Column

খালেদা জিয়া ও \'গণ হত্যা\'র গল্প

খালেদা জিয়া ও \'গণ হত্যা\'র গল্প

| | 27 May 2013, 11:30 am
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামাত-এ-ইসলামি নেতা দেলওয়ার হোসেন সাইদির মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে। তার পরেই জামাত এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির দেশ জুড়ে শুরু করে ব্যাপক সন্ত্রাস ও হিংসা, লিপ্ত হয় পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে। এই সংঘর্ষে যারা নিহত হয়, তাদের অধিকাংশই জামাত এবং ছাত্র শিবিরের কর্মী। এই ঘটনাকে \'গণহত্যা\' আখ্যা দিয়েছেন বি এন পি নেত্রী খালেদা জিয়া।

 বাংলাদেশে \'গণহত্যা\' শব্দটি সাধারনত ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ব্যাপক হত্যালীলার প্রসঙ্গে ব্যবহার করা হয়। সেই সময় দখলদারি পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের স্থানীয় সহযোগীদের হাতে কত যে মানুষ খুন হয়েছিলেন তা সঠিকভাবে এখনও জানা যায়নি। যে আনুমানিক হিসেব সাধারনত দেওয়া হয় মৃতের সংখ্যা তার থেকে প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক বেশি হতে পারে। বেশিরভাগ হিসেব অনুযায়ী তিরিশ লক্ষ মত মানুষ খুন হয়েছিলেন এবং প্রাণ বাঁচাতে ৮০ লক্ষ থেকে এক কোটি মানুষ ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আনুমানিক দু\'লক্ষ মহিলা ধর্ষিতা হয়েছিলেন। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন রকমের জঘন্য অপরাধ করেছিল পাক সেনারা এবং তাদের সহযোগীরা। 

 
একাত্তরের পঁচিশে মার্চ খুনে বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণ করে।ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ঘাতকরা সেই দিন এক রাতের মধ্যে হত্যা করেছিল ৭,০০০ মানুষকে। এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার অর্ধেক মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেন, খুন হয়ে গেলেন ৩০,০০০ নাগরিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে বীভৎস তাণ্ডবের বর্ননা দিয়ে ১৯৭১-এর ৩১শে মার্চ ঢাকার মার্কিণ কনস্যুলেট তাদের রিপো্র্টে জানিয়েছিল যে রোকেয়া হলের ভিতরে গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায়  সিলিং ফ্যান থেকে অনেকগুলি ঝুলন্ত, নগ্ন নারী দেহ পাওয়া গিয়েছে। অনুমান, ওই সব মহিলাদের ধর্ষণ করার পর গুলি করে হত্যা করা হয় এবং তারপর তাদের দেহগুলি দড়ি দিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দেশের মানুষদের উপর এই ধরণের ভয়াল পাশবিকতা এবং অজস্র হত্যার বর্ননা করতে গিয়েই তা্ই \'গণহত্যা\' শব্দটি ব্যবহৃত হয়। 
 
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এ\'সব ভালোই জানেন। অথচ তিনি নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটা মৃত্যুকে গণহত্যা বলে অপব্যাখ্যা করলেন। উনিশশো ঊণআশি সালে তাদের জন্মলগ্ন থেকে একাত্তরে ৩০ লক্ষ মানুষের গণহত্যার ব্যাপারে কখনওই কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেনি। ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায় জামাত এবং ছাত্র শিবিরের হিংসাত্মক তান্ডব চলার সময় জাতীয় পতাকা পোড়ান এবং শহীদ মিনার অপবিত্র করার ঘটনা সম্পর্কেও তিনি নীরব থেকেছেন। একাত্তরের তাদের ঘাতক ভূমিকার জন্য স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে ক্ষমা চাওয়া দূরে থাক, বাংলাদেশকে পাকিস্তানের একটি অঙ্গে পরিণত করার উদ্দেশ্য কাজ করা জামাত-শিবির কর্মীরা দেশের জাতীয় পতাকা পোড়ান এবং শহীদ মিনারের অবমাননা করার স্পর্ধা দেখিয়েছে। এই বিষয়ে খালেদা জিয়ার মৌনতা দুষ্কৃতীদের দেশজুড়ে লাগাতার সন্ত্রাস চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। 
 
শাহবাগের ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনের ব্যাপকতায় শঙ্কিত খালেদা জিয়ার কাছে এর বিরোধিতা করা ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা নেই। এর কারন, শাহবাগের আন্দোলনকারী তরুণদের কাছে নতি স্বীকার করা মানেই বাংলাদেশ ইসলামি রাজনীতির ইতি। "প্রথমে আমি একজন বাঙ্গালি, তারপরে মুসলমান অথবা হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ"--শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে শাহবাগ আন্দোলনের নেতাদের এই কথাটি পাকিস্তান প্রচারিত দ্বিজাতি তত্ত্বের মূলেই কুঠারাঘাত করে এবং ইসলামি রাজনীতির জন্য কোনও জায়গা রাখেনা। এই আন্দোলন যদি সফল হয়, তবে তা বাংলাদেশের জনগনের বৃহদংশের প্রাথমিক পরিচিতি যে, আগে তারা বাঙ্গালি, তারপরে মুসলমান, তা নির্ণয় করবে। শাহবাগ কাঁপানো \'জয় বাংলা\' ধ্বনিও এই আন্দোলনের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে চিহ্নিত করে। এই ব্যাপারটি স্পষ্ট যে, এই পরিবেশে খালেদা জিয়ার কূটকৌশলের পরিসর সীমিত হয়ে পড়বে। 
 
পরিকল্পিতভাবে ইতিহাসকে অস্বীকার করে খালেদা জিয়া বলেছেন, \'জয় বাংলা\' স্লোগানটি নাকি স্বাধীনতা-উত্তরকালে তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তিনি বলেছেন, এর কারন, একাত্তরের পর যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকার  নাকি ছিল একটি বিশেষ পক্ষালম্বনকারী। কিন্তু এই স্লোগানই মুক্তি যুদ্ধের সময় স্বাধীনতাকামী মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ন\'মাসব্যাপী সংগ্রামের সময় \'জয় বাংলা\' নিনাদ তুলে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে যেতেন। তাই এই স্লোগান বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
 
প্রথমবার এই স্লোগানের অবমাননা করা হয় রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর। উনিশশো পঁচাত্তরের অগাস্ট মাসে ক্ষমতায় আসীন হয়ে খোন্দকার মুস্তাক \'জয় বাংলা\' পরিত্যাগ করে পাকিস্তানের ঢঙে \'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ\' স্লোগান চালু করেন। একই পথে হেঁটে সামরিক প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ধর্মনিরপেক্

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020