Finance

হরতালের আঘাতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প

হরতালের আঘাতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প

| | 12 Aug 2013, 12:29 pm
ঢাকা, অগাস্ট ১১ ঃ ঈদের ছুটির ঠিক পরেই জামাত-এ-ইসলামি দু'দিনের দেশজোড়া হরতালের ডাক দেওয়ায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক বিভিন্ন হোটেল এবং রিসর্টে তাঁদের বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। আর এর ফলে আরও একটি বড় আঘাতের মুখোমুখি হল বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প।

 "ঈদের ছুটির মধ্যে এবার আমরা সব থেকে বেশি সংখ্যায় বুকিং পেয়েছিলাম। কিন্তু হরতালের ঘোষণা আমাদের সব আশা শেষ করে দিল," কক্স বাজার হোটেল-মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ওমর সুলতান জানিয়েছেন। 

 
হাইকোর্টের আদেশে নির্বাচন কমিশনে দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে জামাত ১২ এবং ১৩ই অগাস্ট এই হরতালের ডাক দিয়েছিল।পরে হরতালের তারিখ দুদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়।
 
ঈদের ছুটিতে বিশাল সংখ্যক স্থানীয় পর্যটক কক্স বাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন এবং সুন্দরবনের মত জায়গাগুলিতে বেড়াতে যান। কিন্তু এই বছর ট্যুর অপারেটর এবং হোটেল মালিকরা বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
 
সুলতান জানিয়েছেন, কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল এবং গেস্ট হাউজে বুকিং-এর প্রায় ৭০ শতাংশই এবার বাতিল হয়ে গিয়েছে। কক্সবাজারে হোটেল এবং অতিথি নিবাস নিয়ে পর্যটকদের থাকার মত মোট ঘরের সংখ্যা প্রায় ১৪,০০০।
 
ঈদের ছুটিতে প্রতিবছর প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ আসেন সৈকত শহর কক্স বাজারে। কিন্তু এবার সেই সংখ্যা পঁচিশ হাজারে পড়ে যেতে পারে বলে বলছেন তিনি।
 
কক্সবাজারে মোট ৩৫০টি হোটেল, মোটেল এবং অতিথি নিবাস আছে।ব্যবসায়ে মন্দা চলার ফলে মালিকরা এর মধ্যেই প্রায় পাঁচ হাজার কর্মচারীকে বসিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান সুলতান।
 
"পর্যটন শিল্প খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে," ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেছেন।
 
তিনি বলেন, আগামী সাধারন নির্বাচনের আগে বিরাট রাজনৈতিক অশান্তির আশঙ্কার ফলে এমনিতেই বাংলাদেশের পর্যটন ব্যবসায়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে।এ ছাড়া ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, বিশেষত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে, এবং ঘন ঘন হরতাল ইতিমধ্যেই পর্যটন শিল্পের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে বলে তিনি জানান।
 
গ্রীন হলিডেজ ট্যুরস, যাঁরা কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন, ঈদের ছুটির মধ্যে প্রায় ১৫০ জন পর্যটকের কাছ থেকে বুকিং পেয়েছিলেন। কিন্তু হরতালের ডাক এবং খাগড়াছাড়ির আদিবাসি অঞ্চলে অশান্তির জন্য সব বুকিং-ই বাতিল হয়ে গেছে। এর ফলে সংস্থার প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতি হবে বলে চিফ একজিকিউটিভ অফিসার মহম্মদ বোরহান উদ্দিন জানিয়েছেন।
 
বেঙ্গল ট্যুরসের একজিকিউটিভ ডিরেকটর মাসুদ হোসেন বলেছেন, ঈদের পরে ২০ জন বিদেশীসহ ৬৫জন পর্যটকের সুন্দরবন ভ্রমণের কথা ছিল। হরতাল ১২ এবং ১৩ অগাস্ট হবে বলে আগে ঠিক ছিল। তাই আমরা সেই বুকিংগুলি পিছিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আবার হরতালও পিছিয়ে যাওয়া আমরা মুশকিলে পড়েছি।
 
গ্যালাক্সি হলিডেজের জেনারেল ম্যানেজার সইয়দ জি কাদিরের মতে রাজনৈতিক গন্ডগোলের জন্য আগামী ছ মাসে সম্ভাব্য পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। কক্স বাজারে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে আসার জন্য যাঁরা এই সংস্থার মাধ্যমে হোটেল বুক করেছিলেন, তাঁদের ৫০ জন বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন।
 
হোটেল মালিকরা বলছেন, ব্যবসায়ে আগে যা ক্ষতি হয়েছে, তা ঈদের ছুটির মধ্যে পুষিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্ত আচমকা এই হরতালের ডাক তাঁদের উপর একটি নতুন আঘাত নামিয়ে আনল।
" আমাদের হোটেলে ঘরের সংখ্যা ২৭৬টি এবং এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ঘরের জন্যই অগাস্টের ১১ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে বুকিং ছিল। কিন্তু হরতালের ডাকের পর ৩০ শতাংশই বাতিল হয়ে গেছে," বলছেন বিলাসবহুল \'দ্য হোটেল কক্স টুডে\'র ডিরেক্টর ফর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং মহিউদ্দিন খান খোকন।
 
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ইমিগ্রেশন দপ্তর জানাচ্ছে,  এ বছর জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে দেশে ঘুরতে আসা বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা এক লক্ষ বারো হাজার, যেখানে গত বছর একই সময়ে ওই সংখ্যা ছিল দু\'লক্ষ পঁচিশ হাজার। দু\'হাজার এগারো সালে ভ্রমণ এবং পর্যটন ক্ষেত্র থেকে আয় হয়েছিল ১৮,২৫০ কোটি টাকা, যা দেশের জিডিপির ২।২ শতাংশ।