Column

Jamaat-e-Islami will have a new name in Bangladesh

Jamaat-e-Islami will have a new name in Bangladesh

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 02 Mar 2019, 02:55 am
ডেইলি সানের একটি খবর (ফেব্রুয়ারি ১৪ ) অনুযায়ী, নতুন একটি নামে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করার প্রস্তুতি পর্ব প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে জামাত-এ-ইসলামি।

নিজেদের ভাবমূর্তির উন্নতি ঘটাতে এবং 'যুদ্ধাপরাধীদের দল'- এই কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে এই দল তাদের রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। "জামাতের নামান্তরের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত," ঐ দৈনিককে একজন বিশিষ্ট জামাত নেতা বলেছেন। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন যে, দলের আদর্শ এবং সাংগঠনিক কাঠামো অপরিবর্তিত থাকবে।

 

একটি বড় খবর এই যে, দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যে কাজগুলি করা হয়েছিল, তার জন্য দল ক্ষমাপ্রার্থনা করতে অস্বীকার করায় জামাতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল  রাজ্জাক পদত্যাগ করেছেন। যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসির পর দল এখন অনেকটা নিচু হয়ে আছে এবং গোপনে সাংগঠনিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জামাতের ভোটে লড়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

সম্পর্ক ছেদ করার জন্য দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে আসা চাপে পড়ে দুই ঘনিষ্ঠ দল- বি এন পি এবং জামাত- এখন নিজেদের মধ্যে কৌশলগত দূরত্ব বজায় রাখছে। জামাতের সহযোগী সংগঠন পিস কমিটি, রাজাকার, আল বদর এবং আল  শামস  স্বাধীনতা সংগ্রামকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশে (তখন পূর্ব পাকিস্তান) এক পরিকল্পিত সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছিল। এই কাজের জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থেকে তাদের অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। একাত্তরের যুদ্ধে জামাত বাহিনী হাজারে হাজারে স্বাধীনতা সংগ্রামীকে হত্যা করেছিল, ধর্ষন করেছিল বহু হাজার নারীকে এবং বহু হিন্দুকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছিল।

উনিশশো একাত্তরে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করার পর এই জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকালে ইতিহাসের আস্তাকুঁড় থেকে সেই জামাতকে আবার তুলে আনেন বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক এবং বি এন পি -র প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জেনারেল জিয়াউর রহমান, ক্ষম তা দখল এবং নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করার জন্য। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রোখার জন্য জামাতকে অকৃপনভাবে রাজনৈতিক জায়গা করে দেন তিনি।

 

জেনারেল জিয়াউর রহমান জামাত সহ বহু পাক্রিস্তানপন্থী দলের নেতাদের, যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল, তাদের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদে বসান। জামাতের ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে শক্ত জায়গা করে দেওয়ার জন্য তিনি দেশের সংবিধানের মূল চারটি নীতির একটি-'ধর্মনিরপেক্ষতা'কে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। তৎকালীন জামাত-প্রধান, গুলাম আজম, যিনি স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই পাকিস্তানে গা ঢাকা দিয়েছিলেন, তাঁকেও ফিরিয়ে আনেন। তাঁর প্রয়াত স্বামীর রাজনৈতিক নীতিকে অনুসরণ করেই খালেদা জিয়াও দেশ শাসন করার সময় জামাতকে রাজনৈতিক অংশীদার হিশেবে গ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকার জন্য স্বাধীনতার পরেই জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ১৯৭৫ অবধি তাই ছিল। এর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর ক্ষমতায় আসা সরকারগুলি জামাতকে আবার উঠে দাঁড়াবার সুযোগ করে দেয়। কোলাবরেটর্স অ্যাক্ট অসিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং মুক্তি দেওয়া হয় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ২৩,০০০ ব্যক্তিকে। এ সবই করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। এমন কি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদেরও মুক্তি দেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের পরেও নবজাতক বাংলাদেশকে যাতে অন্যান্য দেশ স্বীকৃতি না দেয়, সেই উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর মস্তিষ্ক যিনি, সেই গুলাম আজমের নেতৃত্বে জামাত বিদেশে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে, ব্যাপক প্রচার চালায় জামাত। পাকিস্তানের মতই এই দেশটিও জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। তারা এখনও বলে থাকে যে ১৯৭১ সালে যা ঘটেছিল, তা স্বাধীনতা সংগ্রাম নয়, গৃহযুদ্ধ।

 

সামরিক শাসক এবং বি এন পি-র কাছ থেকে ক্রমাগত পৃষ্ঠপোষকতা এবং সমর্থন পেয়ে জামাত সাংগঠনিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পেরেছে। ব্যাংক থেকে শুরু করে ইনসিওরেন্স কোম্পানি এবং সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান- এ রকম বহু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তারা গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের ভিতরে এবং বাইরে অতি শক্তিশালী সংবাদমাধ্যমও আছে তাদের নিয়ন্ত্রণে।

 

অনেক বছর ধরে তারা অধ্যবসায়ের সঙ্গে বিপুল তহবিল গড়ে তুলেছে। অনেক বছর ধরে যে সম্পত্তি তারা অর্জন করেছে তার থেকে রীতিমত ভাল আয় হয় এই দলের। জামাত-নিয়ন্ত্রিত ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ, দেশের মধ্যে সর্ববৃহত্তম আর্থিক সংস্থা, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম তিনটি ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়না জামাত। স্বাধীনতার চার দশক পরেও মুক্তিযুদ্ধকে 'গৃহযুদ্ধ' আখ্যা দিয়ে দলটি এই বার্তাই দিয়েছে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কোণও বদল হয়নি। এদের অনুগামীদের কাছে পাকিস্তান, ইসলাম এবং জামাত সমার্থক। পাকিস্তানের মতই স্বাধীনতার জন্য বীরোচিত সংগ্রামকে পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য ভারতের চক্রান্ত বলে অবমাননা করেছে এরা।

 

জামাতের প্রাক্তন আমির গুলাম আজমের বিরুদ্ধে রায় দেবার সময় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছিল এমন কোনও প্রমাণ নেই যাতে মনে করা যেতে পারে যে ১৯৭১ -এর স্বাধীনতা সংগ্রামের যারা বিরোধিতা করেছিল, তিরিশ লক্ষ শহিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তারা এখন তার পরিবর্তন ঘটাবে।

 

যদি ঠিকমত এবং দ্রুত বিচার হয়, তাহলে জামাতের শীর্ষস্থানীয় সব নেতাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। এই পরিস্থিতির সুযোগে দলের অনেক তরুণ প্রজন্মের নেতা, বিশেষত যারা স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছে এবং যুদ্ধাপরাধে জড়িত নয়, নেতৃত্ব তাদের হাতে নেবার পরিকল্পনা করছে। এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জামাতের কিছু যুদ্ধাপরাধী বিচারের ফলে সরে যাওয়ায়।

 

আই এইচ এস ইঙ্ক-এর একটি সমীক্ষা, যার শিরোনাম " আই এইচ এস জেন'স গ্লোবাল টেররিজম অ্যান্ড ইনসারজেন্সি অ্যাটাক ইনডেক্স, " তাতে বলা হয়েছে জামাতের ছাত্র শাখা ইসলামি ছাত্র শিবির পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে বেশি বিপজ্জনকভাবে সক্রিয়, অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র দলগুলির মধ্যে তিন নম্বর স্থানে। মার্কিন দেশের এই রিসার্চ গ্রুপ ২০১৪ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি এই টেররিজম ইনডেক্স প্রকাশ করেছিল। এদের বিচারে তালিবান ইসলামি ছাত্র শিবিরের ঠিক উপরেই। দশটি সন্ত্রাসবাদী দলের মধ্যে  সবার উপরে রয়েছে থাইল্যান্ডের বারিসান রেভোলুসি ন্যাশিওণাল।

 

এখানে বলা যেতে পারে, আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির  'ন্যাশনাল কনসর্টিয়াম ফর স্টাডি অফ টেররিজম অ্যান্ড রেসপন্স টু টেররিজম'-এ বলা হয়েছে যে, হিংসাত্মক কাজকর্ম এবং হত্যালীলা চালানো ছাড়াও ইসলামি ছাত্র শিবির আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী চক্রের সংগে যুক্ত।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ইসলামি ছাত্র শিবির পরিচিত ছিল ইসলামি ছাত্র র  নামে। বর্বরোচিত এবং ভয়ানক উপায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী  এবং  বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে অথবা অকথ্য অত্যাচার করে তাদের পঙ্গু করে দিয়ে এবং বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করে এই দলটি কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। যে হেতু ইসলামি ছাত্র শিবির নামটি জনগণের মনে ঘৃণার উদ্রেক করত, সেই হেতু তাদের একটি অন্য নাম নিতেই হত। এই ভাবেই এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কলঙ্ক দূর করতে ইসলামি ছাত্র শিবির নামের উৎপত্তি। তবে ইসলামি ছাত্র সংঘ থেকে  ইসলামি ছাত্র শিবির নামান্তরে সংগঠনের আদর্শ এবং কর্মপদ্ধতিতে কোনও পরিবর্তন আসেনি।

একইভাবে নামে এবং নেতৃত্বে পরিবর্তন আনলেও জামাত চরিত্রগত দিক দিয়ে মৌলবাদী দল হয়েই থাকবে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ইসলামিকরনের কাজ সক্রিয়ভাবে  চালিয়ে যাবে। আগের মতই প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলি এদের সব থেকে বড় শত্রু হয়ে থাকবে । আগের মতি এরা পাকিস্তানের বশংবদ হয়ে থাকবে। সব থেকে বড় কথা, আই এস আই -এর সংগে এদের যোগাযোগ থেকে বোঝা যায় যে এই দলের প্রধান কর্মসূচী একই থাকবে- বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হরণ করা  এবং দেশকে পাকিস্তানের দাস রাষ্ট্রে পরিণত করা।

যে সব মানুষ স্বাধীনতার আদর্শকে সম্মান করেন এবং স্বাধীনতাসংগ্রামীদের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেন, যে সব নারী যৌন নির্যাতন ভোগ করেছেন এবং যারা ঘর বাড়ি ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন,এম তাঁরা সবাই জামাত এবং তার ছাত্রশাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের সম্পূর্ন উচ্ছেদ দেখতে চান। সেই উচ্ছেদ হোক এমন ভাবে, যাতে এদের কোনও চিহ্নই যেন আর না থাকে স্বাধীন বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে অশুভ শক্তির হাত থকে মুক্ত করতে  এদের নিয়ন্ত্রানাধীন সমস্ত প্রতিষ্ঠান, তহবিলের উৎস এবং সমর্থনভিত্তিকে চিহ্নিত করে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া দরকার ।