Column

Mujib-killers were extended state patronage

Mujib-killers were extended state patronage

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 06 May 2020, 07:12 am
পশ্চিমবঙ্গে বহুদিন থেকে গা ঢাকা দিয়ে থাকা স্বঘোষিত মুজিব- হত্যাকারী রিসালদার মোসলেম উদ্দিনকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে ২০শে এপ্রিল তারিখে।

 এর আগে, ১২ই এপ্রিল তারিখে, বাংলাদেশ সরকার প্রাক্তন সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের প্রাণদণ্ডের আদেশ   কার্যকর করে। আর এক স্বঘোষিত মুজিব-হত্যাকারী আবদুল মাজেদ বাংলাদেশে তার করা অপরাধের জন্য সাজা এড়াতে ১৯৯৬ সালে থেকেই ভারত এবং অন্যান্য জায়গায় লুকিয়ে ছিল। যে দিন মাজেদকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়, সেদিন করোনা ভাইরাসের মারাত্মক বিপদ থাকা সত্ত্বেও শয়ে শয়ে মানুষ ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের সামনে হাজির ছিলেন।  
 

বাংলাদেশের প্রথম সামরিক ডিক্টেটর তথা বি এন পি-র প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের সময় থেকে খালেদা জিয়ার শাসনকাল পর্যন্ত ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট নিহত হওয়া রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীরা নানা ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা এবং পৃষ্ঠপোষকতা ভোগ করে গেছে। এমন কি ইনডেমনিটি অর্ডিনান্স জারি করে এই সব খুনিদের সাজার হাত থেকে রেহাই দিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।   
 

স্বঘোষিত মুজিব- হত্যাকারী লেঃ কর্নেল রশিদ-প্রতিষ্ঠিত ফ্রিডম পার্টিকে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অনুমতিই শুধু দেওয়া হয়নি, রশিদের জয় সুনিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ধরণের অসাধু উপায়ও নেওয়া হয়েছিল। এর আগে, জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের আমলে, মুজিব হত্যাকারীদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়, এমন কি তাদের অনেকে জাতীয় রাজনীতিতেও যোগ দেয়। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় দফার শাসনকালে, মুজিব হত্যাকারীদের নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থেকে তুলে নেওয়া হয়।

 

 এর আগে, মুজিব হত্যাকারীদের সন্ধান দেওয়া এবং তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংগঠন ইন্টারপোল বিদেশে লুকিয়ে থাকা  ১৫ জন মুজিব হত্যাকারীর নামে রেড কর্নার নোটিশ জারি করেছিল।

 

পরবর্তী সময়ে খুনিদের পাঁচজন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা এবং ল্যান্সার মহিউদ্দিন আহমেদ গ্রেপ্তার হয়।

 

কিন্তু এদের বিচারের যে প্রক্রিয়া শেখ হাসিনা সরকার ১৯৯৭ সালে শুরু করেছিল, তাকে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসা খালেদা জিয়া সরকার আর এগিয়ে নিয়ে যায়নি। সরকারের রাশ হাতে তুলে নেবার পর খালেদা জিয়া ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশের আর পুনর্নবীকরণ করার জন্য আবেদন করেননি এবং এইভাবে তিনি ব্যাপারটিকে তামাদি হয়ে যেতে দেন।  

 

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদেশ মন্ত্রকের অধীনে একটি সেল তৈরি করা হয়েছিল বিদেশে লুকিয়ে থাকে মুজিব হত্যাকারীদের ব্যাপারে খবরাখবর সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য শেখ হাসিনা এই প্রক্রিয়াকে আবার চালু করেন।

 

১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান  শেখ মুজিবের হত্যায় জড়িত সামরিক অফিসারদের বিদেশে বিভিন্ন বাংলাদেশ দূতাবাসে কূটনীতিকের পদে নিযুক্ত করেন। ক্রমে ১৯৮০ সালে এদের সবাইকেই ফরেন সার্ভিস ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

 

জেনারেল এরশাদ তাঁর পূর্বসূরীর নীতিই অনুসরণ করেছিলেন। এরশাদের স্বৈরাচারী সরকার উৎখাত হবার পর যখন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসেন, তখনও তিনি একই নীতি চালিয়ে যান। ফলে  এরশাদের সামরিক শাসনের বর্ধিত রূপ পেয়েছিল খালেদা জিয়ার সরকার।

 

খুনি মেজরেরা (মুজিব হত্যাকারীদের এই নামেই অভিহিত করা হত) ফরেন সার্ভিস ক্যাডার অফিসার হিসেবে সমস্ত রকমের সরকারি সুযোগ সুবিধা, ফরেন পোস্টিং এবং পদন্নোতি লাভ করতে থাকলেন। এদের একজন, মেজর (অবঃ) খয়রুজ্জামান, যাকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বি এন পি-নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই তাঁকে আবার পুনর্বহাল করা হয়। ক্রমে তিনি বিদেশ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব পদে উন্নীত হন।   

 

আর একজন মুজিব হত্যাকারী, আজিজ পাশা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার জিম্বাবোয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত এই ব্যক্তিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল। তাঁকেও পরবর্তীকালে বি এন পি সরকার আগাম অবসরের সুযোগ করে দেয় এবং অবসরকালীন সব রকমের সুযোগ সুবিধা দেয়। পাশা অবশ্য জিম্বাবোয়েতেই ২০০২ সালে মারা যান।  

জেনারেল জিয়াউর রহমানের সময় থেকে তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়ার শাসনকাল অবধি, লেঃ কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লেঃ কর্নেল এ এম রশিদ চৌধুরী, লেঃ কর্নেল এস এইচ এম বি নুর চৌধুরী, লেঃ কর্নেল আজিজ পাশা এবং ক্যাপ্টেন আবদুল আজেদ সহ মুজিব হত্যাকারীরা বিদেশে কূটনীতিকের দায়িত্বে ছিলেন। লেঃ কর্নেল শরিফুল হক ডালিম হং কং, চিন এবং কেনিয়াতে কূটনীতিকের পদে ছিলেন, লেঃ কর্নেল আজিজ পাশা ছিলেন আলজেরিয়া এবং জিম্বাবোয়েতে, মেজর বজলুল হুদা পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডে, লেঃ কর্নেল এ এম রশিদ চৌধুরী সৌদি আরব এবং জাপানে, এবং লেঃ কর্নেল এস এইচ এম বি নুর চৌধুরী পাকিস্তানে। 

 
 জেনারেল এরশাদের শাসনকালে দু'জন মুজিব হত্যাকারী, মেজর বজলুল হুদা এবং মেজর শাহরিয়ার রশিদ বাংলাদেশে ফিরে এসে 'প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। একই সময় দিয়ে লেঃ কর্নেল রশিদ এবং লেঃ কর্নেল ফারুকও ঢাকায় ফিরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে ব্যবসা  শুরু করেন। তাঁরা 'ফ্রিডম পার্টি' গঠন করেন। তখন দেশে চলতে থাকা সামরিক শাসনকে যাতে একটি  গণতান্ত্রিক চেহারা দেওয়া যায়, সেই উদ্দেশ্যে লেঃ কর্নেল ফারুককে এমন কি ১৯৮৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য উৎসাহিত করা হয়।  
 
১৯৮৮ সালের বিতর্কিত সংসদীয় নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টিকে অংশ নিতে দেওয়া হয় এবং খুনি মেজর বজলুল হুদাকে একজন এম পি হিসেবে সংসদে বসার সুযোগ দেওয়া হয়। এ সব কিছুরই পুনরাবৃত্তি হয় ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া সরকার আর একজন স্বঘোষিত মুজিব হত্যাকারী এবং ফ্রিডম পার্টি নেতা লেঃ কর্নেল রশিদকে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদে ঢোকার সুযোগ করে দেয়।
 
অবশেষে মুজিব হত্যাকারীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেন শেখ হাসিনাই। ২০১০ সালের ২৭শে জানুয়ারি ইনডেমনিট অর্ডিনান্স বাতিল করে দেওয়ার মত আইনি প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করার পর পাঁচজন মুজিব হত্যাকারী- এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, ফারুক রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমেদকে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী ফাঁসি দেওয়া হয়। অপর একজন মুজিব হত্যাকারী-আজিজ পাশা এর আগেই জিম্বাবোয়েতে মারা গিয়েছিলেন। এখন ১২ই এপ্রিল, ২০২০ সালে ক্যপটেন আবদুল মাজেদের ফাঁসির পর ধরা পড়েছেন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, যার প্রানদন্ডাদেশ আগেই হয়ে গেছে। এখনও পালিয়ে আছেন শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী এবং । এস এইচ এম বি নুর চৌধুরী
 
এদের সবাইকে ফিরিয়ে এনে বিচার করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। তা যদি হয়, একমাত্র তাহলেই ২০২০ সালকে 'মুজিব বর্ষ' হিসেবে উদযাপন করতে যাওয়া দেশ কলঙ্কমুক্ত হতে পারবে।