South Asia

চেন্নাই, বাঙ্গালোরে সন্ত্রাস- হানার ছক কলম্বোর পাক কনস্যুলেট থেকে

চেন্নাই, বাঙ্গালোরে সন্ত্রাস- হানার ছক কলম্বোর পাক কনস্যুলেট থেকে

| | 14 Jun 2014, 12:37 am
নতুন দিল্লি, জুন ১৩- চেন্নাই বন্দর এবং সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন ছাড়াও চেন্নাই ও বাঙ্গালোর বিমান বন্দরের উপর আক্রমণ চালানোর ছক করছে পাকিস্তানের আই এস আই-এর সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা। গত এপ্রিল মাসে চেন্নাইয়ে ধরা পড়া আই এস আই এজেন্ট মহম্মদ সাকির হুসেনকে জেরা করে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

 মনে করা হচ্ছে, এই পরিকল্পনা আসলে কলম্বোতে আই এস আই-এর সন্ত্রাসে মদত দেওয়া কনস্যুলেটের মাধ্যমে ভারতকে ঘিরে ফেলার একটি কৌশল। 

 
হুসেনকে জেরা করে যে সব তথ্য পাওয়া গিয়েছে, এতদিন তা গোপনই রাখা হয়েছিল, কিন্তু সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে তা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় জানা যাচ্ছে যে, সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণের লক্ষবস্তুগুলির মধ্যে \'ইলেকট্রনিক সিটি\' বাঙ্গালোর এবং তামিল নাড়ুর অ্যাটমিক  পাওয়ার প্লান্টও রয়েছে।
 
শ্রীলংকার নাগরিক, ছত্রিশ বছর বয়সী হুসেন আই এস আই-এর এক জন এজেন্ট। পুলিশের কাছে যে জবানবন্দী সে দিয়েছে, তাতে তাকে বিপজ্জনক কাজের জন্য অর্থ, উপদেশ এবং নানা ভাবে সাহায্য করা কিছু পাকিস্তানি কূটনীতিকের পরিচয় এবং আরও অনেক কিছু জানা গেছে। হুসেন জানিয়েছে, সমস্ত পরিকল্পনা, কাজকর্ম এবং অর্থের যোগানের ব্যবস্থা নিজে করে থাকেন কলম্বোতে পাকিস্তানি দূতাবাসের কাউন্সেলর আমির জুবেইর সিদ্দিক (ছদ্মনাম মামা@রবি) এবং তাঁর উপরওয়ালা \'শাহ।\' কলম্বোয় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা কর্নেল শারিয়ারও কখনও কখনও হুসেনকে পরামর্শ দিয়েছেন। 
 
হুসেনের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখার জন্য কলম্বোর পাক কনস্যুলেটের অফিসারেরা এক ডজনেরও বেশি বিভিন্ন টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করতেন।
 
পুলিশের ইন্টারোগেশন রিপোর্ট অনুযায়ী, হুসেনকে বিশাখাপত্তনম এবং কোচিনের নৌ সেনা ঘাঁটি, চেন্নাই বন্দর এবং অ্যাটমিক  পাওয়ার প্লান্টে বিশ্বস্ত যোগাযোগ রক্ষাকারী খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে, ২০১৩ সালের জুন মাসে চেন্নাইয়ের আমেরিকান কনস্যুলেট, চেন্নাই শিপিং ইয়ার্ড, চেন্নাই বিমান বন্দর, চেন্নাই রেল স্টেশন, বাঙ্গালোরের ইজরায়েলি কনস্যুলেট, বাঙ্গালোরের ইলেকট্রনিক সিটি এবং বাঙ্গালোর বিমান বন্দরের ছবি যোগাড় করার ভারও দেওয়া হয়েছিল। 
 
যে কাজে হুসেন ভারতে এসেছিল, তা নিরাপত্তা বিষয়ক আধিকারিকদের ২০০৮ সালের ভয়াবহ মুম্বাই আক্রমণের আগে ডেভিড হ্যাডলির ভারতে \'রেকি\' করতে আসার কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছে। 
 
 ২০১৩ সালের জুলাই মাসে পাক কূটনীতিক সিদ্দিক  এমন কি স্থানীয় সাহায্যকারীদের দিয়ে ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকদের ল্যাপটপ চুরি করিয়ে তার থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে বলেছিলেন হুসেনকে। এ ছাড়া তাকে কলম্বোতে বাস করা ইজরায়েলির সম্পর্কে বিশদ খবর সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিলে এবং এ সব কাজের বিনিময়ে তাকে এক লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।  
 
আগে মানুষ পাচারের কাজ করা হুসেন ভারতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য কাজে লাগানো  যেতে পারে, চেন্নাই এবং ত্রিবান্দ্রমে বাস করা এ রকম কিছু ভারতীয় নাগরিকের সম্পর্কে বিশদ তথ্য সিদ্দিকের হাতে তুলে দিয়েছিল। ২০১৩ সালের অগাস্ট মাসে হুসেন সিদ্দিকের কাছ থেকে আরও এক লক্ষ টাকা পায়  কোচিন, বিশাখাপত্তনম এবং চেন্নাইয়ের নৌ সেনা ঘাঁটিগুলিতে   কী ভাবে নাশকতামূলক কাজ চালানো যায়, তার সুলুক সন্ধান করতে চেন্নাই যাবার জন্য। এর পরে আরও উৎসাহিত  হয়ে দক্ষিন ভারতে থাকা কোনও ভারতীয় নৌ অফিসারকে পর্যটনের টোপ দিয়ে কলম্বোয় নিয়ে আসার কাজও হুসেনকে দিয়েছিলেন সিদ্দিক। 
 
বৃহত্তর একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, শ্রীলংকা থেকে জলপথে দু\'জন পাকিস্তান-জাত সন্ত্রাসবাদীকে তামিলনাড়ুতে পাঠিয়ে চেন্নাইয়ের আমেরিকান কনস্যুলেটে আক্রমণ চালানোরও ছক ছিল। আমেরিকান কনস্যুলেটের নাম দেওয়া হয়েছিল \'ম্যারেজ হল\', সন্ত্রাসবাদীদের নাম ছিল \'কুক\' , বিস্ফোরকের নাম দেওয়া হয়েছিল \'মাশালা আইটেমস\' এবং বিস্ফোরণের নাম ছিল \'ফুড প্রিপারেশনস।\' চেন্নাইর আমেরিকান কনস্যুলেটের ছবি তোলার জন্য হুসেনকে দেওয়া হয়েছিল ২৫,০০০ শ্রীলংকান টাকা। সেই ছবিগুলি  জনগভইউকে@ইয়াহু.কম--তার এই এইমেইল ঠিকানার মাধ্যমে পাক কাউন্সেলর সিদ্দিকের এইমেইল ঠিকানায় পাঠানো হয়েছিল। ঠিক ছিল, বিস্ফোরণ ঘটানো হবে এমন সময়, যখন নতুন বিজেপি সরকার দিল্লিতে ক্ষমতায় বসছে। এই অপারেশনের জন্য কলম্বোর পাক কনস্যুলেট থেকে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করে রাখা হয়েছিল।
 
 হুসেন আরও জানিয়েছে যে, পাকিস্তানিদের জন্য নিয়মিতভাবে   ভুয়ো শ্রীলংকান পাসপোর্ট জোগাড় করার কাজেও সিদ্দিক তাকে ব্যবহার করতেন। ২০১৪ সালের মার্চ  মাসে গোটা পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত হয় ইসলামাবাদ থেকে আসা আরও দু\'জন উচ্চপদস্থ পাক সেনা অফিসারের উপস্থিতিতে। কলম্বোর বাইরে নেগাম্বোর একটি হোটেলে হুসেনের সঙ্গে গোপনে দেখা করেছিলেন এঁরা সবাই। 
 
এ ছাড়াও সিদ্দিকের মাধ্যমে হুসেনের সাহায্যেই কলম্বোর পাক হাই কমিশন থেকে অস্ত্র পাচারের কাজ করানো হত। কলম্বো বন্দর থেকে এ কে সিরিজ বন্দুকের একটি চালান পাঠানোর জন্য হুসেনকে শ্রীলংকার মুদ্রায় ১.৭৫ লক্ষ টাকা  দেওয়া হয়েছিল । ইশরাত খান (আই এস আই-এর ব্যাংকক-কলম্বো-মালে অপারেশনের দায়িত্বে থাকা পাকিস্তানি নাগরিক) এবং আরশাদ (কলম্বোয় পাক দূতাবাসের কর্মী) ছিল হুসেনের অন্য দুই সাহায্যকারী। 
 
২০১৩ সালের অক্টোবরে দু\'জন অজানা ব্যক্তির জন্য জাল পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার ব্যাপারে ইশরাতের সঙ্গে ব্যাংককে বৈঠক করার জন্য হুসেন সিদ্দিকের কাছ থেকে ২৫০ মার্কিণ ডলার পেয়েছিল। হুসেনের সন্দেহ, এই দু\'জনকেই ভারতে বিস্ফোরণের ঘটানোর কাজ দেওয়া হয়েছিল। ইশরাত ছিল জাল ভারতীয় নোটের বাহক। এই জাল নোট চালানের ব্যাপারে ২০১৪ সালে হুসেন তিন বার মালে গিয়েছিল এবং লেনদেন থেকে আসা মুনাফার ৪০ শতাংশ তাকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সে পেয়েছিল।