Column

দেলওয়ার হোসেন সাঈদী: উন্মোচিত নির্মোক - সংবাদদাতা

দেলওয়ার হোসেন সাঈদী: উন্মোচিত নির্মোক - সংবাদদাতা

| | 27 May 2013, 06:43 am
জামাত-এ-ইসলামির প্রথম সারির নেতা এবং একজিকিউটিভ কমিটির সদস্য দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর যৌন কেলেঙ্কারির বেশ কিছু অডিও সম্প্রতি ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়েছে। ব্যাপারটি সাধারন মানুষ এবং বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ্মধ্যে বিরাট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ফেসবুক এবং টুইটারের মত সোশাল মিডিয়া সাইটগুলিতে আপলোড করা এই অডিও তাঁরা বার বার করে শুনছেন এবং দেলওয়ারকে শাপ শাপান্ত করছেন। এঁদের অধিকাংশই দেলওয়ারের চরম শাস্তি দাবী করছেন, কারন তাঁদের মতে এই জামাত নেতা আসলে ইসলামের চাদরের আড়ালে একজন ব্যাভিচারী।

 ‘বাংলালিক্‌স’ নামে যে ফেসবুক পেজে সাঈদীর ফোন সেক্সের ক্লিপিংগুলি আপলোড করা হয়েছে, সেখানে তাঁর ‘সেক্স অ্যাডভেঞ্চার.’ বিশেষত, অল্প বয়সী মেয়েদের সাথে কুৎসিততম ভাষায় করা ‘ফোন সেক্স’-এর উপর ভিত্তি করে কিছু লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, বাংলালিকসের হাতে থাকা সাঈদীর শ’য়ে শ’য়ে যৌন কেলেঙ্কারির অডিওর মধ্যে মাত্র আটটি নাকি এ যাবত পোস্ট করা হয়েছে, তবে বাকিগুলিও শীগগিরই আপলোড হবে।

 
ফেসবুক ছাড়াও ইউটিঊবেও ঐ একই ফোনালাপের ফাইল আপলোড করা হয়েছ, যার সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একটি প্রশ্ন ; “ দেলওয়ার হোসেনকে আমরা জানতাম একজন ধার্মিক মুসলমান হিসেবে, যে ইসলামি আইন আর ‘তাকওয়া’ নিষ্ঠার সাথে মেনে চলে। কিন্তু আমাদের ধারনা সম্পূর্ন ভুল ছিল। এখন দেখছি, সে এমন একজন, যে বহু ধর্ষন করেছে, যে অল্প বয়সী মেয়েদের সাথে ‘ফোন সেক্স’ করে এবং তাদের সাথে রাত কাটায়। কোথায় তার ‘তাকওয়া’ ? আমরা এই ভন্ডটাকে ঘৃণা করি, আর চাই তার ভয়ানক শাস্তি হোক।“
 
স্বাধীনতা-যুদ্ধের আগে দেলওয়ার ছিলেন কোনরকমে গ্রাসাচ্ছাদন চালানো  ছোট একটি মুদিখানার মালিক।পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম দমন করতে দখলদারি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ১৯৭১ সালে এ’দেশে আসার পর থেকে তাঁর কপাল ফিরতে শুরু করে। পাক সেনাদের সহযোগী হিসেবে তিনি কাজ করা শুরু করেন। সেনা ছাউনিতে অল্প বয়সী সুন্দরী মেয়ে সরবরাহ করা, স্বাধীনতা যোদ্ধাদের হত্যা করা এবং অন্যান্য পাশবিক কাজ, যেমন ধর্ষন, লুটপাট, অগ্নি সংযোগে দক্ষ একজন ‘বিশ্বস্ত’ এজেন্ট হিসেবে সাঈদীর নাম খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাকিস্তানি মহলে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
 
পাক দখলদারি বাহিনীর আত্ম সমর্পনের পরে সাঈদী দীর্ঘকাল গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। পরে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন একজন ধর্ম প্রচারক এবং নিষ্ঠাবান মুসলমানের মুখোশ পরে। যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি দেশে ও বিদেশে ‘ওয়াজ মেহ্‌ফিল’ আয়োজন করতেন এবং নিষ্ঠাবান মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি অনুশাসনগুলি শিক্ষা দেওয়া  এবং ব্যাখ্যা করার নামে তিনি তাঁদের অ-মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে বিপথে চালনা করতেন। আর এই ভাবে ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে বিপুল তহবিল গড়ে সাঈদী বিরাট সম্পত্তির মালিক হন। কয়েক বছর ধরে তিনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠণ আল কায়দা এবং তালিবানের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলেন।  
 
সাঈদী ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সংসদের সদস্য ছিলেন এবং এখনও জামাতের সব থেকে সুপরিচিত নেতা। উনিশশো একাত্তরে দখলদারি পাক সেনা বাহিনীর একজন সহযোগী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হত্যাকারী ও অমানুষিক অত্যাচার-কান্ডের নায়ক হিসেবে কুখ্যাত দেলওয়ারের ‘শিকার’দের মধ্যে আছেন জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ, প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার ফয়েজুর রহমান (কম্প্যুটার বিজ্ঞানী জাফর ইকবালের পিতা) এবং আরও অসংখ্য সুপরিচিত স্বাধীনতা সংগ্রামী। অল্প বয়সী মেয়েদের, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েদের ধর্ষণে এবং তাদের সম্পত্তি লুঠেও সেই সময় তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ওয়াজ মেহ্‌ফিলে অসাধারন কন্ঠ বৈচিত্র দেখানো দেলওয়ার উদার ইসলাম প্রচারকের বেশের আড়ালে আসলে এক জন খুনী এবং স্বভাব-ধর্ষক।
 
পাকিস্তানি দখলদারি বাহিনীর সাথে সক্রিয় সহযোগিতা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম গুঁড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালে যখন জামাতের তত্ত্বাবধানে আল বদ্‌র, আল শামস এবং রাজাকার—এই তিনটি শাখা নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়, তখন এক জন সক্রিয় এবং উৎসাহী সহযোগী হিসেবে সাঈদী ছিলেন পুরোভাগে। তিনি ‘পাঞ্চ তহ্‌বিল’ নামে একটি সংগঠনও গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের কাজ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খতম করতে পাক সেনাদের সাহায্য করা এবং পেরোইপুর সেনা ছাউনিতে বাঙ্গালি মহিলা সরবরাহ করা। বদলে, দখলদারি সেনারাও স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং হিন্দুদের বাড়ী থেকে সম্পত্তি লুঠতে তাঁকে সাহায্য করত। আর এই ভাবেই ন’ মাসের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষে তিনি বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়ে দাঁড়ান।
 
উনিশশো ছিয়ানব্বই ও দু’হাজার এক-এ পর পর দু’বার নির্বাচনে জেতার পর তিনি মধ্য প্রাচ্যের অনাবাসী বাঙ্গালিদের অর্থ সাহায্যে ‘সাঈদী ফাউন্ডেশন’ এবং আরও ১৪ টি সংগঠণ গড়ে তোলেন। দু’হাজার এক-এর নির্বাচনের আগে এক ‘ফতোয়া’ জারী করে তিনি ঘোষণা করেন যে, যারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে, তাঁরা মুসলমান হিসেবে বিবেচিত  হবেননা।এই ফতোয়ার পিছনে ধর্মীয় নেতাদের অনুমোদন না থাকলেও তাঁর উদ্দেশ্য সফ