Entertainment
প্রশংসার ঝড় তুলেছে 'চিল্ড্রেন অফ ওয়ার'
ঢাকা, মে ২২- 'ভারতীয় পরিচালকের তৈরি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত 'চিল্ড্রেন অফ ওয়ার' (যুদ্ধ শিশু) ছবিটি তুমুল আলোড়ন তুলেছে বাংলাদেশে।
ঢাকা, রাজশাহি, সিলেট, জয়দেবপুর এবং টাঙ্গাইল সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার মোট ১৫ টি সিনেমা হলে গত ১৬ই মে মুক্তি পেয়েছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে তৈরি এই চলচ্চিত্রটি।
রাইমা সেন, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ভিক্টর ব্যানার্জি, পবন মালহোত্রা, তিলোত্তমা সোম এবং নতুন মুখ রুচা ও শত্রুঞ্জয়ের মত ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রতর এই ছবিতে যে সুতীব্র বেদনা এবং মর্মান্তিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ, তা অসাধারন ভাবে চিত্রিত হয়েছে।
ছবিটিতে ধরা হয়েছে সেই ভয়াল, শোকাবহ ন\'টি মাস, যে সময়ের প্রতিনিধিত্ব করেছে বেশ কিছু চরিত্র। তবে মূলগত ভাবে এই ছবিটি কাজ করেছে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে--তা হল, সেই সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিতা নারীরা যে সব সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, তাদের নিয়ে।
ছবিটি যদিও শোভনতা-শালীনতা নিয়ে নীতিবাগীশদের জন্য নয়--কেননা ১৯৭১-এর পাশবিক ঘটনাগুলির তথ্যনিষ্ঠ বাস্তব চিত্রায়ন রয়েছে এতে- তবুও আশ্চর্যের নয় যে, এটি দর্শকদের মন জয় করেছে।
ছবিটি দেখতে ভীড় করছেন মধ্যবিত্ত, তরুণ, নাগরিক সমাজ এবং ধর্মনিরপেক্ষ, উদারপন্থী মানুষ- জন। বাংলাদেশের অসহায় সাধারণ মানুষের উপর কয়েক দশক আগে যে পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা , সিনেমার পর্দায় তা প্রত্যক্ষ করে মানসিক আঘাতে অসাড় হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের দর্শককুল।
অত্যাচারের যে যাতনা ভোগ করেছিলেন সেই সময় পাক সেনাদের লালসার শিকার মহিলারা, মর্ম দিয়ে তা অনুভব করা স্তব্ধ দর্শকরা উপলব্ধি করছেন, কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁদের দেশের মানুষকে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য।
গণহত্যাকারী এবং নারী ধর্ষণকারী পাক সেনাদের ধিক্কার জানিয়ে কয়েক জায়গায় প্রেক্ষাগৃহের মধ্যেই চিৎকার করে উঠেছেন কোনও কোনও উত্তেজিত দর্শক। কোথাও আবার পাকিস্তানের সঙ্গে নীরব যোগসাজশকারী আমেরিকার বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছেন তাঁরা।
অল্প কয়েকটি জায়গায় জামাত এবং তাদের সঙ্গী চরমপন্থী দলগুলির সমর্থকরা শোরগোল তুলে শো বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল এবং চেষ্টা করেছিল এই ভাবে মাঝপথে সবাইকে বের করে দেওয়ার, কিন্তু বিপুল সংখ্যাধিক্যের অন্যান্য দর্শকদের মনোভাব বুঝতে পেরে পিছু হটতে হয়েছে তাদের।
ছবিটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত অনলাইন সোশাল মিডিয়া, মুভি ওয়েবসাইটগুলি এবং ইউ টিউব চ্যাটার। ছবিটি একটি শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম এবং এর মাধ্যমে যে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধার্ঘ জানানো হয়েছে, এ কথা প্রায় সকলেই বলছেন।
তরুণ প্রজন্মের দর্শক, বিশেষ করে যাঁদের জন্ম ১৯৭১ সালের পরে, তাঁদের কাছে ছবিটির মধ্য দিয়ে জীবন্ত হয়ে উন্মোচিত হয়েছে দেশের ইতিহাস, যে ইতিহাস স্বাধীনতার পর থেকে সর্পিল রাজনীতির প্রভাবে অনেকটাই অস্পষ্ট, বিভ্রান্তিকর বলে মনে হচ্ছিল। এমন কি একাত্তরের স্মৃতি বহন করছেন যাঁরা, তাঁদের কাছেও জাতীয় জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি রক্ষা করতে কী করা দরকার, এ ছবি যেন আঘাত করে তা-ই মনে করিয়ে দেয় তাঁদেরও।
ছবিটি এই পরিমাণে অভিঘাত তোলার আরও একটি কারণ ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন, যা ছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবি তুলে নাগরিক সমাজের আবেগের স্বতস্ফূর্ত প্রকাশ। বস্তুতপক্ষে একাত্তরের নির্যাতিত, অত্যাচারিতদের জন্য বহু দিন ধরে ন্যায় বিচার চেয়ে আসা গোটা জাতির অবরুদ্ধ আবেগকে যেন ভাষা দিল এই ছবি।
তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই দাবি উঠেছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতেও \'যুদ্ধ শিশু\' ছবিটি দেখানোর।