Column

BNP too should apologize

BNP too should apologize

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 25 Jun 2019, 07:27 am
জামাত-এ-ইসলামির একজন শীর্ষ নেতা, আবদুর রাজ্জাক, যিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেলের পদে ছিলেন, "স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা পালন করার জন্য দলকে ক্ষমা চাওয়াতে ব্যর্থ হয়ে" সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন।

 দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবি সেই থেকে বেড়েই চলেছে। রাজ্জাকের ইস্তফার পর দলের আরও কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করেছেন। দল যে আদতে একটি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি,  রাজ্জাকের পদত্যাগ সে বিষয়ে  তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে বলে ইস্তফাপত্রে জানিয়েছেন তাঁরা। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে নির্বাচন কমিশনের কাছে জামাতের বাতিল হয়ে যাওয়া রেজিস্ট্রেশন পুনরুদ্ধার করার আবেদনের উদ্দেশ্যে রাজ্জাকের এই পদত্যাগ একটি অজুহাত মাত্র। তা না হলে স্বাধীনতালাভের ৪৮ বছর পরে মার্জনা চাওয়ার আর কী  কারণ থাকত পারে!

 

বি এন পি-নেতৃত্বাধীন ২০ দলের জোটের সদস্যরা মনে করে জোটের অন্যতম বৃহৎ দল জামাতের উচিত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তার  বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। সম্প্রতি বি এন পি-র শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, "স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য জামাতের লজ্জিত হওয়া এবং  ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত।"

 

জামাতের কয়েকজন নেতার তথাকথিত পদত্যাগ এবং একাত্তরে দলের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা আসলে দেশের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে চাপের মুখে একটা চাল। জামাত যদি ১৯৭১ সালে দলের ভূমিকার জন্য ক্ষমাও চায়, তাহলেও স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন যে সব  গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং নারীদের উপর অত্যাচা্র চালানোর যে সমস্ত অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে, সেগুলির থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত হবেনা। জামাত বি এন পি-র সংগে রাজনৈতিক আঁতাত করেছে এবং এক সংগে রাজনীতি করেছে। সুতরাং বি এন পিঁ-ও অব্যহতি পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। জামাতকে আশ্রয় দেওয়া এবং সেই দলের সাথে সখ্য স্থাপন করে সরকার গড়ার জন্য বি এন পিরও ক্ষমা চাওয়া উচিত।

 

১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য সহ আততায়ীদের হাতে নিহত হন। এই শোকাবহ ঘটনার পর বি এন পি-র জনক এবং দেশের প্রথম সামরিক একনায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ান। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যায়  তাৎক্ষনিক লাভ হয়েছিল তাঁরই কারণ সংগে সংগেই তাঁকে সামরিক বাহিনীর প্রধান পদে উন্নীত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের জিয়াউর রহমান বিভিন্ন পুরস্কারের ভূষিত করেন এবং তাদের দেশের রাষ্ট্রদূত করে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেন। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল, তাদের আইনী  ব্যবস্থা থেকে রেহাই দিতে তিনিই ইনডেমনিটি অর্ডিনান্স পাশ করিয়েছিলেন।

 

জিয়াউর রহমান জামাতের যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন দিয়ে তাদের রাজনীতি করতে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া এই সব যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী এবং পার্লামেন্ট সদস্য বানিয়েছিলেন। এই খালেদা জিয়াই এই সব স্বাধীনতার শত্রু এবং যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়তে দিয়েছিলেন। এটি সত্যিই এক চরম লজ্জার বিষয় যা পৃথিবীর কোনও সভ্য দেশে কখনও ঘটেনি।

 

বঙ্গবন্ধুর হত্যার ২১ বছর পরে, ১৯৯৬ সালে, ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি অর্ডিনান্স বাতিল করে। ইনডেমনিটি অ্যাকট বাতিলের বিষয়ে যে দিন রায় ঘোষণা হবে, সে দিন বি এন পি  সাধারণ ধর্মঘট ডাকে যাতে করে বিচারক আদালতে পৌঁছতে না পারেন। বি এন পি আবারও ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে এবং তারপর আদালতের রায় কার্যকর করা হয়নি।

 

অতীতে তাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করার জন্য হিন্দুদের মত ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বি এন পি-র ব্যাপারে সন্দিগ্ধ। মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক মানুষে ভর্তি বি এন পি - নেতৃত্বাধীন জোট ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে  খালেদা জিয়া এবং জামাত-প্রধান মতিউর রহমান নিজামির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার যে পরিমাণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছিল, তা যে কোনও   সর্বভৌম এবং স্বাধীন রাষ্ট্রে অকল্পনীয়। ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ বিরোধী দলগুলির  ধর্মীয়, জাতিগত সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ, নেতা, কর্মী এবং দরদী মানুষ তথা বুদ্ধিজীবী এবং পেশাদারদের নির্যাতন, হত্যা করার ব্যাপারে দৃষ্টান্ত স্থাপনে এই জোট সরকার সফল হয়েছে।

 

তৎকালীন বিরোধী আওয়ামী লীগের দু'জন বরিষ্ঠ নেতা-  তাঁদের একজন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী - আততায়ীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন এবং ২০০৪ সালে দলের গোটা নেতৃত্বকে শেষ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে  আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড আক্রমণে ২৩ জন মারা গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের জনসভায় এই আক্রমণে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বি এন পি প্রধান খালেদা জিয়া এবং তাঁর পুত্র তারিক রহমান জড়িত ছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন গ্রেনেড আক্রমণ চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এবং আওয়ামী লীগকে নেতাশুন্য করতে। তাঁরা এমন কি এই বীভৎস আক্রমণের সমস্ত তথ্যপ্রমাণ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এবং 'জয় মিয়া" নাটকের অবতারণা করেছিলেন।

 

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়ে বি এন পি এবং জামাত কর্মীরা যে সমস্ত মানুষ পথ অবরোধের ডাক অগ্রাহ্য করেছিলেন, তাঁদের এবং পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের আক্রমন করে হত্যা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামাতের শীর্ষ নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়।

 

জামাতের সনদ দেশের সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছে, এই মর্মে সুপ্রিম কোর্ট এবং নির্বাচন কমিশন রায় দেওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে  অংশগ্রহণ করা থেকে বাতিল করা হয় জামাতকে। জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখের সেই নির্বাচনের সময় বি এন পি এবং জামাতের কর্মীরা নির্বাচন আধিকারিক, স্কুল এবং অন্যান্য নির্বাচনী কেন্দ্র আক্রমণ করে। আক্রমণের জন্য বেছে নেওয়া হয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কেও।

 

এক জন বি এন পি নেতার আশ্রয় প্রার্থনার ব্যাপারে কানাডার একটি আদালত তার বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনায় এই মন্তব্য করেছে, বি এন পি যে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, তা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। এতে আরও বলা হয়েছে, হরতাল ডেকে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং হিংসার ঘটনা ঘটিয়ে বি এন পি বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড চালিয়েছে। যে জামাত তার কাজের মধ্য দিয়ে নিজেই নিজের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি ধ্বংস করেছে, তার সংগে জোট বাঁধা বি এন পি-র পক্ষে সব চেয়ে বড় ভুল হয়েছে। জামাতের সন্ত্রাসবাদী কৌশলের সংগে নিজেদের জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বি এন পি-র জনসমর্থন, যা দলকে আজকের অবস্থায় টেনে নামিয়েছে।