Column

শাহবাগ আন্দোলনঃবাংলাদেশের যন্ত্রনা ছুঁল লন্ডনকেও

শাহবাগ আন্দোলনঃবাংলাদেশের যন্ত্রনা ছুঁল লন্ডনকেও

| | 27 May 2013, 06:59 am
গণ আন্দোলোনের জোয়ারে ভেসে যাওয়া ঢাকার শাহবাগ আজ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের তহ্‌রির স্কোয়ার।লক্ষ লক্ষ প্রতিবাদী তরুন তরুণীর দখলে চলে যাওয়া শাহবাগে ধ্বনিত হচ্ছে উগ্র ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে ক্রোধ। উগ্র ইসলামিদের প্রতি সহানুভূতিশীল যে সব রাজনৈতিক নেতা, তাঁরা এই বিক্ষোভ শান্ত করতে পারননি। \'আপোসকামী\' এবং \'তোষণকারী\' বলে আন্দোলনকারীরা তাঁদের গাল দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।

 আসলে তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা এই আন্দোলন, যাকে কার্যত একটি অভ্যুত্থান বলা যায়, তা এই সময়ের সব থেকে অবহেলিত কতকগুলি মূল্যবোধ ও নীতির পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছে। সেগুলি হল, ধর্ম নিরপেক্ষতা,  অত্যাচার থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা এবং ঈশ্বরশাসিত সমাজের নাম করে আস্ফালনকারী গুন্ডাদের এই একবিংশ শতাব্দীর ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক বিতর্ক থেকে দূরে রাখা।

 
 পশ্চিমের সংবাদ মাধ্যমে এই বিপুল প্রতিবাদের খবর যে প্রতিফলিত হচ্ছেনা তার কারন এই যে, যে ধরনের অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন, তা পশ্চিমী সমাজ থেকে বহুকাল অপসারিত এবং সেখানে প্রায় বিস্মৃত।
 
ঢাকার তরুনদের বিদ্রোহ জামাত-এ-ইসলামির সদস্য-নেতাদের পূর্বকৃত যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে। এই সব অপরাধীদের বর্ননা করতে বোধ হয় \'ক্লারিকাল ফাসিস্ত\' কথাটি প্রযোজ্য।উনিশশো একাত্তর সালে তৎকালীন পাকিস্তানি প্রভুদের বিরুদ্ধে সেই দেশের পূর্বাঞ্চলের অত্যাচারিত মানুষ বিদ্রোহ ঘোষণা করে ডাক দিয়েছিল \'বাংলাদেশ\' গড়ার। আর তার প্রতিক্রিয়ায় বাঙ্গালিদের উপর যে ভাবে গণ হত্যা ও গণ ধর্ষণ চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা বাহিনী, তাতে শিউরে উঠেছিল বিংশ শতাব্দীর পৃথিবীর মানুষ, যাদের ধারনা ছিল এই ধরনের ভয়াবহ বর্বরতা অতীতের বিষয়। সংস্কৃতি জগতের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক জর্জ হ্যারিসন এবং রবিশংকর হিংসার শিকার বাংলাদেশের মানুষের সাহায্যার্থে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে একটি কনসার্টের আয়োজন করলেন। এ\'দিকে যখন  বাংলাদেশে চলছে  হিন্দু ও খৃস্টানদের নিরন্তর হত্যা এবং সেই দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ, সেই সময় পাকিস্তানকে দূর্বল করে দেওয়ার সুযোগ উপস্থিত বুঝে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একটি অসামান্য কাজ করলেন। অত্যাচারিত একটি জাতিকে স্বাধীনতা পেতে সাহায্য করার জন্য তিনি ভারতীয় সেনা পাঠালেন।
 
সেই সময় বাংলাদেশে দখলদারি পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে প্রতি পদে সহযোগিতা করেছে এই ইসলামবাদীরা, যাদের অনুপ্রেরনার উৎস ছিলেন আবদুল আলা মওদাদি, যিনি সমস্ত মুসলমান প্রধান দেশগুলিকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ ও অভিন্ন ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে বিশ্বযুদ্ধ বাঁধাতে চাইতেন। কিন্তু পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলে তো সেই বিশ্বজোড়া বিপ্লব ব্যহত হবে। সুতরাং, সেই সম্ভাবনা রুখতে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে তৈরি হল খুনে বাহিনী, যাদের কাজ ছিল বাঙ্গালি বুদ্ধিজীবী, ইঞ্জিনীয়ার, প্রশাসক এবং শিক্ষকদের বেছে বেছে হত্যা করা। এর কারন, সমাজের এই শ্রেনীর মানুষরাই একটি স্বাধীন দেশের চালিকা শক্তি। তাঁরাই যদি না থাকেন, তবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও গড়ে উঠতে পারবেনা। বহু বছর বাদে এই রকম কিছু জামাত- দলভুক্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়ের পরিনতিতেই বাংলাদেশ আবার হয়ে উঠেছে অগ্নিগর্ভ। 
 
বিশ্ব ইতিহাসে যে কোনও গণ বিদ্রোহের ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশের ব্যাপারে উদারপন্থীরা দোলাচলচিত্ততার শিকার। এক দিকে তরুন বিক্ষোভকারীদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সপ্রশংস উচ্চারণ তাঁদের মুখে এবং ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোভানের মতই তাঁরাও সমাজকে বিষিয়ে দেওয়া ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। অন্যদিকে, কোনও দয়া মায়া না দেখিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের জন্য বিক্ষোভকারীদের যে নাছোড় দাবি, তা মেনে নেওয়া তাঁদের পক্ষে কঠিন। এর কারন, তাঁদের দৃষ্টিতে মৃত্যুদন্ড একটি চরম উদারতা-বিরোধী শাস্তি। 
 
কিন্তু বাংলাদেশের গণ হত্যা তো সুদূর অতীতের ঘটনা নয় যে এত তাড়াতাড়ি তা ভুলে যাওয়া যাবে!
 
আর এই নিয়ে শাহবাগের বিক্ষোভকারীদের সাথে জামাতের সংঘর্ষ এখন লন্ডন অবধি পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে চলতে থাকা অভ্যুত্থানের স্থানীয় সমর্থকরা গত ৯ই ফেব্রুয়ারি লন্ডনের ইস্ট এন্ড অঞ্চলের আলতাব আলি পার্কে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন এবং জামাতিরা সেই সমাবেশে পাথর ছুঁড়ে আক্রমণ চালায়। ্যে অঞ্চলে ঐ সমাবেশ করা হয়েছিল, সেখানেই সোশালিস্ট এবং ইহুদিরা ১৯৩৬ সালে অসওয়াল্ড মোসলের ব্রিটিশ ইউনিয়ন অফ ফাসিস্তের  মোকাবিলা করেছিল। এই ঘটনাটিকে নাজি-বিরোধী ঐক্যের এক চরম নিদর্শন বলে মনে করতেন ব্রিটিশ বামপন্থীরা। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে চরম প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে চলতে থাকা লড়াইকে এখনকার ব্রিটিশ বামেরা কী চোখে দেখেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। 
 
ব্রিটিশ ইসলামে&ag