Column

Militancy attracting youths

Militancy attracting youths

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 21 Nov 2019, 04:41 am
ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সি টি টি সি ) ইউনিট রাজধানী শহরের রমনা থেকে গত ৪ঠা নভেম্বর জামায়তুল মুজাহিদিনের সদস্য চার ছাত্র জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। জেরার মুখে তারা স্বীকার করেছে যে, অনলাইনে ইসলামি উগ্রবাদ ছড়িয়ে দিতে সক্রিয় থাকা ছাড়াও ভারচুয়াল পৃথিবী থেকে তারা সদস্য সংগ্রহ করছিল।

ঢাকা ট্রিবিউনের একটি সাম্প্রতিক  রিপোর্টে প্রকাশ, বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ জেলাতেই জঙ্গি কার্যকলাপের ঝুঁকি প্রবল এবং এই প্রবণতা বিশেষভাবে রয়েছে গ্রামীণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির পড়ুয়াদের মধ্যে, যাদের ২৬ শতাংশের কাছেই জঙ্গি কাজকর্মে যোগ দেওয়ার ডাক এসেছে।

 

‘স্বপ্নের দেশ’, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান,যাদের ঘোষিত উদ্দেশ্য আরও ক্ষমতাসম্পন্ন এবং আলোকিত সমাজব্যবস্থা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে উন্নততর রাষ্ট্র গড়ে তোলা, তারা ছাত্রদের উপর জঙ্গিবাদের প্রভাব নিয়ে একটি প্রাথমিক গবেষণা করে। তাতে দেখা গেছে, জঙ্গি দলে যোগ দেওয়ার ডাক পাওয়া ছাত্রদের ৮৭ শতাংশই বিশ্বাস করে যে ইসলামি জঙ্গি কার্যকলাপ সমর্থনযোগ্য। এদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ ছাত্রী এবং ৮৬ শতাংশ ছাত্র জঙ্গি প্রচার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।

 

এই গবেষণায় বলা হচ্ছে, শহরের     শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ৪৯শতাংশ ছাত্র ছাত্রীই জঙ্গিদের কাছ থেকে সরাসরি অথবা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে ডাক পেয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ শতাংশ – ছাত্র ছাত্রী উভয়েই- ইসলামি দলগুলির প্রচারে বিশ্বাস করে। 

 

এই রিসার্চ পেপারটি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অডিটোরিয়ামে উপস্থিত করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, উগ্রবাদী সংগঠনগুলি তরুণদেরই টার্গেট করে এবং  তাদের কর্মসূচীর প্রচার করে এই দাবি করে যে, তারা ‘ইসলামের রক্ষাকর্তা, গণতন্ত্র একটি হাঙ্গর (শার্ক) এবং পশ্চিমী দুনিয়া ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যত।

 

গ্রামাঞ্চলের প্রায় অর্ধেক ছাত্র ছাত্রীর এইভাবে মগজধোলাই করে বিশ্বাস করানো হয়েছে যে পশ্চিমী দুনিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং উগ্রপন্থীরা ইসলামের রক্ষাকর্তা। গ্রামের ছাত্রসমাদের ৪৪ শতাংশ এবং শহরের ছাত্র ছাত্রীদের সাত শতাংশ জানিয়েছে যে তারা সরাসরিভাবে উগ্রপন্থীদের বার্তা পেয়েছে। যোগাযোগের অন্য উৎসগুলি হল, ইন্টারনেটে বন্ধুদের থেকে আমন্ত্রণ, নিজেরা সার্ফিং করা, বন্ধুদের দেওয়া ছাপানো পুস্তিকা এবং বয়সে বড়রা।

 

এ ব্যাপারে মাদ্রাসাগুলির যথেচ্ছ বৃদ্ধি একটি অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ। এই মাদ্রাসাগুলির অনেকগুলিতেই ইসলামি জঙ্গিবাদ এবং জিহাদি কার্যকলাপের প্রসার ঘটানো হয় বলে দেখা গেছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই ধরণের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামি জঙ্গি শিবির স্থাপন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ থাকা এইসব শিবিরগুলিতে দেশে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিপ্লব সংঘটিত করার জন্য তরুণদের প্রেরণামূলক বক্তৃতা দেওয়া হয় এবং তদের অস্ত্রশিক্ষাও দেওয়া হয়। ওসামা বিন লাদেন এবং তালিবান নেতা মুল্লা ওমরের স্তুতি করে এবং তাদের নাশকতামূলক কাজের অনুসরণ করার জন্য ছাত্রদের আহ্বান জানিয়ে অডিও এবং ভিডিও ক্যাসেট বিপুল ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এইসব ক্যাম্পাসগুলিতে।

 

এইধরনের অনেক মাদ্রাসাগুলিতে স্বাধীনতা দিবস অথবা বিজয় দিবসের মত জাতীয় দিবসগুলি পালন করা হয়না। বরং স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা অথবা স্বাধীনতাসংগ্রামীদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়াকে গৌরবান্বিত করে তাকে জিহাদের অঙ্গ হিসেবে দেখানো হয় এইসব জায়গায়। বেশ কিছু এইধরনের প্রতিষ্ঠানে কোনও অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়না, জাতীয় সংগীত গাইতে অনুমতিও দেওয়া হয়না ছাত্র ছাত্রীদের।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহু শিক্ষক এবং ছাত্র নারীদের বিরুদ্ধে ধর্মগুরুদের ‘ফতোয়া’ জারি করাকে সমর্থন করেন। এনজিওদের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড, প্রেসের স্বাধীনতা, পরিবারপরিকল্পনা কর্মসূচী, নারী ক্ষমতায়ন, নারীপ্রগতি, পশ্চিমী শিক্ষা এবং বাঙালিদের ভাষা-সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও বিরূপ এবং নেতিবাচক মতামত এদের। এরা মনে করে এইসব ব্যাপারগুলি দেশে ইসলামের প্রসার এবং  ইসলামি উদ্দীপনার বিরুদ্ধে। পশ্চিমী শিক্ষা, আধুনিকতা এবং নারীপ্রগতিকে বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য দায়ী মনে করে এরা।

 

এইসব প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পাশ করে বার হয়ে ছাত্র ছাত্রীরা ইসলামি জঙ্গি দলগুলির সদস্য হয় এবং জিহাদি কাজকর্মে অংশগ্রহণ করে। দেখা গেছে, এরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় সব রকমের ইসলামি সন্ত্রাসবাদী এবং নাশকতামূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে। ২০০৫ সালে  দেশজুড়ে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণ এবং আত্মঘাতী বোমারুদের আবির্ভাবের জন্যেও দায়ী এরা।

 

কুয়েতের রিভাইভাল অফ ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি, ৯/১১-র জোড়া আক্রমণের পর পাকিস্তানে যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এবং সৌদি আরবের আল হামেইন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আল কায়দা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সংগে যোগ থাকার জন্য যাদের সারা পৃথিবীতে নিষিদ্ধ করা হয়, এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে তহবিল যোগাত। এই ধরনের কাজকর্মের জন্য অন্য যে সব ইসলামিক এনজিও-র নাম নজরে এসেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ইউ আ ই-র আল ফুজেইরা, সৌদি-কেন্দ্রিক রাবেতা আল আলম আল ইসলামি এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশন। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র ছাত্রীদের বিনা খরচে খাবার, থাকার জায়গা এবং শিক্ষা দেওয়া হয় এবং তাদের গরিব অভিভাভকদের ইসলামি নবজাগরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিশেষভাবে বোঝান হয় ছেলেমেয়েদের এইসব বিদ্যালয়ে পাঠাতে। 

 

তরুণদের মগজধোলাই করা এবং জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করার কী অসীম ক্ষমতা আছে এই সংগঠনগুলির, তা বোঝা যায় এই দু’টি ঘটনা থেকেঃ (১)  ২০১৬ সালের ২৪শে ডিসেম্বর ঢাকার আশকোণার একটি জঙ্গি ঘাটিতে পুলিশের রেইড চলার সময় চার বছরের শিশুকন্যাকে সংগে নিয়ে এক মহিলা জঙ্গি নিজেকে বোমায় উড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশে সে-ই প্রথম মহিলা আত্মঘাতী বোমারু। (২) আত্মসমর্পনের আবেদনে কান না দিয়ে এক ১৪ বছর বয়সী কিশোর পুলিশের সংগে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত বন্দুকের লড়াই লড়ে গিয়েছিল। এই চরম বেপরোয়া মনোভাবই বুঝিয়ে দেয় ঐ মহিলা এবং ঐ কিশোরের মগজধোলাই কী পর্যায়ে হয়েছিল।

 

সাম্প্রতিক অতীতে নিরাপত্তাবাহিনী বিস্ফোরকের বিপুল ভাণ্ডার খুঁজে পেয়েছে, বহু সন্ত্রাসবাদী সেল ভেঙ্গে দিয়েছে এবং বেশ অনেকে জঙ্গিকে ধরেছে। জঙ্গিদের বেশকিছু ঘাঁটিতে হানা দিয়ে তারা মোট ২৮ জন জঙ্গিকে মেরেছে। এদের মধ্যে আছে ২০১৬ সালের ১লা জুলাই গুলশনের হোলে আর্টিজান বেকারি আক্রমণের মূল চক্রী তামিম আহমেদ চৌধুরী। কিন্তু নিরাপত্তাবাহীনীর হানা সত্ত্বেও ইসলামি জঙ্গিদের কাজকর্ম অব্যহত রয়েছে। এমন কি কিছু মেয়েও এখন এই ধরনের জঙ্গি কাজকর্মে অংশ নিচ্ছে। সুতরাং জঙ্গিবাদের বিপদ দেশে রীতিমত রয়ে গেছে এবং   ইসলামি জঙ্গিরা ভয়ে লুকিয়ে পড়ার বদলে আরও বেশি করে আক্রমণ শানাচ্ছে।