Column

Tabligh Jamaat

Tabligh Jamaat

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 25 May 2020, 06:15 am
তাবলীগ জামাত একটি ইসলামি প্রচার আন্দোলন, যা পয়গম্বর মহম্মদের জীবনকালে অনুসৃত ইসলামি আচার, পোষাক-সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিগত আচরণ অনুসরণ করার জন্য মুসলিমদের উৎসাহিত করে। পৃথিবী জুড়ে এই সংগঠনের পাঁচ কোটিরও বেশি অনুগামী আছেন, যাদের সিংহভাগ বাস করেন দক্ষিণ এশিয়াতে। সব থেকে প্রভাবশালী ইসলামি আন্দোলনগুলির মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয় এই তাবলীগ জামাত আন্দোলনকে।

তাবলীগ জামাতের সদর দফতর নতুন দিল্লির নিজামুদ্দিন। তাবলীগ জামাতের কিছু অনুগামীর ২০২০ সালের মার্চ মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত একটি ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দেওয়া এবং তারপরে তারা কোভিড ১৯ পজিটিভ হওয়ার পর এই সংগঠনটি বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছে। দেশের এবং অন্য দেশের, যেমন ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে বহু মানুষ যোগ দিয়েছিলেন এই ধর্মীয় সমাবেশে।

 

নিজামুদ্দিনে ২০২০ সালের মার্চে তাবলীগ জামাতের যে ধর্মীয় সমাবেশ হয়, তার থেকে বিপুল ভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। সারা দেশে চারশোর বেশি করোনা জনিত অসুস্থতা এবং অন্তত ২৭টি মৃত্যুর সংগে যোগ আছে এই সমাবেশের।

 

যদিও তাবলীগ জামাত ভাণ করে তারা ইসলাম প্রচারক একটি সংস্থা, বস্তুতপক্ষে তারা মানুষের মনে তীব্র ধর্মীয়    আবেগ জাগিয়ে তুলে জিহাদের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। পৃথিবীতে বেশ কিছু সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সংগে তাবলীগের জড়িত থাকা সুস্পষ্ট। বাংলাদেশে এই সংগঠনটি প্রতিদিনই তার শিকড় ছড়াচ্ছে। এদের কার্যকলাপের উপর সরকার অথবা নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এখনও দৃষ্টি নিবদ্ধ  করতে পারছেনা। বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মত  বিভিন্ন উপদল এবং মতাবলম্বীদের মাদ্রাসা এবং মসজিদ গজিয়ে উঠেছে। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, পাকিস্তানের ইসলামি এন জি ও গুলির টাকায় স্থাপন করা হয়েছে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ও। এই মাদ্রাসা, মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ওয়াহাবি ভাবধারা পুষ্ট করে চলেছে।

 

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় এই ধরণের জিহাদি দলগুলি দেশে শরিয়া শাসন প্রবর্তনের উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। বাংলাদেশ যদিও আমেরিকার নেতৃত্বে চলা সন্ত্রাসবিরোধী সংগ্রামে তার  সমর্থন জানিয়েছে এবং সমস্ত জঙ্গি ইসলামী সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করে সে বাংলাদেশকে একটি মধ্যপন্থী ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে চায়, তাবলীগ জামাত এবং অন্যান্য চরমপন্থি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ সেখানে এখনও করা হয়নি। এরা কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে দেশজুড়ে তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

 

বিশ্ব ইজতেমা, যা তাবলীগ জামাত প্রতিবছর বাংলাদেশে আয়োজন করে থাকে, সেটি হজের পরে পৃথিবীতে মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, বাংলাদেশে এই সমাবেশে সম্প্রতি দশ লক্ষেরও বেশি মানুষের সমাগম হয়েছিল। এই বছর থেকে এই সমাবেশ তিনটি ভিন্ন তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। এর কারণ, আয়োজকরা মনে করছেন, এতে বিদেশ থেকে আরো বেশি লোক অংশগ্রহণ করবেন।

 

তাবলীগ জামাতের প্রধান লক্ষ্য ধর্মান্তরকরণে উৎসাহদান। তাদের কর্মসূচীতে এর পরে আছে জিহাদের প্ররোচনা দেওয়া। তৃতীয় লক্ষ্য গণতন্ত্রকে উৎখাত করা। বাংলাদেশের মত একটি দেশে, যেখানে জনসংখ্যার ৮৩ শতাংশই মুসলিম, সেখানে তাবলীগ জামাতের মত একটি সংগঠনকে বেঁচে থাকতে দেওয়ার একমাত্র কারণ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং আহমেদিয়ার মত সম্প্রদায়গুলিকে পরিশেষে মুছে দেওয়া। হিন্দু নারী এবং পুরুষদের জোর করে ধর্মান্তরণের খবর বেরিয়েছে সংবাদমাধ্যমে। যেখানে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, সেখানে পুরো ঘটনাটিকে "বিবাহ" বলে চালিয়ে একটি আইনি মোড়ক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ ভেবেও দেখেনা, তথাকথিত সেই বিবাহগুলি জোর করে করানো হয়েছে কি না। কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণ করে নির্যাতিত মেয়েটির উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়, যাতে সে ধর্ষণকারীকে বিয়ে করতে এবং ধর্মান্তরিত হতে রাজি হয়। তাবলীগ জামাতের কর্মীরা যে কোনও অমুসলমানকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। তাবলীগের এই ডাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুসলিম তরুণরা আকৃষ্ট হচ্ছে। এই ধরণের উৎসাহ পেয়ে তারা অমুসলমানদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করতে যে কোনও কাজ করছে।

 

বাংলাদেশে কাওয়ামী মাদরাসাগুলি জিহাদি তৈরির আঁতুড়ঘর। এই মাদ্রাসাগুলি থেকে যারা পাশ করে, সেই সব ছাত্রদের মাত্র ২৬ শতাংশ কোনও মসজিদে যাজকের কাজ পেয়ে থাকে। জিহাদি মন্ত্রে মগজ ধোলাই করা বাকি সিংহভাগ হয় সমাজে মিশে যায়, নয়তো অদৃশ্য হয়ে যায়। এটা সবাই জানে, হারিয়ে যাওয়া এই প্রাক্তন মাদ্রাসা ছাত্রেরা জিহাদে যোগ দেওয়ার জন্য এক সময় অন্য কোনও দেশে পৌঁছে যায়। এ কথাও জানা যে, এরা এক সময় আফগান যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়ে তালিবান এবং আল কায়দার সংস্পর্শে এসেছিল এবং তালিবান শাসনের পতনের পর চরম উগ্র আদর্শবাদে দীক্ষিত হয়ে দেশে ফেরে। এরপরে তারা হরকত-উল-জেহাদ-আল-ইসলাম(হুজি) এবং জামায়েতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ অথবা জে এম বি- র মত জঙ্গি ইসলামি সংগঠন গড়ে তোলে। বাংলাদেশের সৌদি আরব এবং ইরানি দূতাবাস এবং সেই সাথেই প্যালেস্টিনিয়ানরাও ইজরায়েল এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ নিতে  কাওয়ামী মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া এই সব যুবকদের উৎসাহিত করে।   এদের কার্যকলাপে সহায়তা করতে সৌদি আরব এবং ইরান প্রতিবছর বিপুল অর্থ খরচ করে। অপরপক্ষে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই কাশ্মীরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়তে কাওয়ামী মাদ্রাসা-শিক্ষিত যুবকদের নিয়োগ করে থাকে। অন্য ধরণের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের দায়িত্ব দিয়ে আই এস আই এদের ভারতের অন্যান্য জায়গাতেও পাঠায়।

 

মাদ্রাসা- শিক্ষিত যুবকদের ৮৪ শতাংশ, যারা এইভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়ে হয় সমাজে মিশে যায় অথবা জিহাদি কাজকর্মে যুক্ত হয়ে পড়ে, তাদের ব্যাপারটি ভালোভাবে দেখা উচিত বাংলাদেশ সরকারের এবং যারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, তাদের। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে কার্যকরী কৌশল নিতে হলে এই ধরণের তদন্ত এবং গবেষণা অত্যন্ত জরুরী। সন্ত্রাসবাদের শিকড় এবং সন্ত্রাসবাদী কাজের ভিত্তি সম্পর্কে  নির্দিষ্ট এবং কিছু ক্ষেত্রে বিশদ তথ্য ছাড়া কোনও সরকার অথবা নিরাপত্তা সংস্থা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে পারেনা। সন্ত্রাসবাদ এবং জিহাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের স্বার্থে সন্ত্রাসবাদী এবং জিহাদিদের শক্তি এবং তাদের যাতায়াতের অঞ্চলের মানচিত্রটা সম্যক বোঝা সবার আগে জরুরি।  এটা যে সময় বাংলাদেশ করতে পারবে, তখনই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই আরও অনেক কার্যকরী এবং অর্থবহ হয়ে উঠবে।