Travel

হরতাল-অবরোধে মৃতপ্রায় বাংলাদেশের পর্যটন

হরতাল-অবরোধে মৃতপ্রায় বাংলাদেশের পর্যটন

| | 31 Jan 2014, 04:17 am
ঢাকা, জানুয়ারি ৩১ ঃ বাংলাদেশে পর্যটন পরিষেবা এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের অন্ন সংস্থান হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, এটি এমন একটি জায়গা, যার জন্য বেঁচে থাকে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে আসা ভ্রমনার্থীদের নানা ধরণের পরিষেবা দেওয়া অন্য আরও অনেক সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র। বাংলাদেশের অর্থনীতির পক্ষে এই সব পরিষেবাকে সচল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ন, কারণ এ গুলির মাধ্যমেই অল্প শিক্ষিত এবং কোনও বিশেষ কাজে দক্ষতা না থাকা মানুষজনও জীবনধারণের জন্য কাজ পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা নানা ভাবেই অনেক পয়সা খরচ করেন (যেমন কক্স বাজারে অল টেরেইন ভেহিকলে ঘুরে বেড়ান অথবা জেট স্কি'র রোমাঞ্চ উপভোগ করা), আর এই ভাবেই সক্রিয় থাকে পর্যটন-অর্থনীতি এবং সেই সাথে স্থানীয় অর্থনীতিও। কিন্তু ২০১৩ সালে সারা বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন হিংসা আর অগুন্তি অবরোধ--এই দুইয়ের আঘাতে বাংলাদেশের পর্যটন ক্ষেত্র আজ চরম দুর্দশায়।

 ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডাব্লু টি টি সি)-র হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সালে বাংলাদেশের জিডিপি-র ২.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১৯,৩০০ কোটি (১৯৩ বিলিয়ন)  টাকা এসেছিল পর্যটন ক্ষেত্র থেকে। ্বাংলাদেশে এই মূহুর্তে সব মিলিয়ে যত কাজ আছে তার ১.৮ শতাংশ, অর্থাৎ ১,২৮,৫০০টি কর্মসংস্থান হয়েছিল পর্যটন ক্ষেত্রেই। এ ছাড়াও বলা হয়েছিল, দেশের অধিকাংশ মানুষের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে বছরে ৭.৭ শতাংশ হারে বাংলাদেশের পর্যটন ক্ষেত্রের বৃদ্ধি ঘটবে। কিন্তু হিংসার তান্ডবে পথে ঘাটে অন্তত ৫০০ মানুষের মৃত্যুর সাক্ষী সদ্য ফেলে আসা বছরটিতে সেই পর্যটনের কর্মকান্ড আজ সম্পূর্ন স্তব্ধ। হোটেলগুলিতে ৯৫ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়ে গেছে আর একটি হিসেব অনুযায়ী, শুধু কক্স বাজারেই হোটেল, মোটেল এবং গেস্ট হাউজগুলিতে কর্মচ্যূত হয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।  তবে স্থানীয় পরিবহণ কর্মী, খাবারের দোকানদার, ফিরিওয়ালা এবং অন্যান্য পর্যটন কর্মীদের ধরলে সব মিলিয়ে কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা আরও অনেক বেশিই হবে। পর্যটনের উপর এই বিশাল আঘাতের একটি সহজ উদাহরণ সেন্ট মার্টিন\'স দ্বীপ, যেখানকার অর্থনীতি পুরোপুরি ভাবে পর্যটন-নির্ভর। এই মূহুর্তে সেই অর্থনীতি স্তব্ধ, বিধ্বস্ত।     

 
বাংলাদেশে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারে পর্যটকদের এই যে ভরসাহীনতা, তা কিন্তু কিন্তু পর্যটন শিল্পের ক্রমাগত ক্ষতি করে চলবে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তার আচরণকে আলাদা করে দেখলে চলবেনা। আমরা সকলেই এখন বিশ্বায়নের অর্থনীতির মধ্যে থেকে কাজ করে চলেছি আর সকলেরই অধিকার আছে ক্রমেই বেড়ে চলা নানা বিকল্পের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া রাস্তায় ব্যয় করার।  হরতাল এবং অবরোধ শুধু যে আয় বন্ধ করে দিয়ে স্থানীয় পর্যটনের সর্বনাশ করছে তাই নয়, ভ্রমণার্থী মানুষকে এ দেশ থেকে দূরে ঠেলে রেখে তাকে বিনোদনের অন্য বিকল্প খুঁজে নিতেও বাধ্য করছে। ইতিমধ্যেই হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প। হয়তো আর বেশি দেরী নেই তার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার, যে অবস্থা থেকে অদূর ভবিষ্যতে আর সে পারবেনা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে।