Muktijudho

গণ হত্যার অঙ্ক : আবুল কাশেম

গণ হত্যার অঙ্ক : আবুল কাশেম

| | 27 May 2013, 01:03 pm
কিছু নব্য রাজাকার এবং পাকিস্তানি আবার সেই শয়তানির খেলায় নেমেছে। তারা চাইছে নতুন প্রজন্মের বাঙ্গালির মনে ১৯৭১ সালের গণহত্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করতে। এই সব নব্য রাজাকারদের এক জনের থেকে এমন কথাও শোনা গেছে যে, বাংলাদেশে নাকি মাত্র কয়েক লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলেন (১৫০,০০০ থেকে ২০০,০০০)। ব্ববাং

 বাংলাদেশের নির্বাচন খুব দূরে নয়। আমরা জানি কেন এই সব মানুষ হঠাত করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এক জন পাকিস্তানির আবার বক্তব্য, ৯০,০০০ পাকিস্তানি সেনার পক্ষে মাত্র ন\' মাসে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা সম্ভব নয়। তাহলে এবার কিছু হিসেব নিকেশে আসা যাক, আর সেই হিসেব করা যাক আন্তর্জাতিক তথ্যের ভিত্তিতে। সেই সাথে বাংলাদেশ ও কাম্বোডিয়ার গণ হত্যার মধ্যে একটি তুলনা মূলক বিচারও করা যাক।  

    
বাংলাদেশ
ইউনাইটেড নেশনস-এর ডিক্লারেশন অফ ইউনিভারসাল হিউম্যান রাইটস ১৯৮১ সালে লিখেছে ঃ "মানব সভ্যতার ইতিহাসে যতগুলি গণ হত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশে, ১৯৭১ সালে। প্রত্যেক দিন গড়ে ছ\' হাজার থেকে ১২,০০০ হাজার মানুষ খুন হয়েছিলেন...গণ হত্যার ইতিহাসে এটাই সর্ব্বোচ্চ প্রাত্যহিক গড়।" বাংলাদেশে দখলদারি পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রায় ২৬০ দিন ( ২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১, তাদের আত্ম সমর্পনের দিন পর্যন্ত ) এই \'পবিত্র কাজ\' চালিয়ে গেছিল। এবার ইউনাইটেড নেশনসের দেওয়া দিন প্রতি নিহতের সংখ্যাকে ২৬০ দিয়ে গুন করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে  নিহত বাঙ্তেগালিদের সর্ব নিম্ন সংখ্যা ১,৫৬০,০০০ (পনেরো লক্ষ ষাট হাজার ) এবং  সর্বোচ্চ সংখ্যা ৩, ১২০,০০০ (একত্রিশ লক্ষ কূড়ি হাজার)। ঈএরএরএর থেকে গড় করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২,৩৪০,০০০ (তেইশ লক্ষ চল্লিশ হাজার)-এ। 
 
দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। সেই সময় সাধারন ভাবে একটি বাঙ্গালি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল পাঁচ, অর্থাৎ,  প্রায় ১৫  লক্ষ পরিবার। সেই হিসেবে পরিবার পিছু নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ০।১৬ এবং অন্তত এক জন সদস্য মারা গেছেন, এই রকম পরিবার ছিল সমস্ত পরিবারের ৪২।৭ শতাংশ। অবশ্য এই রকম বহু পরিবার ছিল যাদের একাধিক সদস্য নিহত হয়েছিলেন। এমনও অনেক হয়েছে যেখানে হয়তো এক জন ছাড়া গোটা পরিবারটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। 
 
তৃতীয়ত,  এই হিসেব মত প্রত্যেক পাক সেনা ২৬০ দিনে ২৬ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এই হিসেবের মধ্যে কিন্তু রাজাকাররা নেই। পাকিস্তানি সেনাদের সাথে যোগ দেওয়া এই রাজাকারদের সঠিক সংখ্যা কত ছিল, কেউ জানেনা। ধরে নেওয়া যেতে পারে পঞ্চাশ থেকে চল্লিশ হাজার। এদেরও যদি ধরা হয় তবে সব মিলিয়ে কত জন মারা গিয়েছিলেন, অনুমানের বিষয়। 
 
চতুর্থত, প্রত্যেক পাকিস্তানি সেনা প্রতি দিন ০।১ জন মানুষকে হত্যা করেছিল।   তার মানে এক জন পাকিস্তানি সৈন্যর হাতে প্রতি দশ দিনে এক জন করে মানুষ খুন হয়েছিলেন। এটা কি খুব অসম্ভব কাজ ? সংখ্যাগুলি, যা বলা হচ্ছে, অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে ? এর থেকেই বোঝা যায়, ঠিক কি হয়েছিল সেদিনের বাংলাদেশে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক তাদের সেপ্টেম্বর, ১৯৭২ সংখ্যায় লিখেছিল যে, বাংলাদেশে ৩০ লক্ষ মানুষ খুন হয়েছেন। এই তথ্যগুলিএ ঘটনার এক বছর বাদে প্রকাশ পায়। সুতরাং তথ্যগুলি খুবই প্রামাণ্য এবং পক্ষপাতহীন।                                                                                                                                                                                                                                                      
 
 কাম্বোডিয়া
এবার আর একটী গণ হত্যার ঘটনা, যা মানব ইতিহাসে তুলনাহীন, তার দিকে চোখ ফেরানো যাক। এই গণ হত্যা হয়েছিল খমের রুজ বাহিনীর হাতে, কাম্বোডিয়ায়। সরকারি হিসেব ১৭ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলেন, যদিও কোন কোন মতে সংখ্যাটা ২০ লক্ষ। এই গণ হত্যা কিন্তু ২৬০ দিনে ঘটেনি, চলেছিল খমের রুজের শাসন কালের চার বছর ধরে, অর্থাৎ ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ অবধি। 
কাম্বোডিয়ার জন সংখ্যা ১৯৭০ সালে ছিলে ৬৯ লক্ষ ৪০ হাজার, আর ১৯৮৮ সালে ৭৮ লক্ক ৭০ হাজার। প্রামাণ্য নথি অনুযায়ী, কাম্বোডিয়ার জন সংখ্যা বৃদ্ধির গড় হার ২।৩ শতাংশ। এই হার অনুসারে ১৯৭৪ সালে, অর্থাৎ, গণ হত্যার বছরে, কাম্বোডিয়ার জন সংখ্যা ৭৬ লক্ষ ছিল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তা হলে সেই হিসেব মত মোট জন সংখ্যার ২২।৮ শতাংশ মানুষ খুন হয়েছিলেন। যদি বাংলাদেশের মত সেখানেও পরিবার পিছু পাঁচ জন সদস্য ছিল বলে ধরে নেওয়া যায়, তবে ১৯৭৪ সালে কাম্বোডিয়ায় ১৫।২ লক্ষ পরিবার ছিল, এবং পরিবার প্রতি নিহতের সংখ্যা ছিল ১।১৪ জন, আর চার বছর ধরে প্রতি দিন ১১৯২ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। 
 
যদি খমের রুজ এতগুলি হত্যা চার বছরে না করে ২৬০ দিনে করত, যেমনটা বাংলাদেশে হয়েছিল, তা হলে কাম্বোডিয়াতে দিন প্রতি নিহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াত ৭,০০০, বাংলাদেশে প্রতি দিন খুন হওয়া মানুষের সংখ্যার থেকে যার খুব বেশি তফাৎ নেই। 
 
উপসংহার
অতেব দেখা যাচ্চে ৩০ লক্ক সংখ্যাটা আদপেই অসম্ভব নয়, বরং বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে নিহতদের একটি নির্ভুল হিসেব। ভয়াবহতার দিক থেকে এবং পরিবার প্রতি মৃতের সংখ্যার বিচারে