Column

যুদ্ধাপরাধ বিচারের দ্বিতীয় রায় ও গণ প্রতিক্রিয়া

যুদ্ধাপরাধ বিচারের দ্বিতীয় রায় ও গণ প্রতিক্রিয়া

| | 27 May 2013, 06:56 am
উনিশশো একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলার সময়কার জঘন্য যুদ্ধাপরাধের স্মৃতি চার দশক পরেও তাড়া করে ফেরে বাংলাদেশের মানুষকে। তাই সেই সব অপরাধীদের মধ্যে এখনও যারা জীবিত এবং বহাল তবিয়তে আছে, দেশের মানুষ মনে প্রানে চান, তাদের শাস্তি হোক। ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের সামনে জামাত-এ-ইসলামির সহ সাধারন সম্পাদক আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি ওই দলেরই এক সময়কার নেতা,পলাতক আবুল কালাম আজাদের নামে থাকা অভিযোগের থেকেও গুরুতর। এর আগে, ইন্টার ন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল-২ আজাদের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেই একই ট্রাইব্যুনালে এ\\\'বার মোল্লার জন্য যাবজ্জীবন সাজার (৩০ বছর) হুকুম হয়েছে। দেশের মানুষ এটা মেনে নিতে পারছেননা। তাঁদের প্রশ্ন,যেখানে অপেক্ষাকৃত লঘু অপরাধে অপরাধী আজাদের চরম দন্ডের রায় হয়েছে, সেখানে কী ভাবে মোল্লার মত আরও বড় যুদ্ধাপরাধী্কে ছাড় দিয়ে তার জন্য বরাদ্দ হয় যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি ? কেন এই দ্বিমুখী নীতি ? এটাই এখন রহস্য। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেকটর ডঃ ইফতেকারুজ্জামান বলেছেন, একজন মুক্ত চিন্তার নাগরিক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শ ও মূল্যবোধের পতাকাবাহী হিসেবে এই রায় তিনি মানতে পারছেননা।

 প্রতিবাদে ৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগে জড়ো হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, আর এই জমায়েত ক্রমে এখন পরিণত হয়েছে জন সমুদ্রে।একটি মাত্র স্লোগান নিয়ে সেই জনতার দাবি, মোল্লা সহ সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদন্ড। আন্দোলনে অংশ নেওয়া মানুষ একাত্তরের অপরাধী, খুনিদের কুশপুতুল তৈরি করে পুড়িয়েছেন তাঁদের প্রতিবাদ জানাতে,রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়া ছাত্ররা মিছিল বের করেছেন, আর ট্রাইব্যুনালের রায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো সর্ব স্তরের মানুষের গলায় ধ্বনিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতা-বিরোধীদের বিরুদ্ধে চরম ঘৃণা। কারন, এক সময়ে এই অভিযুক্তরাই মুক্তিযুদ্ধ দমন করতে আসা দখলদারি পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে দেশের মানুষের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছিল।শাহবাগের স্বতঃস্ফূর্ত জনসভা প্রমান করেছে যে, আইনের আদালতে লঘু শাস্তি পেয়ে বেঁচে গেলেও জনতার আদালতে কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ড হয়ে গেছে। 

 
যে ভাবে দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয় আন্দোলনে নেমেছেন, তা অভূতপূর্ব এবং প্রশংসনীয়।ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রকাশ্যে হতাশা প্রকাশ করে সুপরিচিত স্বাধীনতা সংগ্রামী ফেরদৌসি প্রিয়দর্শিনী জানিয়েছেন যে, মোল্লার মৃত্যুদন্ড না হওয়া পর্যন্ত তাঁর আন্দোলন অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলবে।ফেরদৌসি, যিনি নিজে একাত্তরের নির্মমতার শিকার, বলেছেন যে আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা শুরু করেছিলেন, তাতে এখন তরুন প্রজন্ম যোগ দিয়ে সহযোদ্ধার ভূমিকা পালন করছে। এই ফেরদৌসিই শাহবাগ স্কোয়ারের নাম রেখেছেন, \'প্রজন্ম চত্বর\'।
 
ট্রাইব্যুনালে জজ সাহেব আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তাঁর রায় ঘোষণার পরেই এই যুদ্ধাপরাধী ভিকট্রি সাইন দেখায়। এই ভাবে সে সম্ভবত বলতে চেয়েছিল যে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে সব কিছুই সম্ভব।সেই দেশ, যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের তীব্র বিরোধিতা এবং ঘৃণ্যতম অপরাধ করেও সরকার বদল হলে শাস্তি এড়ান যায়। শুধু তাই নয়, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পরে এই সব অপরাধী পুনর্বাসনও পেয়েছিল। 
 
তাই মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায়ের বিরুদ্ধে জামাতের ডাকা হরতাল দেশদ্রোহিতারই সামিল। যখন    ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আরও রায় ঘোষিত হতে যাচ্ছে, সেই সময় সরকারের উচিৎ এই ধরণের দেশদ্রোহমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া।সরকার শক্ত হাতে হরতালের মোকাবিলা না করলে কিন্তু জামাত আরও এ\'রকম কাজ করতে এবং হিংসা চালিয়ে যেতে উৎসাহ পাবে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অনুধাবনযোগ্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চাইছে, তারাও সমান অপরাধে অপরাধী।অপরাধীদের আড়াল করতে চাওয়া এই সব মানুষদের কেউ কেউ যদি প্রশাসনের ভিতরে থাকে, তা হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।