Entertainment

চিল্ড্রেন অফ ওয়ারঃ বিচারের আর্তি

চিল্ড্রেন অফ ওয়ারঃ বিচারের আর্তি

| | 11 May 2014, 06:25 am
উনিশশো একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচার, বিশেষত ধর্ষণকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিয়ে এ পর্যন্ত লেখা হয়েছে অনেক কিছুই, কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র বিশেষ কিছু নির্মান করা হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ওই সময়ের পটভূমিতে তৈরি 'চিলড্রেন অফ ওয়ার' (যারজ সন্তান) সাড়া ফেলেছে। সমালোচকদের প্রশংসা পাওয়া এই ছবিটি দেখে আবেগমথিত হচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

 উনিশশো একাত্তরের ঘটনাবলীর উপর তৈরি করা এই ছবিতে দেখানো হয়েছে কী ভাবে ধর্ষণ এবং ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল ওই সময়। একাত্তরে তিরিশ লক্ষ মানুষের গণহত্যা এবং চার লক্ষ মহিলার ধর্ষণের যে ঘটনার মধ্য দিয়ে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের, এই ছবি তার উপর আলোকপাত করেছে।  ছবি যত এগিয়েছে, ভিন্ন কাহিনীগুলি তত একটির সাথে আর একটি মিশে গেছে।

 
ছবিটির পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, যা প্রতিটি বাংলাদেশির হৃদয়াবেগে আঘাত করে।
 
রাইমা সেন ( যিনি ধর্ষণের দৃশ্যে অভিনয় করাকে মানসিক ভাবে পীড়াদায়ক বলে বর্ননা করেছেন) এবং ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত এই ছবির প্রধান চরিত্র। ইন্দ্রনীল এখানে এক জন সাংবাদিক এবং রাইমা এক নির্যাতিতা নারী। ছবিটির অন্যান্য চরিত্রগুলির ভূমিকায় আছেন প্রয়াত ফারুক শেখ, ভিকটর ব্যানার্জি, তিলোত্তমা সোম এবং পবন মালহোত্রা।
 
রাইমা, যিনি পাশবিক নির্যতনের শিকার এক নারীর ভূমিকায় এখানে অসাধারন অভিনয় করেছেন, ছবিটি সম্পর্কে বলেছেন, " এই ছবির জন্য আমি ২১ টি রাত টানা কাজ করেছি। সেই সময় দিনের আলো দেখতে পারিনি।  এক জন ধর্ষিতা, নির্যাতিতা নারী ঠিক যে মানসিক অবস্থায় থাকেন, তা শরীরী প্রকাশভঙ্গী আর চোখের ভাষা দিয়ে স্পষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। তাই উনিশশো একাত্তরে পাকিস্তানি সৈন্যদের কবলে পড়া ধর্ষিতা নারীদের হৃদয়াভূতি অনুভব করতে পারি আমি। "
 
যুদ্ধের কুৎসিত সত্যকে বের করে এনে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে এই ছবিটিতে। যারা দ্বিচারী, যারা আজ এই ঘটনার ব্যাপারে চোখ বুঁজে থেকে যুদ্ধের বীভৎসতা নিয়ে নীরব রয়েছে, তাদের দিকে আঙুল তুলেছে এই ছবি। বাংলাদেশের মাটিতে ঘটে যাওয়া তুলনাহীন এই বর্বরতার যাঁরা শিকার, তাঁদের প্রতি এই ছবি একটি শ্রদ্ধার্ঘ।
 
পাকিস্তানে নিষিদ্ধ এই ছবিটিতে চিত্রিত হয়েছে ন মাস ধরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ এবং স্বাধীনতা লাভে মরীয়া বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম।
 
নির্দেশক মৃত্যুঞ্জয় বলেছেন, "এটি এমন একটি বিষয়, যা কায়েমী স্বার্থে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল পরের পর সরকার থেকে। কিন্তু  পৃথিবীকে এই কাহিনী জানানোর অত্যন্ত দরকার ছিল।  এর ফলে আমরাও লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মোৎসর্গের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিচারের জন্য তাঁদের আর্তনাদকে জগতজুড়ে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পেলাম।"
 
প্রযোজক সৌম্য দেওরাত জানিয়েছেন, ছবিটি থেকে যা আয় হবে, তার দশ শতাংশ সারা পৃথিবীতে যুদ্ধকালীন অত্যাচারে জন্ম নেওয়া শিশুদের কল্যানে দান করা হবে।
 
প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে আসার অনেকক্ষন পরেও \'চিলড্রেন অফ ওয়ার\' আলোড়িত করতে থাকে দর্শকের মনকে। যাঁরা যুদ্ধবিরোধী, এই ছবি তাঁদের অবশ্য দ্রষ্টব্য। এ ছবি ইতিহাসকে ভুলতে দেবেনা।