Muktijudho

একাত্তরের গণ হত্যা ঃ একটি দলিল

একাত্তরের গণ হত্যা ঃ একটি দলিল

| | 27 May 2013, 12:00 pm
ঢাকা, ডিসেম্বর ৭ঃ ঊনিশশো একাত্তর সালে বাংলাদেশের (পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তান) গণ হত্যার ভয়াবহতার সাথে সম্ভবত জার্মানদের হাতে সোভিয়েত যুদ্ধ বন্দী ও ইহুদীদের নিধন এবং রোয়ান্ডার গণ হত্যারই একমাত্র তুলনা করা যেতে পারে। স্বাধীনতার দাবী করা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের আন্দোলনকে গুঁড়িয়ে দিতেই লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক সরকারের সেনা বাহিনী পরিকল্পিত ভাবে নামিয়ে এনেছিল এই আক্রমণ।

 পূর্ব কাহিনী ভারতীয় উপ মহাদেশে প্রায় দু\'শো বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসানের সঙ্গেই সৃষ্টি হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের (পূর্ব ও পশ্চিম) । ধর্ম ও জাতির ভিত্তিতে ভারত ভাগের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও বিদায়ী ব্রিটিশ শাসক ও বেশ কিছু ভারতীয় রাজনীতিক প্রবল ভাবে চাইছিলেন ভারতের হিন্দু অধ্যুষিত অংশ (ভারত) ও মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল গুলি(পাকিস্তান) নিয়ে দু\'টি পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে, এবং শেষ পর্যন্ত তাই হল। ঊনিশশো সাতচল্লিশে ভারত ভাগের সাথেই রচিত হল শতাব্দীর অন্যতম বৃহৎ \'ট্র্যাজেডি\'।

 
সাওম্জাপ্টীসাসাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সামরিক সংঘাতে প্রান হারালেন হাজার হাজার মানুষ। পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা ভারতে আর ভারত থেকে মুসলমানরা পালিয়ে এলেন ভারতে, যদিও তা সত্ত্বেও বহু  সংখ্যা লঘু মানুষ রয়ে গেলেন দু\' দিকেই। কিন্তু এই ব্যবস্থা কোন স্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারলনা, যার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি বড় যুদ্ধের এবং একটি চতুর্থ \'প্রায় পুরোপুরি যুদ্ধের\' ঘটনা ঘটে যায় । সেই সাথে ঊনিশশো সাতচল্লিশের প্রথম যুদ্ধের পরে যুদ্ধ বিরতি রেখায় বিভক্ত কাশ্মীর পৃথিবীর একটি অন্যতম \'ট্রাব্‌ল স্পট\' হয়ে রইল। এ দিকে  ভারতের বিপরীত দুই প্রান্তে শত শত মাইল ব্যবধানে, জাতি পরিচয়ের ক্ষেত্রে ততোধিক দূরত্বে থাকা নব গঠিত পাকিস্তানের দু\'টি অংশ পড়ে থাকল  দশকের পর দশক জুড়ে। বিশেষত, ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে গণতন্ত্রকে সরিয়ে সামরিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যে ক্রমাগত অবনতির পথে যাওয়া সম্পর্ক যেমন নয়া ঔপনিবেশিকতার চেহারা নিল, তেমনি পূর্বের বাঙ্গালিদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকল।  শেখ মুজিবর রহমান বিধ্বংসী বন্যা ঊনিশশো সত্তরের অগাস্টে বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে, কিন্তু তখনকার শাসকরা ত্রাণের ব্যাপারে গুরুতর অবহেলা করে, ফলে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ প্রচারের একটি বড় সুযোগ পেয়ে যায় । তারা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্ব শাসন এবং সারা দেশে সামরিক শাসনের অবসানের দাবী করে। ডিসেমবর মাসের জাতীয় নির্বাচনে তারা বাঙ্গালি অধ্যুষিত অঞ্চল গুলিতে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে।  ঊনিশশো একাত্তরের বাইশে ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা প্রধানরা সিদ্ধান্ত নেন যে, আওয়ামী লীগ এবং তার সমর্থকদের গুঁড়িয়ে দিতে হবে। বিদ্রোহ দমন করতে যে গণ হত্যা  চালানো দরকার, এটা প্রথম থেকেই ঠিক করা ছিল। "ওদের তিরিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা কর, তাহলে বাকি সবাই নতি স্বীকার করবে," ফেব্রুয়ারী কনফারেন্সে তৎকালীন প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন (রবার্ট পেণ, ম্যাসাকার [১৯৭২], পৃষ্ঠা ৫০ )। শেশেশেঈশেঈ
 
২৫ তারিখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমন করে শয়ে শয়ে ছাত্রকে হত্যা করা হয়। ঢাকার পথে পথে তখন জল্লাদ বাহিনী ঘুরছে, এক রাতের মধ্যে খুন হয়ে গেলেন ৭,০০০ মানুষ । কিন্তু এটা ছিল সবে শুরু। "এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা শহরের অর্ধেক বাসিন্দা পালিয়ে গেলেন এবং নিহত হলেন অন্তত ৩০,০০০ মানুষ । চট্টগ্রামের জনসংখ্যাও অর্ধেক কমে গেল। পুর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র মানুষ লড়াই শুরু করে দিল। একটি আনুমানিক হিসেব অনুসারে, মিলিটারির হাত থেকে বাঁচার জন্য এপ্রিল মাসে গোটা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে প্রায় তিন কোটি মানুষ অসহায় ভাবে ঘুরে বেড়িয়েছিল (পেন, ম্যাসাকার, পৃঃ ৪৮)। এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিলেন, যার ফলে সে দেশের উপর ভয়ানক চাপ সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সেনা বাহিনী হস্তক্ষেপ করে। ( গণহত্যার সময় কালে বাংলাদেশের/ পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৭।৫ কোটি)। এপ্রিল মাসের দশ তারিখে
 
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ দিকে পাকিস্তানী সেনাদের মোকাবিলা করার জন্য তৈরি হয় মুক্তি যোদ্ধা বাহিনী। স্থানীয় অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞ এই সব যোদ্ধারা স্থানীয়  মানুষের সাথে মিশে গিয়ে গেরিলা কায়দায় লড়াই চালাতে লাগলেন। এই গণ প্রতিরোধের ফলে যুদ্ধের শেষ দিকের মধ্যেই বাংলাদেশের বিশাল অঞ্চল মুক্ত করা গেছিল।  বাঙ্গালি পুরুষ হত্যা বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল পুরুষদের ধরে ধরে হত্যা করা। অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের বক্তব্য, " এই  গণ হত্যার মূল লক্ষ্য সন্মন্ধে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।" কারা লক্ষ্য ছিলেন ? (১) ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেণ্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্‌স, পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনীর কর্মীরা এবং স্বাধীনতার যোদ্ধারা । (২) হিন্দুরা (৩) আওয়ামী লীগের সমস্ত পদাধি&a