Travel

রাজনৈতিক অস্থিরতা ধ্বংস করছে পর্যটন শিল্প

রাজনৈতিক অস্থিরতা ধ্বংস করছে পর্যটন শিল্প

| | 29 May 2013, 01:23 pm
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প আজ বিপদের সামনে। মাসের পর মাস ধরে চলতে থাকা রাজনৈতিক-সামাজিক অস্থিরতায় এই শিল্প এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রায় তিরিশ লক্ষ মানুষের অবস্থা সঙ্গিন।

 খোঁজ করলেই জানা যাবে যে, বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে হোটেল ও ট্যুরিস্ট লজগুলিতে \'অকুপেন্সি\' এই বছরে সব থেকে কম। 

কান পাতলেই শোনা যাবে ফাঁকা অথবা প্রায় ফাঁকা হয়ে থাকা হোটেল মালিক ও পর্যটন কর্মীদের আতঙ্কিত কথাবার্তা। তাঁদের মতে বর্তমান সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে পর্যটন শিল্পেরই। তাঁদের আশঙ্কা, এরকম চলতে থাকলে তা বাইরের জগতের কাছে দেশের ভাবমূর্তিকে টেনে নামিয়ে আনবে এবং তাতে এক দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যাবে এই শিল্পের। 
 
অথচ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্রে ভরপুর এই বাংলাদেশ।বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত যেমন এই দেশেরই কক্স বাজারে তেমনি পৃথিবীর সবথেকে বড় বাদাবন আছে সুন্দরবনে। ঐতিহাসিক সিল্ক রোড ছাড়াও  ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুর, বরিশাল, ওয়াড়ি বটেশ্বর, এগারোসিন্দুর, মহাস্থানগড়ের মত আরও বহু জায়গার আকর্ষণ অমোঘ পর্যটকদের কাছে। 
 
সাধারনভাবে প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এই সব জায়গায় ভীড় করেন। কিন্তু এই বছর পর্যটকের সংখ্যা চোখে পড়ার মত কম। এর ফলে কক্স বাজারে যে তিন তারা হোটেলের দৈনিক ঘর ভাড়া সাধারনভাবে ৫,০০০ টাকা, সেখানে ে এখন সেই ঘরই দেওয়া হচ্ছে ১,২০০ টাকায়। হোটেল লং বিচের সারওয়ার আলম জানিয়েছেন তাঁর ১০৪ শয্যা বিশিষ্ট হোটেল অন্যান্য বছরে সাধারনত ৫০ শতাংশ ভর্তি থাকে। কিন্তু এই বছরে গত কয়েক মাসে সেই হার নেমে দাঁড়িয়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশে। 
একই পরিস্থিতি সুন্দরবনে। খুলনার ট্যুর অপারেটর পাগমার্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা এপ্রিল-মে মাসে পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে একটি ট্রিপও করতে পারেনি। "এপ্রিল মাসে পর্যটক-বাহী প্রতিটি জাহাজ সাধারনত চার থেকে পাঁচটি ট্রিপ করে।বিভিন্ন ট্যুর অপারেটিং কোম্পানীর এই রকম অন্তত ১২টি জাহাজ আছে। এবার মন্দার ফলে সকলেরই বিরাট ক্ষতি," একজন ট্যুর অপেরাটর জানিয়েছেন। 
 
পর্যটকদের আসা ভীষনভাবে কমে যাওয়ায় তাঁদের দুরবস্থার দিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করার উদ্দেশ্যে ট্যুর অপারেটরস\' অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কাছে মানব শৃংখল তৈরি করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। অ্যাসোসিয়শনের প্রেসিডেন্ট হাসান মনসুর জানিয়েছেন, তাতে এখনও পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। "রাজনৈতিক গন্ডগোলের জন্য অন্তত পাঁচ হাজার পর্যটক বিভিন্ন পরিষেবা পাননি। ফলে তাঁদের আসার সংখ্যা কমতে থাকে জানুয়ারি মাস থেকেই। সব মিলিয়ে পর্যটন শিল্পে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে," মনসুর বলেছেন। 
 
 
এই অবস্থা চলতে থাকলে সামনের বছরের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হতে চলা আগামী পর্যটন মরসুমে আর কেউই হয়তো বেড়াতে আসবেননা বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মনসুর। "রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে যদি দেশের ভাবমূর্তি খারাপ হয়ে যায়, তবে তা মেরামত করা খুব মুশকিল," তিনি জানিয়েছেন। 
 
তাঁর বক্তব্য, যদি সত্যিই সেই ভয়ংকর পরিস্থিতি আসে, তবে তা দেশের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অন্তত ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকার উপর প্রবল আঘাত হানবে।