Travel

বর্ষায় পর্যটনন ঃ বাংলাদেশ পর্যটনের সোনালী সম্ভাবনা

বর্ষায় পর্যটনন ঃ বাংলাদেশ পর্যটনের সোনালী সম্ভাবনা

| | 31 Aug 2013, 12:42 pm
বর্ষার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সম্পর্ক। বর্ষার দীর্ঘ মরসুমে বিভিন্ন তাল, লয়ে শ্রান্তিহীন বৃষ্টি, পল্লী বাংলার থৈ থৈ মাঠ-ঘাট, সমুদ্রের রুপ ধরা যৌবনবতী নদী, উপচে ওঠা পুকুর, ভেসে যাওয়া বিল, আর সেই সঙ্গে সবুজের সাজে নতুন করে সেজে ওঠা প্রকৃতি এক মায়াবী রূপদান করে বাংলাদেশকে। জলে ভেজা কাদা মাখা মেঠো রাস্তার পাশে থাকে ঝোপঝাড়, জলাভূমি থেকে ভেসে আসে ব্যাঙের আনন্দ-সঙ্গীত আর বর্ষা্র জলে জন্ম নেয় নানা পোকামাকড়।

 বর্ষায় অনুপ্রাণিত বাংলার কবি-সাহিত্যিকের সৃষ্টিতেও তাই সেই সৌন্দর্যের বিপুল উদ্ভাস। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসংখ্য গানে, কবিতাতেও পাওয়া ্যায় সেই সৌন্দর্যের বিমুগ্ধ জয়গান।

 
কদম, হিজল, জুঁই, বেল, কেয়ার মত বর্ষার মরসুমে ফোটা রকমারি ফুলের আভরনে যেমন অপরূপা হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃতি, তেমনি তাদের গভীর সুগন্ধ যেন ছড়িয়ে গিয়েছে বাংলার সাহিত্যিকদের বিভিন্ন রচনায়।
 
আবার বাঙ্গালির রসনাতেও আছে বর্ষার অনবদ্য অবদান।  নানা প্রজাতির অসংখ্য মাছের, বিশেষ করে ইলিশের দেখা  মেলে এই ঋতুতে।অসাধারন স্বাদ ও ঘ্রাণের এই \'রূপোলি শষ্যের\' বিভিন্ন পদ বাঙলার সংস্কৃতিতে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
 
বাংলার বর্ষার এই বিপুল সম্ভার সত্ত্বেও কিন্তু বিদেশ থেকে আসা বেশিরভাগ পর্যটকই এই ঋতুতে বাংলাদেশ ভ্রমণ এড়িয়েই চলতে চান। অথচ বর্ষার মরসুম এবং এই সময় বাংলার প্রকৃতির অনন্য রূপ কিন্তু পর্যটকের আগ্রহের কারন হতে পারে এবং এই সম্ভাবনার কথা বোঝা দরকার।
 
ঐতিহ্যগতভাবেই বর্ষার সময় বাংলাদেশে নানা উৎসব, মেলা, ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। একটি অঞ্চলের মানুষের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং চরিত্রের পরিচয়বাহী এইসব কিছুর সঙ্গে পর্যটকদের পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারি আমরা।বর্ষায় আয়োজিত নৌকা বাইচ বা কাবাডির মত দেশীয় উত্তেজনাময় ক্রীড়ানুষ্ঠান অথবা সেই সময় সুলভ ইলিশের করমারি পদের অপূর্ব স্বাদ পর্যটকদের বিনোদন অভিজ্ঞতায় এক অন্য মাত্রা এনে দিতে পারে।
 
নদীমাতৃক আমাদের দেশের বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং ব্যক্তি মালিকানার পর্যটন সংস্থাগুলি পর্যটকদের জন্য  ্নৌকা ভ্রমণ এবং লাক্সারি ক্রুইজের যথেষ্ট সুবন্দোবস্ত করে তাঁদের এদেশের হাওর, বাওর এবং নদীর মনোরম রূপ দর্শনের অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ করে দিতে পারেন। বর্ষায় স্ফীত বাংলাদেশের নদী, জলাশয়ে মাছ ধরার দৃশ্যও তাঁদের স্মৃতিতে জেগে থাকবে। এছাড়াও এই সময় সুলভ আনারস, পেয়ারা, ডালিম, নুঞ্চার মত স্থানীয় ফলগুলির স্বাদ নিতেও তাঁরা ভালবাসবেন, আবার খিচুড়ি-ইলিশ, শুঁটকি মাছ এবং দেশীয় সবজির নানা ঐতিহ্যময় ব্যঞ্জন পর্যটকদের রসনায় বৈচিত্র আনবে। 
 
সাধারনভাবে আমাদের দেশে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি--এই সময়টাকেই পর্যটন মরসুম বলে ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতুরই আছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, যেগুলি পর্যটকের আগ্রহের কারন হতে পারে।
 
অন্য অনেক জায়গাতেই কিন্তু বর্ষার সময়টিকে বেছে নেওয়া হয়েছে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে, বিশেষত রাজস্থানে এই উপলক্ষ্যে নানা ধরনের উৎসব আর মেলার আয়োজন করা হয়। \'মনসুন হলিডে প্যাকেজ\'-য়ের আকর্ষণে বর্ষার রূপ প্রত্যক্ষ করতে   আসা পর্যটকদের কল্যানে তাই সেইসব জায়গায় বেড়ে চলে পর্যটন শিল্প থেকে আয়।
 
বর্ষায় পর্যটন বিদেশীদের কাছে এনে দেয় অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা আর তাই বাংলাদেশের মত জায়গায় সর্বোতভাবে এই ধরণের পর্যটনের প্রসার ঘটানর চেষ্টা করা উচিৎ। বর্ষার ঋতুতে জীবনকে উপভোগ করার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যে আমাদের আছে, তা আমাদের জাতীয় উৎসব, লোককথা আর কবিতা-গানের মধ্যেই পরিষ্কার।সেই ধারাবাহিকতাই পারে বর্ষায় পর্যটনের প্রসার ঘটাতে আমাদের উৎসাহিত করতে।