Muktijudho

পূর্ব পাকিস্তান ও আর্থিক বঞ্চনা ঃ ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তান ও আর্থিক বঞ্চনা ঃ ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১

| | 27 May 2013, 01:02 pm
লন্ডন থেকে প্রকাশিত ফাইনান্সিয়াল টাইমস কাগজে ১৯৭১ সালে চার্লস স্মিথ লিখেছিলেনন ঃ...\"পূর্ব বঙ্গ যদি পৃথিবীর আটটি দরিদ্রতম দেশের মধ্যে একটি হয়, তবে তার কিছুটা কারন এই যে, এটি পাকিস্তানের একটি অংশ। ...১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হবার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে পূর্ব বঙ্গ নতুন দেশের পশ্চিম প্রান্তের থেকে ভাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলে।ভবিষ্যত উন্নয়নের কথা কথা ভাবলে, পূর্ব পাকিস্তানের জল সিক্ত গ্রামাঞ্চল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক পশ্চিমের থেকে বেশী সম্ভাবনাময় ছিল।...পূর্ব পাকিস্তানের যা ছিলনা, এবং এখনও পর্যন্ত নেই, তা হল রাজনৈতিক ক্ষমতা। আর, যে ভাবে এই ক্ষমতার ব্যবহার করেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তার ফলেই সর্বনাশের শুরু ।\"

 পূর্ব পাকিস্তানে সংঘাত:

লেখক- (১) এডোয়ার্ড এস ম্যাসন, ল্যামন্ট ইউনিভার্সিটি প্রোফেসর, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি    (২) রবার্ট ডর্ফম্যান, প্রফেসর অফ ইকনমিক্স, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি (৩) স্টিফেন এ মারলিন, প্রফেসর অফ ইকনমিক্স, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি। 
 
সারাংশ:
প্রাথমিক তথ্যগুলি পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করা পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক আধিপত্যের অভিযোগকেই সমর্থন করে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য এত দীর্ঘ দিন ধরে এতটাই প্রকট ছিল যে, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পরিকল্পনা সংস্থাও এই ব্যাপারে সরকারী নোট না দিয়ে পারেনি। 
 
.পূর্বের পক্ষ থেকে সেই অঞ্চলের দূর্দশার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তিনটি বিষয়কে দায়ী করা হয় ঃ           পাকিস্তানের যেটুকু সামান্য সম্পদ ছিল আর যা বিদেশি সাহায্য আসত, তা অন্যায্য ভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হত। আবার এদিকে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ থেকে পাওয়া বিদেশি মুদ্রা পশ্চিমের জন্য আমদানিতে খরচ করা হত। সুতরাং, পাকিস্তানের অর্থনীতির অভিমুখ ছিল দেশের পূর্বাঞ্চলকে অবহেলা করে পশ্চিমের সুবিধা দেখার দিকে। আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্প-লাইসেন্সের ব্যাপারে দেশের নীতির জন্য পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জিনিষ কিনতে বাধ্য হত। কিন্তু যদি এই ধরণের কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকত, তা হলে সেই সব জিনিষ পত্র বিশ্বের অন্যান্য জায়গা থেকে আরো কম দামে কেনা যেত।
 
পাকিস্তানের প্ল্যানিং কমিশন প্রকাশিত চতুর্থ পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনার (১৯৭০-৭৫) জন্য গঠিত অ্যাডভাইসরি প্যানেলের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত পাকিস্তানের রফতানি আয় ছিল ৭০ শতাংশ, কিন্তু আমদানিকৃত আয় ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ। ১৯৪৮-৪৯ থেকে ১৯৬৮-৬৯-এর মধ্যে পূর্ব থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে বিশাল পরিমান সম্পদের হাত বদল হয়েছে। রিপোর্ট জানাচ্ছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের মুদ্রা মূল্যের হিসেবে এর পরিমান ৩১,০০০,০০০,০০০ টাকা। ঐ সময়ে পাকিস্তানের টাকা এবং ডলারের বিনিময় মূল্য অনুযায়ী (১১।৯০ টাকা-১ ডলার) যা ২৬ লক্ষ ডলার।
 
এর পরিণতি:
১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ছিল ১১ টি কাপড়ের কল আর পশ্চিমে মাত্র ৯ টি।
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ২৬ টি আর পশ্চিএ ১৫০ টি। 
ফলে পাকিস্তানের অর্থনীতি উদ্বৃত্ত থেকে ঘাটতিতে চলে গেল।