Column

জামাতের তান্ডব-- আরও হিংসার আশঙ্কায় বাংলাদেশ

জামাতের তান্ডব-- আরও হিংসার আশঙ্কায় বাংলাদেশ

| | 27 May 2013, 11:02 am
গোটা বাংলাদেশ আজ সন্ত্রাস কবলিত। দেশের স্বাধীনতার প্রতি প্রকাশ্যে ঘৃণা প্রদর্শন করে জামাত-এ-ইসলামি, তাদের ছাত্র সংগঠণ ইসলামি ছাত্র শিবির এবং তাদের মত কিছু শক্তি দেশ জুড়ে তান্ডব চালিয়ে ্যাচ্ছে। আইন রক্ষক, সাংবাদিক এবং স্বাধীনতার সমর্থকদের আক্রমণ করা ছাড়াও এদের হাতে পুড়েছে জাতীয় পতাকা, অপবিত্র হয়েছে শহীদ মিনার, ভাষা শহীদ দিবস উদ্‌যাপনের ঠিক এক দিন পরেই। বিভিন্ন মসজিদে ঘাঁটি গেঁড়ে বিস্ফোরক, বন্দুক এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে এরা এ পর্যন্ত অন্তত চার জনকে হত্যা করেছে, জখম করেছে হাজার হাজার মানুষকে। দেশের মসজিদ আর মাদ্রাসাগুলি পরিণত হয়েছে অস্ত্রাগারে।

 এক পরিকল্পিত কুৎসা রটনায় জামাত ও তাদের বশংবদরা শাহবাগের আন্দোলনকারীদের নাস্তিক বলে প্রচার করে শুক্রবারের জুম্মা নামাজকে ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় আবেগ জাগিয়ে তুলতে। আর এই সব শক্তির হামলার লক্ষ্য \'জনজাগরন মঞ্চ\', যেখান থেকে যুদ্ধাপরাধীদের চরম দন্ডের দাবি জানানো হচ্ছে। প্রকাশ্যে বন্দুক নিয়ে আস্ফালন করে, জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে, শহীদ মিনার অপবিত্র করে এরা এই হুঁশিয়ারিই দিতে চাইছে যে, জামাতের নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হলে এবং দলকে নিষিদ্ধ করা হলে তা চুপচাপ মেনে নেওয়া হবেনা, বরং দেশময় ভয়ানক গন্ডগোল এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হবে। 

 

উনিশশো পঁচাত্তর সালে শেখ মুজিবর রহমানের হত্যার পর থেকে জামাত দু\' দশক ধরে ক্ষমতাসীন স্বার্থান্বেষীদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। এর পরে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তারা চার দলের জোট-সরকারের শরিক থেকেছে। এই দীর্ঘ সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশে গণহত্যা এবং ধর্ষণকান্ডের ব্যাপারে পাকিস্তান এবং তার সৈন্যবাহিনীর নাম পর্যন্ত করা যেতনা। যেহেতু সার্বভৌম বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলনা, এবং সেই ধরনের কোনও প্রচেষ্টা দেশের মানুষ সমর্থন করতেননা, সেই হেতু জামাতের কর্মসূচীর অভিমুখ ছিল বেসরকারীভাবে দেশটাকে পাকিস্তানের অঙ্গে পরিণত করা। পাকিস্তান ভেঙ্গে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম নেওয়া জামাতের মত দলগুলির কাছে এমনই একটি \'তিক্ত সত্য\'এবং \'অসম্মানজনক\' ঘটনা, যা এরা কোনওদিন মেনে নিতে পারেনি।  
 
এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করার পরেও বাংলাদেশ বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া
 জামাতের প্রাক্তন প্রধান গুলাম আজম লন্ডনে ১৯৭২ সালে \'পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি\' গঠণ করেছিলেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠন করতে এবং মুসলিম দুনিয়ায় নবজাতক দেশ যাতে স্বীকৃতি না পায়, তার জন্য তিনি নিরন্তর প্রচার চালিয়েছিলেন।  
 
বাংলাদেশ জন্ম নেওয়ার সময় থেকেই এই দলটি জানত যে, যুদ্ধাপরাধ বিচার অবশ্যম্ভাবী এবং তাদের কোনও না কোনও দিন এর মুখোমুখি হতে হবে। এরা এটাও খুব ভালভাবে জানে যে, বর্তমানে চলতে থাকা যুদ্ধাপরাধ বিচার দলকে শেষ করে দেবে এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বর গলায় দড়ির ফাঁস শক্ত করবে। তা যাতে না হয়, তার জন্যই জামাত এখন মরীয়া হয়ে \' ইসলামিক বাংলাদেশ\' স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে চলা একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল হয়ে থাকতে চাইছে। অনেক বছর ধরে এই দলটি অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে বিশাল তহবিল গড়ে তুলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বরকতের ২০০৫ সালে করা একটি হিসাব অনুযায়ী, জামাত তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিবহন, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রের ব্যবসা এবং এন জি ও থেকে বছরে ১২০০ কোটি টাকা নীট লাভ করে থাকে।  তাদের এই সমস্ত আর্থিক কাজ কর্মের পিছনে প্রধানত যাঁর মস্তিষ্ক কাজ করছে, তিনি কুখ্যাত আল বদর গোষ্ঠির প্রতিষ্ঠাতা মির কাশেম আলি, যিনি এখন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন। উল্লেখ্য, এই আল বদর ১৯৭১-এর গণ হত্যায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিল। সহজেই অনুমেয়, বিপুল আর্থিক শক্তিতে বলীয়ান জামাত তাদের এই তহবিল যুদ্ধাপরাধ বিচার বন্ধ করার জন্য সরকারের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষে যেতে কাজে লাগাবে। এ ছাড়াও, দেশ জুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য জামাত সমস্ত ধর্ম ভিত্তিক জঙ্গি  সংগঠনগুলিকে জড়ো করছে।দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে \'করো কিম্বা মর\' পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া জামাত এখন দেশে এক ভয়ানক হিংসার আগুন জ্বালাবার পরিকল্পনা নিয়েছে। 
 
 অধিকাংশ ক্ষেত্রে জামাত-নিয়ন্ত্রিত এই সব সংস্থাগুলির সঙ্গে পশ্চিম এশিয়া এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। ইসলামি ব্যাংক অফ বাংলাদেশ, যেটি দক্ষিন এশিয়ার সর্ব বৃহৎ তিনটি ব্যাংকের অন্যতম, প্রকৃতপক্ষে সৌদি আরব-প্রতিষ্ঠিত। উনিশশো পঁচাত্তর সালে ঢাকায় তৎকালীন সৌদি রাষ্ট্রদূত ফুয়াদ আবদুল্লা আল খাতিব এবং তাঁর স্ত্রীর উদ্যোগে এই ব্যাংকের শুরু।   এখানকার প্রায় ৬০ শতাংশ শেয়ারের মালিক সৌদি আরবের কোনও না  কোনও প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি। এ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত এবং কাতারের ব্যক্তি বিশেষ অথবা প্রতিষ্ঠানের হাতে এই ব্যাংকের শেয়ার আছে। জামাতের আর্থিক শক্তির মূল কেন্দ্র ইসলামি ব্যাংক ছাড়াও বাংলাদেশের আরও ১৪ টি ব্যাংক এই সংগঠণের হাতে জামাতের নিয়ন্ত্রণে থাকা।বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্