Entertainment

চিল্ড্রেন অফ ওয়ারঃ স্বাধীনতা সংগ্রামকে ফিরে দেখা

চিল্ড্রেন অফ ওয়ারঃ স্বাধীনতা সংগ্রামকে ফিরে দেখা

| | 22 May 2014, 07:03 am
নতুন দিল্লি--উনিশশো একাত্তর সালে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের উপর পাশবিক অত্যাচারে যে ভূমিকা নিয়েছিল পাকিস্তান, সেই দুঃসহ স্মৃতি আবার ফিরিয়ে এনে সারা পৃথিবী জুড়ে অভিঘাত তুলল সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া 'চিল্ড্রেন অফ ওয়ার' চলচ্চিত্রটি।

 যে ন\'মাস ব্যাপী সংঘর্ষে বাংলাদেশের মুক্তি যোদ্ধারা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেই সময়কার অসামরিক নাগরিকদের ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে চিল্ড্রেন অফ ওয়ারের কাহিনী। 

 
ছবিটি শুধু  সিনেমার দর্শকদেরই নয়,  মথিত করেছে ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলিকেও। এই ছবি দেখার জন্য আমেরিকার কংগ্রেস, ব্রিটেনের হাউজ অফ কমনস এবং রাষ্ট্র সংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানানোর কথা ভেবেছে  সংগঠনগুলি। সহজবোধ্য কারণেই \'চিল্ড্রেন অফ ওয়ার\' পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
 
জামাত-এ-ইসলামি সহ যে মৌলবাদী দলগুলি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে একাত্তরের গণহত্যা ঘটিয়েছিল, আমেরিকা ও ব্রিটেনের নীতি নির্ধারকদের কাছে অবিলম্বে  তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি তুলবে নাগরিক অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলি। সেই সময় ধর্ষিতা হয়েছিলেন অন্তত চার লক্ষ বাংলাদেশি মহিলা, খুন হয়েছিলেন তিরিশ লক্ষ মানুষ, আর ঘর ছাড়া এক কোটি নাগরিক আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতে। 
 
হিন্দিতে তৈরি এবং বাংলায় ডাব করা এই ছবিটি বাংলাদেশের ঢাকা, সিলেট, জয়দেবপুর এবং টাঙ্গাইলের ১৬টি হলে এবং একই সঙ্গে দিল্লিতে গত ১৬ই মে মুক্তি পেয়েছে। ছবিটির বাংলা টাইটেল \'যুদ্ধ শিশু\'। তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করা এই ছবি দর্শকদের স্তব্ধ, অসাড় করে রাখে। এতে যে জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের জনমানসে, তার ফলে নতুন করে দাবি  উঠেছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সহযোগী যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতাদের বিচার ত্বরান্বিত করার। বাংলাদেশের কিছু প্রেক্ষাগৃহে মৌলবাদী জামাত এবং হেফাজত-এ-ইসলামের লোকেরা স্লোগান তুলে এবং মাঝ পথে বেরিয়ে এসে ছবির প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
 
বর্তমানে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগে জামাত-এ-ইসলামির শীর্ষ নেতাদের বিচার চলছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তাদের ভূমিকার জন্য। 
 
যে সময়ে একটি গোটা সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছিল, সেই সময়কার আতঙ্কের পুনর্নির্মাণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ফিরে দেখে \'চিল্ড্রেন অফ ওয়ার\'। কোনও বিশদই বাদ দেননি পরিচালক। মধ্যরাতে বাড়িতে অকস্মাৎ পাক সেনা অফিসারের কড়া নাড়া  এবং যে ধর্ষণ কান্ড চলে তার পর, তার অনুপুঙ্খ, উদ্বাস্তুদের নির্মম হত্যা এবং ধর্ষণকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করার যে ছবি আঁকা হয়েছে এখানে, আগে কখনও তা হয়নি। 
 
উনিশশো একাত্তরের ৩১শে মার্চে শুরু হওয়া এই ছবিতে ন\'মাস ধরে চলা সংগ্রামের সময়টিকে ধরে  দেখানো হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর বর্বর, অমানবিক অত্যাচারের ছবি। আমেরিকা এবং চিনের সমর্থন পাওয়া পাকিস্তানি সৈন্যরা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে লক্ষ লক্ষ পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা ও ধর্ষণের নারকীয় কান্ড ঘটিয়েছিল।
 
ছবিটি বাঙ্গালিদের আবার ঘুরে দাঁড়ানো এবং স্বাধীন, বৈধ একটি রাষ্ট্রের জন্য তাদের লড়াইয়ের কাহিনী। যে আবেগের স্রোত আজ বইছে বাংলাদেশের রাস্তায়, এবং  যে ঘটনাগুলি ঘটেছিল একাত্তর সালে, তার ভিতর দিয়ে চলতে চলতে  বলা হয়েছে অসামান্য সাহসিকতা, সংকল্পের গর্ভ থেকে একটি রাষ্ট্রের জন্ম নেওয়ার গল্প। বলা হয়েছে, এই সংগ্রাম কখনোই দু\'টি ধর্মের মধ্যে ছিলনা, ছিল ধর্মের মধ্যেই থাকা চরম এবং উদারপন্থীদের মধ্যে।