Column

শাহবাগে বসন্তের বজ্র

শাহবাগে বসন্তের বজ্র

| | 27 May 2013, 10:41 am
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের জন্য জামাত-এ-ইসলামির সহ সাধারন সম্পাদক আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ হওয়ার পর থেকেই তাঁর চরম শাস্তির দাবি করে হাজার হাজার তরুন তরুনী ভিড় জমাচ্ছেন ঢাকার শাহবাগ মোড়ে।\'মীরপুরের কসাই\' নামে পরিচিত মোল্লার নামে জঘণ্যতম অপরাধের তালিকা দীর্ঘ-- দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সুপরিচিত কবি মেহেরুন্নেসার মাথা কেটে খুন, একটি নাবালিকা সহ অনেক মহিলাকে ধর্ষণ, ৩৫০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা, ইত্যাদি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ\' হেন একজন ব্যক্তির জন্য শুধুমাত্র যাবজ্জীবন শাস্তি্র আদেশ মানুষকে তাই হতবাক করে দিয়েছিল। তাঁর কৃতকর্মের সঙ্গে কোনওভাবেই আদালতের এই রায় সামঞ্জস্যপূর্ন নয়। মোল্লাও তা বোঝেন। তাই রায় ঘোষণা হওয়ার পরেই আদালতের মধ্যে হাসিমুখে আঙ্গুলের মুদ্রায় তিনি \' ভিকট্রি সাইন\', অথবা বিজয় চিহ্ন এঁকে উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন। এর পর থেকে ক্ষোভে ফেটে পড়া ব্লগার এবং অনলাইন কর্মী সহ প্রতিবাদী তরুন-তরুনীরা মোল্লার মৃত্যুদন্ডের দাবিতে ক্রমে এক জনসমুদ্র গড়ে তোলেন শাহবাগে। এর আগে মোল্লার মতই আর এক যুদ্ধাপরাধী, বর্তমানে পালিয়ে বেড়ান আবুল কালাম আজাদের চরম শাস্তির আদেশ দিয়েছিল এই একই আদালত। সাধারন মানুষের চোখে মোল্লার যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় স্বাধীনতা- ্যোদ্ধাদের চরম আত্মত্যাগের প্রতি অবমাননা।

 বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে শাহবাগের গণ-বিক্ষোভ কমার তো কোনও লক্ষণ নেই-ই, বরং সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদন্ড এবং জামাত ও তার ছাত্র সংগঠণ ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার নতুন দাবি তুলে প্রতিদিন বেড়ে চলা স্লোগান-মুখর তরুনদের প্লাবনে তা এখন আরও বৃহৎ আকার নিয়েছে। 

 
"সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝোলানর দাবি যতক্ষন না মেনে নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষন আমরা এখান থেকে ফিরবনা," ঢাকা ইডেন কলেজের মুক্তা বারোই, যিনি শাহবাগের বিক্ষোভে একটি মহিলা দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, জানিয়েছেন। সব রাজাকারের ফাঁসি হলে তবেই আমরা ফিরব," বললেন আর এক জন ছাত্র, জাহাঙ্গীরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শফিকুর রহমান। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হওয়া আরও অনেকেরই একই বক্তব্য।স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দখলদারি পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে দেশের মানুষের উপর যারা অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছিল, সেই যুদ্ধাপরাধী এবং জামাত সম্পর্কে এঁদের সকলেরই একই মনোভাব। 
 
বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধিদল সংসদের স্পীকারের সঙ্গে দেখা করে একটি ছ\'দফা দাবিপত্র তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন। এই দাবিগুলির মধ্যে আছে আবদুল কাদের মোল্লা এবং সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর চরম দন্ড, ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হওয়া কোনও ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শনের রাষ্ট্রিক অধিকারের বিলোপসাধন এবং জে ই আই এবং অন্যান্য ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলিকে নিষিদ্ধ করা। স্বাধীনতা সংগ্রামী, সংস্কৃতি জগতের ব্যক্তিত্ব এবং ছাত্র সহ ক্রুদ্ধ জনতা মোল্লা, গুলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামি, দেলওয়ার হোসেন সাইদী, আলি আহসাম মোহাম্মাদ মুজাহিদ, আবুল কালাম আজাদ, মির কাশেম আলি এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরির মত কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের কুশপুতুল তৈরি করে পোড়ায়।
 
 স্বাধীনতা সংগ্রাম দমন করতে যারা একসময় খুন, ধর্ষণের মত মানবতা-বিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের মানুষ করে এসেছেন। মোল্লার ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের রায় তাঁদের হতাশ করেছে। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামা তরুন প্রজন্ম যে ভাবে তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাস্তাতেই অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার পণ করেছে, তা অভূতপূর্ব । একে \'বাংলার বসন্ত\' (অভ্যুত্থান) বলা যেতেই পারে, তবে একটু অন্যভাবে। যেখানে আরব দুনিয়ায় অভ্যুত্থান ঘটেছে স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে, সেখানে আরব দেশগুলির মতই সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের অভ্যুত্থান দেশপ্রেমের আবেগের বন্ধনে সারা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের মানুষের উপর যারা জঘণ্যতম অত্যাচার চালিয়েছিল, তাদের কঠিণ শাস্তির দাবি তুলেছে। 
 
উনিশশো একাত্তর সালে মুক্তি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে সহযোগিতা করা জামাত এবং তাদের সঙ্গীদের ভয়ংকর পাশবিকতার কাহিনী চার দশক পরে এখনও শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেয়। একাত্তরের ১৬ ই ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করা পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি ১৯৮৮ সালে একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছিলেন যে, ঐ সময়ে অন্তত ৩০ হাজার হিন্দু এবং আরও বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীকে \'পাশবিকভাবে হত্যা\' করা হয়েছিল। পাক বাহিনী এবং তাদের স্থানীয় সহযোগীদের হাতে কতজন নিহত হয়েছিলেন, তার সঠিক হিসেবে করে ওঠা  ্যায়নি। তবে অধিকাংশ হিসেব অনুযায়ী সংখ্যাটা ৩০ লক্ষ। এ ছাড়াও ৮০ লক্ষ থেকে এক কোটি হিন্দু এবং মুসলমান দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাক সৈন্য এবং তাদের সহযোগীরা ধর্ষণ করেছিল প্রায় তিন লক্ষ মহিলাকে। 
 
দখলদারি পাক সেনাদের সঙ্গে ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়ান  জামাতের গঠন করা আল বদর, আল শামস এবং রাজাকারদের খুনে বাহিনী সেই সময় এক রাতের মধ্যে ৭,০০০ মানুষকে হত্যা করেছিল বলে খবর করেছিলেন খ্যাতনামা সাংবাদিক সাইমন ড্রিং। এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যা  অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল এবং অন্তত ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে বাংলাদেশে তৎকালীন মার্কিণ কনস্যুলেট ৩১ শে মার্চ, ১৯৭১-এর একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, \'ধর্ষিতা এবং গুলিতে নিহত\' মেয়েদের নগ্ন শরীর রোকেয়া হলের সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সেই বিভীষিকাময় ঘটনার একজন সাক্ষি, আমেরিকার কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড পৃথিবীর বিভিন্ন মার্কিণ কনস্যুলেট এবং এমব্যাসী অফিসে ২৭ শে মার্চ, ১৯৭১-এ পাঠ