Muktijudho

মোল্লার শাস্তি ঃ আইন সংশোধন করা হল সংসদে

মোল্লার শাস্তি ঃ আইন সংশোধন করা হল সংসদে

| | 27 May 2013, 01:11 pm
ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২২ ঃ শাহবাগের উত্তাল আন্দোলনে যখন প্রতিদিন ধ্বনিত হচ্ছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবি, সেই সময়,অভিযুক্ত জামাত-এ-ইসলামি নেতা আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সংসদে একটি আইন সংশোধন করা হল।

 আর এই আইন সংশোধনকে স্বাগত জানিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লক্ষ মানুষ। 

 
ফেব্রুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখ থেকে এই বিক্ষোভকারীরা জামাতের সহ সাধারন সম্পাদক মোল্লার মৃত্যুদন্ড দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালে এই নেতার যাবজ্জীবন কারাবাসের হুকুম হয়েছিল। 
 
আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে ট্রাইব্যুনালগুলিকে এই ক্ষমতা দেওয়া হল যে, তারা  দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় জামাত সহ যে কোনও সংগঠনের অপরাধের বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারবে। 
 
জামাত এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সংগঠণগুলিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সরকারের উপর ক্রমাগতই  চাপ
বাড়ছে। আহমেদ জানিয়েছেন, সরকার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটি ভেবে দেখছে। 
 
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সংশোধনীটি সরকারকে এবার ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করে মোল্লার পুনর্বিচার চাওয়ার সুযোগ করে দিল। এর আগের আইন অনুযায়ী, এক মাত্র বেকসুর মুক্তির আদেশ না হলে রাষ্ট্র কোনও ব্যক্তির পুনর্বিচার চাইতে পারতনা।
 
সংসদে সংশোধনীটির উপর ভোটাভুটিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি অনুপস্থিত ছিল। আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বি এন পি সংসদের অধিবেশনগুলি বয়কট করে চলছে। ওই একই দিনে বি এন পি ঢাকায় তাদের কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে জনসভা করে একটি \'অরাজনৈতিক\' তদারকি প্রশাসনের অধীনে আগামী জানুয়ারির সাধারন নির্বাচন করার দাবি করে। 
 
"যুদ্ধাপরাধ বিচারের ব্যাপারে জনতার প্রতিবাদকে ব্যবহার করে সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন জাতীয় ইস্যুগুলি থেকে নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। এই সব ইস্যুগুলির মধ্যে আছে পরিচ্ছন্ন এবং নিরপেক্ষ ভোট সুনিশ্চিত করতে তদারকি প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করার দাবি," বি এন পি\'র সেক্রেটারি জেনারেল মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর ওই সমাবেশে বলেন। 
 
বি এন পি\'র অন্যান্য বক্তারা শাহবাগের বিক্ষোভকারীদের দূর্নীতি, প্রশাসনের রাজনীতিকরণ এবং বিরোধীদের দমন করার উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগকে কাজে লাগানোর বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানান।
 
বাংলাদেশে ১৯৯১ সাল থেকে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া পালা করে প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক দ্বন্দে লিপ্ত এই দুই নেত্রীকে \'ব্যাট্‌লিং বেগমস\' বলে প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। 
 
বি এন পি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই বলেও অভিযোগ করে থাকে যে, তিনি ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। হাসিনা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
 
যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রথম রায়ে ট্রাইব্যুনাল প্রাক্তন জামাত নেতা আবদুল কামাল আজাদকে হত্যা এবং অত্যাচারের অপরাধে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে। বর্তমানে গ্রেট ব্রিটেনে বসবাসকারী আজাদের অনুপস্থিতিতে এই রায় ঘোষনা করা হয়। 
 
ওয়ার ক্রাইমস কোর্টে জামাতের বর্তমান ও প্রাক্তন আরও আটজন নেতার বিচার চলছে। উনিশশো একাত্তরের মুক্তি যুদ্ধের সময়কার হত্যালীলা এবং অত্যাচারের তদন্ত ও বিচারের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা ২০১০ সালে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ৩০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিলেন এবং ধর্ষিত হয়েছিলেন অসংখ্য মহিলা। 
 
 
এর মধ্যে, আগামী সোমবার জামাত দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কিন্তু শাহবাগের আন্দোলনকারীরা এবং বহু দোকানদার এই ধরনের জবরদস্তি বন্ধ রুখবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
 
ধর্মঘটের সময় অথবা তার আগে কোনও হিংসার ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য প্রশাসন থেকে ঢাকা শহরে ইতিমধ্যেই আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে হয়েছে।