Muktijudho

বাংলাদেশঃ গণ হত্যা-বিচার বানচালের বৈদেশিক প্রচেষ্টা - ভাস্কর রায়

বাংলাদেশঃ গণ হত্যা-বিচার বানচালের বৈদেশিক প্রচেষ্টা - ভাস্কর রায়

| | 27 May 2013, 01:04 pm
চরম হিংসা আর রক্তস্নানের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম থেকেই তার ইতিহাসে যত না এসেছে উন্নয়নের কাহিনী, তার থেকে অনেক বেশী লেখা হয়েছে রাজনৈতিক হত্যা এবং সামরিক অভ্যত্থানের কথা। জাতি হিসেবে পৃথক পরিচয়কে সামনে রেখে এই নতুন রাষ্টের সৃষ্টি হলেও সেখানে মানুষের মধ্যে অবশ্যই এখনও থেকে গেছে ধর্মীয়-রাজনৈতিক বিভেদ।

 আর এই বিভেদের আবহে প্রধান দ্বন্দ কাদের মধ্যে ? একদিকে দক্ষিনপন্থীরা, যারা চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশে শরিয়া আইনের শাসন চালু করতে, নারী অধিকারকে দাবিয়ে রাখতে এবং ধর্মের নামে পিছনে হাঁটতে, অন্যদিকে আছে জন সাধারনের মধ্যে থাকা প্রগতিশীল, উদারপন্থী অংশটি, বিশেষত শিক্ষিত তরুণ সম্প্রদায়, যারা চায় কাজ, প্রগতি ও উন্নয়ন।

 
এই ব্যাপারে ২০০৮ সালের পর থেকে অবশ্য দেশ সামনের দিকেই হেঁটেছে এবং অগ্রগতির সামাজিক চিহ্নগুলি স্পষ্ট হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার ৭ শতাংশ বেড়েছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেখানে বাংলাদেশকে ২০০২ সালে ‘প্রায় একটি সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক দেশ হিসেবে দেখা হত, সেখানে গত দু’বছর ধরে তার স্থান ‘সন্ত্রাস বিরোধী একটি প্রথম সারির দেশ’ হিসেবে। উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশ দাঁড়িয়েওবর্তমান সরকারের আমলে নারীমক্তির ব্যাপারে উপমহাদেশীয় অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান সব থেকে উপরে।
 
এ’কথা অবশ্য ঠিক যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূর্নীতি সরকারের অনেকটা উদ্যম নষ্ট করতে পেরেছে এবং উন্নয়ন-প্রচেষ্টা ব্যহত করেছে। এ’ ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও বলতেই হবে যে, দেশ পিছনে টেনে থাকা অনুন্নয়নের শিকল ছিঁড়ে সামনের এগিয়ে যাবার গতি অর্জন করতে পেরেছে।
তবে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে পাকিস্তানী সেনা এবং তাদের সাথে দেশের পুরুষ, মহিলাদের উপর অকথ্য অত্যাচেরে যোগ দেওয়া এক শ্রেনীর বাংলাদেশী মানবতার বিরুদ্ধে যে চরম অপরাধ করেছিল তার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত কিন্তু এখনও থেকেই গেছে। এই অপরাধের কথা ইতিহাস থেকে মুছে দিতে বিপুল অর্থ খরচ এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখন আর এ’ রকম দাবী করা হয়না যে, এই অপরাধগুলি আদৌ ঘটেনি, কারন এর সমর্থনে তথ্য প্রমাণ খুবই জোরাল।তাই ১৯৭১ সালের গ্ণ হত্যার অভিঘাতকে লঘু করে দেখানোর উদ্দেশ্যে এখন মনে হয় এক অন্য রকম চেষ্টা চলছে। ‘দি ইকনমিস্ট, ইউ কে (ডিসেম্বর ১৫, ২০১২) লিখছে ঃ “ অভিযুক্তদের বিচার করা এবং আক্রান্তদের বিচার পাওয়ানোর পক্ষে অনেক দেরি হয়ে গেছে।“ এ’কথা বলেও অবশ্য স্বীকার করা হয়েছে যে, যুদ্ধাপরাধের ক্ষেত্রে কোনও বিধিবদ্ধ সময় সীমা নেই। একই নিবন্ধে সাপ্তাহিকটি লিখছে, “অন্যায়কারীদের কাঠগড়ায় তোলা যায়নি, কারন হয় তারা ইতিমধ্যেই মারা গেছে অথবা পাকিস্তানে বাস করছে। তবে কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তি বাংলাদেশেই বেশ নামডাক নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে।“
 
বাংলাদেশের জামাত-এ-ইসলামির ২৪ ডিসেম্বর, ২০১২ সালে করা একটি ইন্টারনেট পোস্টিঙে এ’ব্যাপারে ‘দ্য ইকনমিস্টকে পভূত ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। পোস্টিংটিতে লেখা হয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার সে দেশে চলতে থাকা যুদ্ধাপরাধ বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত নয়, বরং নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ বলে যে দাবী করেছে তা যে আসলে একটি ‘মিথ’ তা ‘দ্য ইকনমিস্ট’এর উদ্যোগে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যম এবার প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। দ্য ইকনমিস্টও তাদের বক্তব্যে যেন এই রকম একটি ধারনা সৃষ্টি করতে চেয়েছে যে তারা প্রকাশ না করলে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের কারসাজি সম্পর্কে মানুষ অন্ধকারেই থেকে যেত।
 
বর্তমান বিতর্ক মাথা চাড়া দেয় ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ \\নিজামুল হক এবং ব্রাসেলস-এ বসবাসকারী অনাবাসী বাংলাদেশী আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে ইন্টারনেটে চলতে থাকা একটি কথোপকথন ফাঁস হয়ে যাওয়ায়। যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিচারক হক বলেছিলেন যে, একজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে চাপ দিচ্ছিল। সরকার চাইছিল সেই রায় যেন ১৬ ই ডিসেম্বরের আগেই দেওয়া হয়। ওই দিনেই পাকিস্তানী সেনারা ভারতের কাছে আত্ম সমর্পন করেছিল। ‘দ্য ইকনমিস্ট’ এবং বাংলাদেশের দৈনিক ‘আমার দেশ’ নেটের এই কথোপকথন পেয়ে যায় এবং প্রকাশ করে। বিচারক হক, স্বাভাবিক ভাবেই, পদত্যাগ করেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ই-মেল, স্কাইপ অথবা ইউ টিউব—অথবা অন্যকিছু, যাতেই করা হোক, এই কথোপকথন কে বা কারা হ্যাক করল। এটা শুধু বে-আইনি নয়, এতে করে বোঝা যায় যে, কোনও একটি অর্থশালী চক্র কোর্ট, বিচারক এবং বাদী পক্ষের ভিতরকার ব্যাপার স্যাপারের ভিতর বে-আইনি ভাবে ঢুকে পড়ছে।
 
যুদ্ধাপরাধ বিচারে প্রথম অভিযুক্তের নাম দিলওয়ার হোসেন সায়েদী, জামাতের একজন শীর্ষ নেতা এবং ১৯৭১-এর নিষ্ঠুরতম ব্যক্তিদের একজন। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে আল কায়দা এবং তালিবানের ‘ওয়াহাবি’ তত্ত্ব সমর্থনকারী জামাতের প্রধান তাত্ত্বিক নেতাদের একজন, সায়েদীর পরিষ্কার দু’টি নীতি আছে—হয় তাদের ধর্মান্ত&