Column

ভারতের আস্থা হারালেন খালেদা জিয়া

ভারতের আস্থা হারালেন খালেদা জিয়া

| | 27 May 2013, 10:40 am
সফরকারী ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর পূর্বনির্ধারিত আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার বাতিল করে দিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এবং একই সাথে গত বছর তাঁর ভারত সফরে অনেক চেষ্টায় প্রতিবেশী দেশের যেটুকুও বা আস্থা তিনি অর্জন করেছিলেন, তাও হারালেন।

 একই সময়ে, ঢাকায় যে হোটেলে প্রণববাবু উঠেছিলেন, তার অণতিদূরেই একটি  মলোটভ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই রকম কিছু ঘটুক, তা বেগম জিয়া অথবা তাঁর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি  যতই না চেয়ে থাকুন, তবু কিন্তু এই ছোট ঘটনা শুধু বাংলাদেশ এবং ভারতেই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য অংশে যাঁরা এই দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক চান, তাঁদের মধ্যেও বিরাগ সৃষ্টি করেছে।

 
নিশ্চয়ই একই ্পর্যায়ে নয়, তবু কিন্তু এই দু\'টি ঘটনার সঙ্গে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করে এল টি টি ই তাদের নিজেদের এবং শ্রীলংকায় তামিলদের স্বার্থের যে ক্ষতি করেছিল, তার তুলনা করা চলে।
 
খালেদা জিয়া, যাঁর সঙ্গে ভারতীয় নেতাদের সম্পর্ক সাধারণত শীতল, তাঁর দিক থেকে ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা না করার একমাত্র অজুহাত হতে পারে এই যে, সে দিন তিনি তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে হরতালের ডাক দিয়েছিলেন। 
 
সঙ্কীর্ণ স্থানীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে এর একটা মানে তবু হয়, কিন্তু তার বেশী কিছু নয়। 
 
দেশ হিসেবে ভারত এবং সেখানকার মানুষের কাছে শেখ হাসিনা যে অগ্রাধিকার পান, এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য, এবং সর্বজনবিদিত। কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে  বেগম জিয়া ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে শেখ হাসিনার তুলনায় যে অসুবিধাজনক অবস্থায় আছেন, তা আরও জোরাল করে তুললেন মাত্র। 
 
সব কিছু ছেড়ে দিলেও এ\'কথা বলতেই হবে, ভারতের সর্ব্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ার বহু আগে থেকেই  প্রণববাবু ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে দৌত্যের কাজ করে এসেছেন, তা বাংলাদেশে যে দল যখনই ক্ষমতায় থাকুকনা কেন।
 
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর বিরাট অবদান আছে, এবং বাংলাদেশে তিনি অত্যন্ত সন্মানিত এক ব্যক্তি। 
 
তাই যথাযথভাবেই বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মনি বেগম জিয়া যা করেছেন, তাকে \'অশিষ্টাচার\' বলে বর্ননা করেছেন। 
 
নিজে যথেষ্ট শিক্ষিত না হওয়ায় এবং বুদ্ধিবৃত্তি চর্চায় তাঁর দক্ষতার অভাবের জন্যই কিছু প্রাক্তন সেনা কর্মী ও কূটনীতিক, পরিবারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনই যাঁদের প্রধান যোগ্যতা, তাঁরা বরাবর বেগম জিয়াকে কুপরামর্শ দিয়ে গেছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। 
 
রাজনীতির পরিহাসে গত বছর তাঁর ভারত সফরের সময় বেগম জিয়া প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ঐ সময়ে ভারতীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টায় তিনি এ\'কথাও বলেছিলেন যে, গাড়ির \'রিয়ার ভিউয়ার\' দিয়ে না দেখে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে দু\'দেশের মানুষের এগিয়ে আসা উচিৎ । পিছন দিকে তাকিয়ে মনে হয়, তাঁর সেই প্রচেষ্টায় আন্তরিকতার অভাব ছিল। 
 
কূটনীতির খেলায় বেগম জিয়া কিন্তু কখনই ভারতকে হারাতে পারেননি। ভারতের প্রাক্তন বিদেশ সচিব নিরুপমা রাও যখন ঢাকা সফরের সময় বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারননি, তখন তাঁর দলের পক্ষ থেকে  দেশের বিরোধী নেত্রীর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। 
 
এর পরে সেই ভুলের সংশোধন করেন সেই প্রণববাবু, ভারতের তখনকার বিদেশমন্ত্রী। কয়েক মাস বাদেই ঢাকা সফরের সময় তিনি বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। 
 
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৬ সালে তাঁর  শেষ ভারত সফরের সময় বেগম জিয়ার আচরণ ছিল শীতল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ব্যাপারে ভারতের ভূমিকার কথা তিনি একবারও উচ্চারণ করেননি। যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের ব্যাপারে দুই দেশের যৌথ ঐতিহ্যের উল্লেখ করেন, একমাত্র তখনই বেগম জিয়া ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা বলেন। 
 
এর পরে রাজস্থানের আজমের শরিফে তীর্থযাত্রা না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। আজমেরে যাওয়া ভারতে আসা বাংলাদেশীদের কাছে একটি সাধারন প্রথা। 
 
ঐ সফর চলাকালেই বেগম জিয়া সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন, আবার তাঁর সফরসঙ্গী এক মন্ত্রী যে কোনও দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রেই ভারতকে দোষারোপ করে বসেন। বলা বাহুল্য, ঐ সফর শেষ হয় তিক্ততার মধ্যে দিয়ে, যা দু\'দেশের কূটনৈতিক কথপোকথনের চাতুরী দিয়ে ঢাকা যায়নি। 
 
ভারতের ব্যাপারে খালেদা জিয়ার শীতলতা এসেছে তাঁর স্বামী, প্রয়াত প্রেসিডন্ট জিয়াউর রহমানের সূত্রে। ভারতীয় নেতৃত্ব এটা কখনও হজম করতে পারেননি যে, নিজে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়েও জেনারেল জিয়া  বাংলাদেশে&agrav