Travel

কক্স\'স বাজার ঃ পর্যটকের স্বর্গ

কক্স\'স বাজার ঃ পর্যটকের স্বর্গ

| | 29 May 2013, 01:18 pm
মাইলের পর মাইল জুড়ে সোনালী বালুকা বেলা, ঝুঁকে পড়া পাহাড় চূড়া, দুধ সাদা ফেনা মাথায় নিয়ে আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ, ইতস্তত ছড়িয়ে থাকা নানা রঙের শংখ, ধ্যান গম্ভীর প্যাগোডা আর সুস্বাদু সি ফুডের আয়োজন--এই নিয়ে কক্স\'স বাজার। বাংলাদেশের এই সমুদ্র শহরে আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম বেলাভূমি (১২০ কিম),যা ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরের জলের ভিতর। কক্স\'স বাজার দেশের সব থেকে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি। কক্স\'স বাজারের উত্তরে পড়ে চট্টগ্রাম ও দু\'টি পার্বত্য জেলা--বান্দরবন এবং খাগড়াছাড়ি, পূর্বে মায়ানমার আর পশ্চিম এবং দক্ষিন জুড়ে শুধুই বঙ্গোপসাগর।

 ইতিহাস

 
প্রাচীন কালে কক্স বাজারের নাম ছিল বাকোলি। আবার মধ্য সপ্তদশ শতকে জায়গাটির নাম হয় পেঙ্গোয়া, রাখাইন ভাষায় যার মানে হলুদ ফুল। বর্মার রাজা মনওয়াইং ১৭৪৮ খৃষ্টাব্দে কক্স\'স বাজার আক্রমণ সেখানকার আরাকানি নৃপতি থামাদাকে হত্যা করে জায়গাটি দখল করেন। ফলে স্থানেয় আরাকানিরা পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং পটুয়াখালিতে। তখনকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরকার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে এক ব্যক্তিকে সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিযুক্ত করে তাঁকে ঘর ছাড়া আরাকানিদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব দেন। নতুন কর্মস্থলে আসার পথে কক্স এক যুদ্ধে বর্মার রাজাকে পরাজিত করেন এবং আরাকানিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। সেটা ১৯৯৯ সাল। এর পরে সেখানে তিনি একটি বাজার বসান, তাঁরই নামে যার নাম হয় কক্স\'স বাজার। এখন কক্স\'স বাজারের মোট আয়তন ২৪৯১।৮৬ কিমি আর জন সংখ্যা ২২ লক্ষ।
 
পর্যটকের স্বর্গ কক্স\'স বাজার
 
সুবিশাল বীচের শুরুতে জমজমাট শহরের কক্স\'স বাজার মেইন রোড জুড়ে দু\'পাশ জুড়ে শৌখিন পসরা সাজানো দোকানের সারি, শান্ত প্যাগোডা, রাখাইনদের কোয়ার্টার, কস্তুরা ঘাট ফিশ হারবার। চোখে পড়ে পাহাড়ের পিছন থেকে সুর্যোদয় আর দিনের শেষে সাগরের জলে মায়াবী আলো ফেলা সুর্যাস্ত। সব মিলিয়ে যেন এক কল্পনার রাজ্য এই পর্যটকের স্বর্গ।
 
ইনানি
 
সমুদ্রের পাশ দিয়ে কক্স\'স বাজার থেকে ৩০ কিমি দূরে সাগর আর পর্বতের মাঝে টুকরো টুকরো মনোরম বেলা ভূমি নিয়ে পর্যটকের জন্য অপেক্ষা করা ইনানি একটি চমৎকার শান্ত, প্রাকৃতিক শোভায় অপরূপ শহর। এখানে কক্স\'স বাজার-টকনাফ থেকে গণ পরিবহনে আসা যায়। অথবা আপনি সরাসরি বীচ ধরে জিপে করেও আসতে পারেন।
 
হিমছাড়ি
 
সমুদ্র ও পাহাড়ের মাঝে একটি অপূর্ব নিরিবিলি জায়গা। বীচ বরাবর কক্স\'স বাজার থেকে দক্ষিন-পূর্ব দিকে সাড়ে চার কিমি। ভাটির সময় চার চাকায় অথবা পথের খানিকটা গাধা কিম্বা হাতির পিঠে চড়ে এসে বাকিটা  পায়ে হেঁটে পৌঁছতে পারলে এক অসাধারন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারবেন।
 
রামু
 
কক্স\'স বাজারের ১৫ কিম দূরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি ছোট্ট গ্রাম। এখানকার আকর্ষনগুলির মধ্যে আছে বৌদ্ধ মন্দির এবং খিয়াং, রামকোট বনাশ্রম, তীর্থধাম, রবার বাগান, বৌদ্ধ লোকালয় রেড চিন খিয়াং, হোয়াইট চিন খিয়াং, ঝরখিয়াং। কক্স\'বাজার থেকে বাসে রামু যেতে সময় নেয় আধ ঘন্টা। ট্যাক্সি, মিনি বাসও পাওয়া ্যায়। 
 
মহেশখালি
 
কক্স\'স বাজার থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ। দ্বীপময় সবুজ গাছ পালা বুকে নিয়ে জেগে থাকা পাহাড়। এখানে আছে প্রাচীন আদিনাথ মন্দির, একটি বৌদ্ধ বিহার, জেলেদের এবং রাখাইনদের গ্রাম। এঞ্জিন লাগানো নৌকা অথবা ট্রলার সারা দিন ধরে এই দ্বীপ আর কক্স\'স বাজারের মধ্যে যাতায়াত করে।
 
সোনাদিয়া
 
এটি কক্স\'স বাজারের মূল ভূখন্ড ছাড়িয়ে একটি দ্বীপ। সুবিশাল নীল আকাশের নীচে দেখা হবে জেলেদের সাথে, দেখতে পাবেন শুঁটকী মাছ পক্রিয়াকরন কেন্দ্র আর লাল কাঁকড়াদের আস্তানা। প্রতিদিনের জীবনের বাইরে অন্য এক ঠিকানা।
 
টেকনাফ
কক্স\'স বাজার থেকে ডাঙ্গায় ৮৫ কিমি এবং বীচ ধরে ১২০ কিম দূরের টেকনাফ একটি প্রাচীন সীমান্ত শহর, যার কাছ দিয়ে বয়ে চলা নাফ নদীর ওপারে মাথা তুলে রয়েছে মায়ানমার পর্বতমালা। কক্স\'স বাজার থেকে প্রতি ঘন্টায় ছাড়া গণ পরিবহনে এখানে আসা যায় ঘন্টা দু\'য়ের মধ্যে।
 
সেন্ট মেরিন\'স আইল্যান্ড
 
বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির মধ্যে জেগে থাকা সেন্ট মেরিন\'স দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এর স্থানীয় নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। এখানকার আকর্ষনগুলির মধ্যে আছে দ্বীপের চারপাশের সুন্দর বীচগুলি, প্রবাল পাথর, নারিকেল বন, সামুদ্রিক কাকড়া, কচ্ছপের খোল আর মুক্তোর সম্ভার। 
 
কি ভাবে কক্স\'স বাজার পৌঁছবেন
 
চট্টগ্রাম থেকে ১৫৪ কিম দূরের কক্স\'স বাজার জাতীয় সড়কের সাথে যুক্ত। এ ছাড়া বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্স\' বাজারের বিমান দিনে তিন বার ছাড়ে।জি এম সি এয়ারলাইনস অথবা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মত প্রাইভেট এয়ারলাইনসগুলির উড়ানও ছাড়ে চট্টগ্রাম থেকে। জলপথে চট্টগ্রাম থেকে কক্স\'স বাজার যাওয়া মানে এক রোমান্টিক জার্নি।
 
কোথায় থাকবেন
 
বাংলাদেশ পর্যটনের হোটেল ও মোটেল দুই-ই পাওয়া যায় এখানে। এর জন্য অবশ্য আগে থেকে রিজার