Column

BNP’s political bankruptcy: Should not be hostage to Begam and her son’s political hara-kiri

BNP’s political bankruptcy: Should not be hostage to Begam and her son’s political hara-kiri

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 01 Aug 2018, 05:30 am
আওয়ামী লীগ-সরকারের অধীনে আয়োজিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বাগাড়ম্বর সত্ত্বেও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি যে খুলনা এবং গাজীপুরের সাম্প্রতিক পুরনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল, তা থেকে এই ইংগিত পাওয়া যায় যে আগামী সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে এই দল তার আগের অবস্থানের পরিবর্তন করেছে।

২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে দূরে সরে থেকে যে ঐতিহাসিক ভুল বি এন পি করেছিল, দলের নেতৃত্ব হয়তো তার থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্বাস যে, ঐ সময়ে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন বি এন পি-র দিকে ছিল, যা দলকে ক্ষমতায় এনে দিত। কিন্তু নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে দল সংসদীয় প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবার সাংবিধানিক অধিকার হারায় এবং এর ফলে দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পূর্বনির্দিষ্ট নিয়তি এখন সকলেরই জানা। বিরোধী ভূমিকায় থাকলেও  একটি দল এবং তার নেতা-নেত্রীদের এমন কিছু সাংবিধানিক ক্ষমতা থাকে যা ক্ষমতাসীন দলকে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগে চটজলদি এবং খেয়ালখুশিমত সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়। যে সুযোগ বি এন পি তখন হারিয়েছে, এখন তা  আবার নতুন করে হারাতে চাইবেনা।

 

যখন দূর্নীতির অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হয়ে  বি এন পি-র সর্বাধিনায়িকা জেলের ভিতরে দিন কাটাচ্ছেন এবং তাঁর পুত্র তারেক জিয়াও দূর্নীতি মামলায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছেন এবং সর্বোপরি যখন তাঁর নাগরিকত্ব নিয়েও বিরাট প্রশ্ন ঝুলছে, তখন দলের সবরকমের দৈনন্দিন কার্যকলাপ পরিচালনা করছেন মাহমুদ আহমেদ, মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগির এবং রুহুল কবির রিজভির মত বর্ষীয়ান নেতারা। কিন্তু আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলকে নির্বিঘ্নে পার করিয়ে দেওয়ার যোগ্যতা বা ক্ষমতা এইসব নেতাদের নেই, কারণ এরা সকলেই সরকারি গোয়েন্দা এবং অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলির নজরে রয়েছেন । অতীতে এই নেতারা ২০১৪ সালের নির্বাচন-পরবর্তী রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ সহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় জেল খেটেছেন। অতএব দল এখন যুদ্ধাপরাধী এবং সন্ত্রাসবাদে মদতদানকারী জামাত এ ইসলামির মত সংগঠনের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। প্রশ্ন হচ্ছে, যখন সারা পৃথিবী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছে, তখন কেন বি এন পি-র মাপের একটি জাতীয় দল, যারা একাধিকবার দেশের শাসনক্ষমতায় থেকেছে এবং যাদের নেত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হয়েছেন, জামাতের সংগে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারছেনা? এটা বুঝতে গেলে পশ্চিমী দেশগুলির সংগে সম্পর্কিত  আজকের  ভৌগোলিক রাজনীতি এবং সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশের সন্ত্রাসবাদী দলগুলির মোকাবিলার ব্যাপারে তাদের মনোভাবের পরিবর্তনের ধারাটিকে অনুসরণ করতে হবে। সেই সংগে দেখতে হবে জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বি এন পি-র অবস্থানকেও।

          

যে ইসলামি সন্ত্রাসবাদ অর্থ, বস্তু এবং মানবসম্পদ-সব দিক দিয়েই আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তার মূল রঙ্গভূমি কম্যুনিস্ট-পরবর্তী আফগানিস্তান। গত শতাব্দির আশি এবং নয়ের দশকে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলি আফগানিস্তানে কম্যুনিস্ট সরকারকে উৎখাত করতে একযোগে ইসলামকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল, যার ফলে এর পরবর্তী সময়ে সারা পৃথিবী জুড়ে ইসলামী সন্ত্রাসের উত্থান হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনপুষ্ট নাজিবুল্লা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা জন্য যে আফগান মুজাহিদিনদের আমেরিকা সাহায্য করছিল এবং প্ররোচনা দিচ্ছিল, তাদের দলে  বেশ কিছু বাংলাদেশি মুসলমান  যোগ দেয়। আফগানিস্তান থেকে কম্যুনিস্ট বাহিনী সরে যাবার পরে এই ইসলামিরা উগ্রবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং জামাতের সংগে মিলিত হয়ে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করার মত উল্লেখযোগ্য শক্তিতে পরিণত হয়। ওদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে শাসনকার্য চালানোর মত কোনও  উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি না থাকায় যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, তার সুযোগ নিয়ে ইসলামি মুজাহিদিনদের অবশিষ্টাংশ পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট তালিবান বাহিনীর সংগে যোগ দিয়ে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তালিবানের এই কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে জামাত বাংলাদেশে তার ভিত্তি প্রসারিত করে এবং তার বিপুল অর্থশক্তির সাহায্যে সমাজে অন্ধ ইসলামিকরণের কাজ শুরু করে দেয়। এই অর্থসাহায্য তারা পেয়ে থাকে পশ্চিমী এবং মধ্য-প্রাচ্যের দেশগুলি থেকে। অর্থের সংগে সংগে  নানা রকমের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও তারা পেয়েছে, বিশেষত ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬ সালে বি এন পি-র শাসনকালে। এরশাদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকালে, যে সময় ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেই সময় জামাত গ্রামাঞ্চলে তাদের জাল বিস্তার করে ইসলামিক ছাত্র শিবির নামক পদাতিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে তোলে। কর্মীভিত্তিক এই বাহিনীর সঙ্গে তুলনীয় একমাত্র চিন অথবা অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের কম্যুনিস্ট পার্টি।

 

তালিবান, আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট,  জইশ এ মুহাম্মদ এবং লশকর তৈবা ওয়াহাবিজমের কট্টর সমর্থক এবং এই একই উগ্রবাদী অসহিষ্ণু আদর্শই মুসলিম ব্রাদারহুড এবং ওয়াহাবি-মওদুদি জামাত এ ইসলামির মত রাজনৈতিক ইসলামি দলগুলির গড়ে ওঠার পিছনের চালিকাশক্তি। বি এন পি-জামাত শাসনকালে (২০০১-০৬) শাসকগোষ্ঠীর লোকেরা শ্লোগান তুলেছিল, "আমরা হব তালিবান, বাংলা হবে আফগান।" এই একই সময়কালে দেশে অনেকগুলি বোমা বিস্ফোরণ এবং শেখ হাসিনা সহ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এই সব ক'টি সন্ত্রাসবাদী কাজের সাহায্যকারী এবং প্ররোচনাদাতা ছিল বি এন পি-নেতৃত্বাধীন সরকারের শরিক জামাত এ ইসলামি। জামাত-বি এন পি-র এই অশুভ চক্র  ২০১৪ সালের তথাকথিত একপেশে নির্বাচনের পরে প্রতিবাদের নামে  খুন, অগ্নিসংযোগ, জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করে এক সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি করেছিল। এইসব ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বি এন পি-জামাত শাসনকালের ব্যাপক অরাজকতার কথা। ঐ সময় ইসলামের নামে যথেচ্ছ বোমা বিস্ফোরণ এবং সংখ্যালঘু মানুষ সহ বহু নিরীহ মানুষের হত্যার ঘটনা ঘটেছিল।

 

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামাতের বরিষ্ঠ নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ২০১৩-১৪ সাল অবধি বি এন পি-জামাতের জোটকে সর্বতোভাবে সমর্থন করে গিয়েছিল।  কামরুজ্জুমান, মতিউর রহমান নিজামি, কাদের মোল্লার মত  যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আই সি টি- তে চলা মামলার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আমেরিকা, ইউরোপ, সৌদি আরব সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করেছিল। সেই প্রচেষ্টা এতটাই ছিল যে, ২০১৪ সালের আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কেরি বাংলাদেশ প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা করার অনুরোধ করে চিঠি লেখেন এবং 'কসাই' কাদের মোল্লাকে বাঁচানোর জন্য টেলফোন করেন প্রধানুন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। অবশ্য পশ্চিমী দেশগুলির এই দৃষ্টিভঙ্গি তখন থেকে পাল্টাতে শুরু করে যখন থেকে সৌদি যুবরাজ সলমান উগ্রবাদী ওয়াহাবিজমকে ত্যাগ করে এবং উদার সুন্নি ইসলামকে উৎসাহিত করে দেশের রাষ্ট্রীয় নীতির পরিবর্তন ঘটাতে থাকেন। সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র আমেরিকাও সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের রাষ্ট্রীয় নীতির পরিবর্তন ঘটাতে থাকে, কারণ এই পাশবিক লড়াই আমেরিকার স্বার্থের হানি ঘটাচ্ছিল।
       

সারা বিশ্ব এখন সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের যোগান বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। এ অবস্থায় জামাত তার সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম কমিয়ে আনতে বাধ্য। বিদেশ থেকে আসা অর্থের স্রোত শুকিয়ে আসার পরে দেশের অভ্যন্তরের ব্যবসায়িক সংস্থার দেওয়া তহবিলের উপর নির্ভর করে চলা জামাত এবং তার মিত্র দলগুলির নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবাদী চক্রের উপর আওয়ামী লীগ সরকার নজরদিরী আরও কঠোর করায় জামাত এখন প্রায় দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছে। এখনকার প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, যারা এরশাদ সরকারের পতনের পর  ১৯৯১ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল, তারা রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য এখনও পর্যন্ত জামাতের উপর নির্ভরশীল।  দলের নেতারা সম্ভবত পরিবর্তিত বিশ্বের  বাস্তবতা সম্পর্কে এখনও অজ্ঞ। এই বাস্তবতা সারা পৃথিবীতেই ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলে। সর্বোপরি, জামাত এ ইসলামির সংগে এই গলাগলি সখ্যতা একুশ শতকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার যোগ্য জাতীয় দল হিসেবে বি এন পি-র ভাবমূর্তিকে নষ্ট করেছে।            

 

বি এন পি -র শীর্ষ নেতারা, যারা সারা জীবন ধরে দলের জন্য পরিশ্রম করেছেন, ঘাম ও অশ্রু ঝরিয়েছেন, তাঁদেরও জানা উচিৎ যে, জামাতের সংগে আঁতাতের ব্যাপারে        সংগঠনের ভাগ্য বেগম খালেদা জিয়া অথবা তাঁর স্বেচ্ছানির্বাসিত পুত্র তারেক জিয়ার খেয়ালখুশির উপর নির্ভর করতে পারেনা। যত তাড়াতাড়ি এ কথা তাঁরা উপলব্ধি করতে পারবেন, ততই তাঁদের রাজনৈতিক স্থায়িত্ব বাড়বে। না হলে অবমাননার সংগে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে দলকে।