Column

রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ও হেফাজতের ভূমিকা

রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ও হেফাজতের ভূমিকা

Sujoy Dhar | | 15 May 2013, 02:40 am
এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখে সাভারের ভেঙ্গে পড়া রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। এখনও অনেকে রয়েছেন নিখোঁজ, তবুও তাঁদের স্বজনরা এখনও আশা ছাড়েননি
এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখে সাভারের ভেঙ্গে পড়া রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। এখনও অনেকে রয়েছেন নিখোঁজ, তবুও তাঁদের স্বজনরা এখনও আশা ছাড়েননি। এই মর্মান্তিক অবস্থার মধ্যেও বি এন পি'র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের জোট তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই হরতাল এবং হিংসা এখন হাত ধরাধরি করে চলেছে। একের পর এক হরতাল আর হিংসাত্মক ঘটনা দেশ এবং দেশের মানুষকে টেনে নিয়ে গেছে এক সর্বনাশা অবস্থার মধ্যে। আর সেই সময়, যখন এতগুলি মানুষের মৃত্যুতে গোটা জাতি শোকে মুহ্যমান, তখন তাদের ১৩ দফা দাবিতে হেফাজত-এ-ইসলাম দেশকে নিয়ে গেল সম্পূর্ন এক অচলাবস্থার মধ্যে।

হেফাজত-এ-ইসলামের প্রধান আল্লামা শফি হুজুর ভারতের উত্তর প্রদেশে জামায়েত-এ-উলেমা-এ-হিন্দ-পরিচালিত দেওবন্দি সংগঠনের দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। েই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১৯ সালে। প্রতিষ্ঠাতা মওলানা মাদানি ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। দেওবন্দি সংগঠন চেয়েছিল স্বাধীনতা লাভের পর ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাক এবং দেশের সংবিধানও তৈরি হোক সেইভাবে। দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান সৃষ্টিরও বিরোধিতা করেছিল দেওবন্দি।এই সংগঠনের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি কোথাও কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধাচরন করেনি। 

 
বাংলাদেশের মুসলমান মানুষের সংখ্যা ১৪ কোটি, যেখানে ২৪ কোটি মুসলমানের দেশ ভারত। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের মুসলমানদের অগ্রগতি অনেক বেশি এবং তাঁরা মর্যাদার সঙ্গে বাস করেন। 
 
দেওবন্দ থেকে শিক্ষান্তে আল্লামা শফি সেখানকার মাদ্রাসার ধাঁচেই গড়ে তোলা দারুল উলুম হাথাজরি মাদ্রাসা চালিয়েছেন।তাঁর গুরু আহমেদ মাদানি প্রায়ই হাথাজরি মাদ্রাসা পরিদর্শনে আসতেন। ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য মাদানি ছিলেন ভারতে একজন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। দু'হাজার ছয় সালে তাঁর মৃত্যুর পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং শাসক ইউ পি এ'র চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধী তাঁদের শোক বার্তায় মাদানির প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। 
 
মাননীয় হুজুর, আপনার হেফাজত-এ-ইসলামের ১৩-দফা দাবির এবার ব্যাখ্যা দিন। প্রমান দিন দেওবন্দ মাদ্রাসায় আপনার প্রগতিশীল শিক্ষার। 
 
পৃথিবীর অনেক দেশে, বিশেষ করে ইজরায়েল এবং মায়ানমারে খুন হচ্ছেন মুসলমানরা। সেই সব ব্যাপারে হেফাজত নীরব কেন?  ইসলাম তো পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ধর্ম, শুধু তো বাংলাদেশের গরিষ্ঠ জনগনের ধর্ম নয়! তাহলে কীভাবে হেফাজত শুধু বাংলাদেশের ভিতরের আবদ্ধ থাকে ! তাদের তো আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করা উচিৎ ! আর এটা বড় আশ্চর্যের বিষয় যে, ইসলামকে রক্ষা করতে হেফাজতের জামাতের সাহায্যের প্রয়োজন হচ্ছে। তা হলে কি হেফাজতের এই আন্দোলন জামাতের সহায়তায় রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের চক্রান্তের একটি অঙ্গ ?
 একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতাদের বিচারের দাবি না করে জামাত দাবি করছে ব্লগার এবং শাহবাগের মুক্তমনা তরুণদের মৃত্যু। এই তরুণদের একমাত্র অপরাধ, তাঁরা দেশের স্বাধীনতার শত্রুদের বিচার চান।
 
সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার বলি যে সব মানুষ, তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি হেফাজত।বরং তার মধ্যেই দেশজুড়ে তৈরি করল চরম অস্থিরতা। একাত্তরে কী ভূমিকা ছিল হেফাজত নেতাদের, তদন্ত হোক এবার।