হল বি এন পি -র শেষ পরিণতি কী এবং খালেদা জিয়া-তারিক রহমানের নেতৃত্ব না থাকলে দল টিকে থাকতে পারবে কি না। হাই কোর্টের আদেশের ফলে খালেদা জিয়া অথবা তারিক রহমান- কেউই দলের নেতৃত্বের রাশ হাতে রাখতে পারবেন না।
 

মা এবং ছেলে দু'জনে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বি এন পি তে এখন এমন কোনও নেতা নেই যেইনি দলকে নির্বাচনে পার করিয়ে দিতে পারেন। ২০১৫ সালের হিংসাত্মক আন্দোলনে অংশ নেওয়া বহু বি এন পি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ঝুলছে।
 

এ কথা মনে করার সঙ্গত কারণ আছে যে নেতৃত্বের সংকটের ফলে বি এন পি -র নির্বাচনী সম্ভাবনাও অতি সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। দলের সঙ্গে জামাতও এখন চরম সংকটে। তাদের অনেক প্রথম সারির নেতাই মৃত কিংবা আদালতে দোষী প্রমাণিত হয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত। দলের রেজিস্ট্রেশনও বাতিল হয়ে গেছে ইলেকশন কমিশনের নির্দেশে।