Muktijudho

পাকিস্তান কি একাত্তরের গণ হত্যার জন্য ক্ষমা চাইবে ? : স্যামুয়েল বয়েদ

পাকিস্তান কি একাত্তরের গণ হত্যার জন্য ক্ষমা চাইবে ? : স্যামুয়েল বয়েদ

| | 27 May 2013, 01:01 pm
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মানুষের কাছে ১৬ ই ডিসেম্বর তারিখটি স্মরনীয়-যদিও ভিন্ন কারনে।যেখানে বাংলাদেশে প্রতি বছর এই দিনটি বিজয় উচ্ছ্বাসের সাথে পালন করা হয়, সেখানে পাকিস্তানের সাধারন অরাজনৈতিক মানুষ এই দিনটিতে লজ্জা, দুঃখ ও পরাজয়ের গ্লানি অনুভব করেন। উনিশশো একাত্তর সালে এই দিনেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ২৬৬ দিন ধরে চলা (২৫ শে মার্চ- ১৬ই ডিসেম্বর) গণ হত্যার অবসান ঘটিয়ে তাঁদের মুক্তির ইতিহাস রচনা করেছিলেন। তাঁরা নিজেদের মাতৃভূমির নাম দেন বাংলাদেশ।পাকিস্তানের যে সব সেনা নায়ক, সরকারি আমলা এবং রাজনীতিকের নীরব কার্যকলাপ দেশ ভাগের জন্য দায়ী তাঁরাও কিন্তু মুক্ত বোধ করেছিলেন এবং সাধারন মানুষকে বোকা বানাতে খন্ডিত পাকিস্তানকে \'নিউ পাকিস্তান\' অথবা নব পাকিস্তান নামে অভিহিত করেন।

 গণ হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী প্রজন্মের বাঙ্গালিরা এবং ১৬ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১-এর পরবর্তী প্রজন্মও একধিক বার এই বার্তা দিয়েছে যে, তারা পাকিস্তানকে ক্ষমা করতে রাজি, যদি কৃত কর্মের জন্য সে ক্ষমা চায়। গত মাসে যখন পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইসলামাবাদে হতে চলা আটটি মুসলিম রাষ্ট্রের ডি-৮ সামিটে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রন জানাতে এসেছিলেন, তখন তাঁর হাতে বাংলাদেশের কতকগুলি দাবির তালিকা দেওয়া হয়। এই দাবিগুলির মধ্যে ছিল ১৯৭১-এর গণ হত্যার অপরাধে যে সব পাকিস্তানি সেনা অপরাধী তাদের বিচার এবং পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা। শ্রীমতি খারের উত্তর ছিল, আমাদের উচিৎ অতীত ভুলে পারস্পরিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এর পরে শেখ হাসিনা নিজে সেই শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেননি।  পরিতর্তে তিনি যাকে বৈঠকে পাঠান, তিনি এমনকি দেশের বিদেশ মন্ত্রীও নন, প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরের এক জন উপদেষ্টা মাত্র। বলা হয়, পাকিস্তান ক্ষমা প্রার্থনা না করার জন্যই তিনি ইসলামাবাদ যাননি। সেই ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকেই বাংলাদেশ অপরাধী পাক সেনাদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে।

 
শ্রীমতি খারের আগে যে সব পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশ সফরে এসেছেন, তাঁরাও একই দাবির মুখোমুখি হয়েছেন। এঁদের মধ্যে আছেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধান মন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো। ডিসেম্বর, ১৯৭০-এর সাধারন নির্বাচনে জিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালিরা যখন তাঁদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেছিলেন, সেই সময় সেনা বাহিনী বাঙ্গালিদের পাইকারি হারে খুন করতে শুরু করে। যে দিন এই গণ হত্যা শুরু হয়, সেই দিন, অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ভুট্টো ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভুট্টো মন্তব্য করেছিলেন, "ইশ্বরকে ধন্যবাদ যে পাকিস্তান রক্ষা পেল।" অন্য কথায়, তিনি পাক সেনাদের এই কাজকে সমর্থন করেছিলেন। সুতরাং পাক বাহিনীর অপরাধের জন্য কি করে আর তিনি ক্ষমা চাইতে পারতেন !
 
একই ভাবে তাঁর কন্যা বেনজির ভুট্টোও পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হওয়ার পর ঢাকা সফরে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারননি। কারন, পাক সেনাদের এই সব অপরাধের মূল ছিল তাঁর পিতা এবং পূর্বতন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের চক্রান্তের মধ্যে। উনিশশো পয়ষট্টি সাল থেকে চলে আসা এই চক্রান্তের উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে তার জন্য ভারতের ঘাড়ে দোষ চাপানো। 
 
প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশারফ, যিনি বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর সেখানকার মানুষের অধিকারের দাবি জানানো বালুচ নেতা নওয়াব আকর বুগতিকে হত্যা করার জন্য সেনা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও বাংলাদেশের মানুষ ক্ষমা প্রার্থনা আশা করেননি। যে ভাবে তিনি বালুচিস্তানের মানুষদের দমন করেছিলেন, তাতে বলা যেতেই পারে যে, ১৯৭১ সালে যদি তিনি পাক সেনা প্রধান থাকতেন, তাহলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে গণ হত্যা চালানোর জন্যেও সৈন্যদের অভিনন্দন জানাতেন। 
 
পাকিস্তান বুঝে উঠতে পারেনা তাদের সৈন্যরা এক সময়ে যে নরমেধের খেলায় মেতে উঠেছিল, বাংলাদেশীরা এখনো কেন সেই ঘটনা মনে করে রেখেছে। লাখে লাখে বাঙ্গালি পুরুষ, মহিলা, শিশুদের হত্যা করা হয়েছিল, লাখে লাখে অল্প বয়সী মেয়ে এবং মহিলাদের ধর্ষন করে খুন করা হয়েছিল। আর এই বিপুল নর হত্যালীলার বিশেষ লক্ষ্য ছিলেন চিন্তাবিদ, বিদ্দজ্জন এবং রাজনীতিকরা। লেঃ জেনারেল এ এ কে নিয়াজি, যিনি ঢাকার পতনের সময় মিলিটারি গভর্নর ছিলেন, তাঁর আত্ম জীবনীতে লিখেছেন যে, সামরিক কর্তৃপক্ষের নীতিই ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালিদের যাতে কোন নেতা না থাকে। আর এই দানবিক পরিকল্পনা রূপায়িত করতে হত্যা করা হল লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালিকে। উপর থেকে দেখলে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনার দাবি খুব সাধারন ঘটনা মনে হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের দৃষ্টিকোন থেকে এর অনেক অস্বস্তিকর দিক আছে। প্রথমত, পাকিস্তান সৈন্য বাহিনী অথবা পাকিস্তান সরকার তাদের দেশের মানুষকে হত্যা করার জন্য ক্ষমা চাইবেনা। গত পঁয়ষট্টি বছরে এরা বালুচিস্তানে ছ\'বার আকাশ থেকে বোমা ফেলেছে, যেমনটা করা হয় অন্য রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধের সময়, তাদের মাটিতে। অথচ যদি এক বারও সৈন্য বাহিনী অথবা সরকার বালুচিস্তানের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইত, তবে সেই বিদ্রোহ-জর্জর প্রদেশের পরিস্থিতি হয়তো অন্য রকম হতে পারত। 
 
এ ছাড়াও ওয়াশিংটনের পিঠ চাপড়ানি পাওয়ার জন্য গত ন\' বছরের মধ্যে পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী হাজার হাজার নিরীহ উপজাতীয় মানু