Column

বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফর ও কিছু প্রশ্ন

বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফর ও কিছু প্রশ্ন

| | 27 May 2013, 06:37 am
এই বছরে হতে চলা বাংলাদেশের সাধারন নির্বাচনের আগে গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফর এক রাজনৈতিক আলোচনা জাগিয়ে তুলেছে। এই আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে খালেদার দলের নতুন কোন রাজনৈতিক সমীকরণ এবং অবস্থানের সম্ভাবনার প্রশ্নে। খালেদা জিয়া ভারতে এসে কি বলেছেন, দেশে ফিরে গিয়েই বা কি বললেন এবং ভারতের ব্যাপারে তাঁর বি এন পি\'র যদি কোন অবস্থানগত পরিবর্তন হয়ে থাকে সেটাই বা দলীয় নেতারা সাধারন কর্মীদের কি ভাবে বোঝাচ্ছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দলই এখন এই সমস্ত কিছুর মর্মোদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

 ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এবং ভারতে যাঁরা বাংলাদেশের ঘটনা প্রবাহ লক্ষ্য করেন, তাঁদের কাছে প্রধান মন্ত্রী থাকার সময় বেগম জিয়ার ভারত সফর এবং তাঁর সাম্প্রতিক সফরের মধ্যে দুস্তর পার্থক্য আছে। প্রধান মন্ত্রী হিসেবে বেগম জিয়া সম্ভবত সব থেকে ভারত বিরোধী সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভারত সফরকারী হিসেবে সেই সময় তিনি খুব উৎসাহীও ছিলেননা। এই বার কিন্তু তিনি এসেছিলেন শান্তি-সৌহার্দ্যের বানী নিয়ে, যা স্বাভাবিক ভাবেই অনেকের কাছে কৌতুককর। 

 
ভারত তার নিজের স্বার্থেই বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সুশীল সমাজের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বজায় রাখা সবসময়ই প্রয়োজন মনে করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পরেও ভাষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (এখনকার বাংলাদেশ) সম্পর্ক পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশী ঘনিষ্ঠ থেকেছে পূর্ব ভারতের সঙ্গে । এর কারন পূর্ব দিকে হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক শিকড় ঘনিষ্ঠ ভাবে বেড়ে উঠেছিল। অনেক ঝড় ঝাপটা সত্ত্বেও এই যোগাযোগ অটুট থেকেছে।
 
রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের বিভাজন ঘটান স্বার্থের দিক থেকে ভারতের পক্ষে কখনোই কাম্য নয়, আর ভারত এই ব্যাপারে উৎসাহীও ছিলনা। কারন, এই ধরনের পরিস্থিতি ভারতের পক্ষে বিষময় হয়ে উঠতে পারে। আর সেই অভিজ্ঞতা ভারতের হয়েওছে, যখন বি এন পি -জামাত সরকার সে দেশে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রাজত্ব করেছে। সেই সময় একবার বাংলাদেশের তৎকালীন বিদেশ মন্ত্রী হুমকি দিয়েছিলেন এই বলে যে, ভারত যদি বাংলাদেশকে ঘিরে ফেলে, তাহলে বাংলাদেশও ভারতকে ঘিরে ফেলবে। সেই হুমকি অনুযায়ী তারা কাজও করেছিল, ভারতের জঙ্গি-অধ্যুষিত  উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে হিংসা, অশান্তি ছড়াতে চেষ্টা করে। তবে এত কিছু সত্ত্বেও ভারত তখনকার প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চেয়েছিল এবং প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।
 
ভারত ও বাংলাদেশ--দু\'দেশের মানুষই কিন্তু ভারত সফরের সময় বেগম খালেদা জিয়া যে সব ভাল ভাল কথা বলেছেন, তার আন্তরিকতার ব্যাপারে নিঃসন্দেহ নন। এটা স্বাভাবিক। প্রশ্ন জাগছে, কেন এই রাজনৈতিক ডিগবাজি ? বাংলাদেশের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ভাষ্যকার হারুন হাবিব দৈনিক \'কালের কন্ঠ\' পত্রিকায় লিখেছেন যে উগ্রবাদী, মৌলবাদী এবং গোঁড়া ইসলাম-পন্থীরাই বেগম জিয়ার বহুকালের মিত্র। সুতরাং, ভারত সফরকালে তাঁর বিবৃতি এবং অঙ্গীকার-বানী থেকে বিশেষ কিছু আশা করা যায়না। এই ধরনের বহু প্রশ্ন এখন বাংলাদেশে জেগে উঠছে। 
 
এটা লক্ষ্য করার বিষয়,দেশে ফিরে বেগম জিয়া  তাঁর ভারত সফরের ব্যাপারে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়ার সময় সতর্ক থেকেছেন। কি ভাবে দলের কাছে ভারত সম্পর্কে পরিবর্তিত অবস্থান ব্যাখ্যা করা হবে, সেই বিষয়ে বি এন পি নেতারা বেশ ধাঁধায় পড়েছেন। এক জন বর্ষীয়ান বি এন পি নেতা ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই বলে যে, ভারতের ব্যাপারে বি এন পির অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। বেগম জিয়া শুধু মাত্র ভারতের সাথে ঝুলে থাকা বিষয়গুলির উপরেই আলোকপাত করতে চেয়েছেন। বি এন পি স্ট্যান্ডিং কমিটি সদস্য তারিক ইসলাম আবার এই বলে যোগ করেছেন যে, ভারতের সাথে সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বের । 
 
কিছুদিন ধরেই বি এন পি জামাতের সাথে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করছে, বিশেষত, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে। জামাত এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-বিরোধী অন্যান্য গোষ্ঠিগুলির কাছে শেখ হাসিনা যে তাঁর জীবনের উপর আক্রমনের মামলা সরিয়ে রেখে যুদ্ধাপরাধ বিচারের ব্যাপারটিতে পূর্ন মনোযোগ দিয়েছেন, তা বিপদের সংকেত বয়ে এনেছে। এরকম মনে করা হচ্ছে যে, সরকার ১৪ ই ডিসেম্বর, যে দিন পাকিস্তানি সেনারা ভারতের কাছে আত্ম সমর্পন করেছিল, তার আগেই বিচারের রায় পাওয়ার চেষ্টা করবে। 
 
এই বিচারে যদি জামাতের নেতারা দোষী সাব্যস্ত হন এবং যদি তাঁদের বিরুদ্ধে অনেক প্রমান উঠে আসে, তবে তাঁদের দেশদ্রোহী হিসেবেই দেখা হবে। আর তাহলে তাঁরা দেশের রাজনীতি থেকে মুছে যাবেন এবং তাঁদের বাংলাদেশেকে ইসলামি রাষ্ট্রে পরিনত করার পরিকল্পনারও ইতি ঘটবে। জামাত-আই সি এসের ডাকে হিংসাত্মক বিক্ষোভ সমাবেশ দেশ জুড়ে যে ভাবে বাড়ছে, তা ধর্মীয় দক্ষিনপন্থীদের চরম লড়াইয়ের পথে যাওয়ারই ইঙ্গিত বয়ে আনছে। 
 
বাংলাদেশে এই মূহুর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন দু\'টি প্রভাব বাইরে থেকে কাজ করছে। বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা সম্প্রতি বলেছেন, স