Finance

উত্তাল বাংলাদেশে কমছে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা

উত্তাল বাংলাদেশে কমছে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা

| | 28 May 2013, 04:58 am
ঢাকা, ডিসেম্বর ২৬ ঃ পর্যটন শিল্পের যে সুসময় দেখা গিয়েছিল চলতি বছরে, আর ক\'দিন বাদে শুরু হতে চলা ২০১৩-তে সেই সময় খুব সম্ভবত আর দেখা যাবেনা বাংলাদেশে। কারন, রাজনৈতিক অস্থিরতা।

 ট্যুর অপারেটরদের মতে, বছরের প্রথম অর্ধে দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া তুলনামূলক ভাবে স্থিতিশীল থাকার কারনে এবং ইয়োরোপিয়ান দেশগুলিতে আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতির ফলে ২০১২ সালে বাংলাদেশে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য তা কমতে শুরু করে। "পর্যটক বেশি আসার ফলে এ\' বছর বাজার ভালই ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে সংখ্যা ক্রমাগত কমতে থাকে," সিলভার ওয়েভ ট্যুরস লিমিটিডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওয়াহিদ উল্লা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ২০১২ সালে দেশে পর্যটনের বাজার দশ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছিল। "কিন্তু ২০১৩ নির্ঘাত খারাপ যাবে। রাজনৈতিক ঝামেলার ভয়ে বিদেশী পর্যটক আসা ইতিমধ্যেই অনেক কমে গেছে," তিনি বলেন।
সিলভার ওয়েভের মাধ্যমে পাঁচ জনের একটি জাপানি পর্যটক দলের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা তাদের সফর বাতিল করে দিয়েছে।
ট্যুর অপারেটররা আশংকা করছেন ২০১৩ তে ২০০৬ সালের মতই পর্যটনে ধস নামবে। ২০০৬ সালে ভোটার লিস্ট এবং সংসদীয় নির্বাচনের আগে তদারকি সরকারের ইস্যু নিয়ে তখনকার শাসক দল বি এন পি এবং তাদের বিরোধী আওয়ামী লীগের মধ্যে তিক্ততা চরমে উঠেছিল। 
আর এইবার, সেই তদারকি সরকার ইস্যুতেই এখনকার শাসক দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী বি এন পি ও তার সহযোগী দলগুলির মধ্যে লাগাতার লড়াই-বিসম্বাদ চলতেই থাকছে। 
"বিদেশী পর্যটকরা বার বার জানতে চাইছে, সামনের বছর তাদের বাংলাদেশ সফরের সময় হরতাল হবে কিনা," ট্যুরস প্ল্যানারস লিমিটিডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরিদুল হক জানিয়েছেন। 
তিনি বলেন, যেখানে শান্তির আবহাওয়া আছে, পর্যটন সেই সব জায়গাতেই প্রসার লাভ করে। রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ঘোরাঘুরি বাধা পেতে পারে, এমন সব জায়গায় পর্যটকরা সাধারনত যেতে চাননা। এ\'র সব থেকে বড় উদাহরণ, মিশর। রাজনৈতিক ঝামেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই সেখানে পর্যটকের সংখ্যা ভীষন ভাবে কমে গিয়েছে, হক বলেন।

তাঁর সংস্থার মাধ্যমে ২০১২ সালে ৬,০০০ বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে ভ্রমণে এসেছিলেন, যেখানে ২০১১ সালে ঐ সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০০। 
পর্যটন শিল্পের এই মন্দা এমন একটা সময়ে আসতে চলেছে, যখন অনেক বছর বাদে বাংলাদেশে পর্যটন থেকে আয় বাড়ছিল। 
ইউনাইটেড নেশনস ইকনমিক অ্যান্ড সোশাল কমিশন ফর এসিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০ সালে বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১৯৯,০০০, যা ক্রমে বেড়ে ২০১০ সালে ৩০৩,০০০-এ দাঁড়ায়। ২০১১ সালে বিদেশী পর্যটকদের থেকে মোট আয়ের পরিমান ৩৮ কোটি টাকার কিছু বেশী, আর ২০১২-তে সেই সংখ্যা ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবার কথা।
২০১১ সালে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের আয় ১৮।২৫ কোটি টাকা, যা দেশের জি ডি পি\'র ২।২ শতাংশ। 
বেংগল ট্যুরসের একজিকিউটিভ ডাইরেক্টর মাসুদ হোসেনের কথায়, " সামনের বছর কি হবে, সে বিষয়ে আমরা অত্যন্ত চিন্তিত। হরতালের জন্য অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, কারন ট্যুরিস্টরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারেননি, আর আমাদের বহুবার তারিখ পাল্টাতে হয়েছে।"
একই সুর গ্যালাক্সি হলিডেজের ম্যানেজার সঈদ কাদির অথবা ডিসকভারি ট্যুরস অ্যান্ড লজিস্টিকসের চিফ একজিকিউটিভ জহিরুল ইসলাম ভুঁইয়ার গলায়। "বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা যে ভাবে বেড়েছিল, তা আগামী বছর থাকবে কিনা, তা খুব অনিশ্চিত। অনেক ট্যুরিস্ট তাঁদের ডিসেম্বরের সফর বাতিল করে দিয়েছেন," ভুঁইয়া জানিয়েছেন।