Column

‘মরীয়া’ খালেদা জিয়ার সেনা আবাহন

‘মরীয়া’ খালেদা জিয়ার সেনা আবাহন

| | 27 May 2013, 11:15 am
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের পরোক্ষ আহ্বান করে বিরোধী নেত্রী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক মন্তব্য তাঁর এবং তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শেখ হাসিনার সরকারের মধ্যেকার চাপা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

 বিরোধী নেত্রীর এই মন্তব্য প্ররোচনামূলক তো বটেই, যে জন্য বিভিন্ন মহল থেকে তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। এ ছাড়াও তাঁর বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যায় যে, দেশের বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে তাঁর দল, বি এন পি’র প্রান্তিক ভূমিকা তাঁকে কতটা মরীয়া করে তুলেছে।

 
বেগম জিয়ার দলের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা এই রকম—দেশে যেখানে মূল লড়াইটা চলছে হাসিনা সরকারের সঙ্গে জামাত-এ-ইসলামির, তখন বি এন পি শুধুমাত্র একপক্ষের সমর্থনকারী। জামাতের সঙ্গে চলতে গিয়ে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আবেগ এবং ভাবনার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এর ফলে দেশে  গণতন্ত্র এবং ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের’ প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধির জন্য যে কৃতিত্বের দাবি তারা করে থাকে, তা তারা হারাচ্ছে।
 
তা ছাড়াও, জামাতকে সমর্থন করায় বি এন পি’কে সাধারন মানুষ ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী বলেই মনে করছেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিষয়টি মানুষের ভাবাবেগের সঙ্গে জড়িত এবং তাই তার প্রতিফলন ঘটছে সোশাল মিডিয়া অথবা ঢাকার শাহবাগ অ্যাভেন্যুতে।
 
কী বলেছিলেন বেগম জিয়া? দলের ডাকা একটি জনসমাবেশে তিনি বলেন,  বর্তমান পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী ‘নীরব দর্শক’ হয়ে থাকতে পারেনা এবং দেশে যদি অশান্তি চলতে থাকে তবে তারা ‘যথাসময়ে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করবে।‘
 
চতুর শব্দ চয়নে রাষ্ট্র সংঘের শান্তি বাহিনীর অংশ হিসেবে বিদেশে বাংলাদেশী সেনাদের ভূমিকার উল্লেখ করে তার সঙ্গে দেশের প্রসঙ্গ টেনে বি এন পি নেত্রী এই কথাই বলতে চেয়েছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সামরিক বাহিনীর একই ভূমিকা নেওয়া উচিৎ।
 
বেগম জিয়ার মন্তব্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বি এন পি’র কার্যনির্বাহী সাধারন সম্পাদক মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য বলেছেন, সংবাদমাধ্যমে তাঁকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
 
“বি এন পি রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করেনা। তিনি (জিয়া) যা বলেছিলেন তা হল এই যে, দেশের সেনা বাহিনী শান্তি রক্ষায়  বিদেশে যে কাজ করে থাকে, দেশের স্বার্থে উপযুক্ত সময়ে সেই কাজই তারা করবে,” আলমগীর জানিয়েছেন।
 
যদিও সব প্রধান সংবাদমাধ্যমেই বেগম জিয়ার মন্তব্যের একই প্রতিবেদন দেখা গেছে, আলমগীরের বক্তব্য, জিয়া আসলে যা বলেছিলেন, তা বিকৃত করা হয়েছে।
 
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবাবুল আলম হানিফ বলেছেন, বিরোধী নেত্রী গণতন্ত্র এবং মানুষের উপর আস্থা হারিয়েছেন বলেই এখন সামরিক হস্তক্ষেপ চাইছেন।
 
প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বহুল প্রচারিত ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, “ বেগম জিয়া সামরিক বাহিনীকে যে মৌন আমন্ত্রন জানিয়েছেন, তাতে আমরা আতঙ্কিত, বিস্মিত এবং কিছুটা বিমূঢ়।“
 
বিরোধী নেত্রীর বক্তব্যের নির্যাস পরিষ্কার—যে সেনা বাহিনীতে তাঁর শক্ত সমর্থন ভিত্তি আছে বলে সুবিদিত, সেই  সামরিক বাহিনীকে তিনি আমন্ত্রনই জানিয়েছেন। খুব স্বাভাবিক ভাবে এই ঘটনায় সরকার, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বুদ্ধিজীবীদের অনেকাংশ ক্রুদ্ধ।  সরকারপক্ষ থেকে বেগম জিয়ার মন্তব্যকে ‘দুষ্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যম বলছে, ‘অগণতান্ত্রিক।‘
 
বলা হচ্ছে, বেগম জিয়ার এই পদক্ষেপ নজীরবিহীন। যদি তা-ও হয়, তবুও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাঁর নৈকট্য এবং সেনা বাহিনী ডাকার ব্যাপারে তাঁর প্রবণতা মোটেই নতুন নয়।
 
প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানের মত একজন সামরিক নায়কের রাজনৈতিক পরিকল্পনার ফসল, বি এন পি সামরিক বাহিনীকে সব সময়েই তোয়াজ করে এসেছে এবং সেখানকার কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সমর্থন ভোগ করে এসেছে।
 
বেগম জিয়া দু’ দফায় মোট দশ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেনীর যাঁরা বিশেষ  সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছিলেন, তাঁরাও তাঁর এব্ং সামরিক বাহিনীর প্রতি সহানুভূতিশীল।
 
অতীতে প্রায় সিকি শতাব্দী ধরে চলা পাকিস্তানি সামরিক সংস্কৃতির প্রভাবের ফলেই দেশে প্রলম্বিত রাজনৈতিক অস্থিরতা মাঝে মাঝেই এমন ধারনার জন্ম দিয়েছে যে, সামরিক বাহিনীই এই সঙ্কটের অবসান ঘটাতে পারবে।
 
 বি এন পি’র জন্ম-ইতিহাসের কারনে বেগম জিয়াকে সামরিক বাহিনী-ঘনিষ্ঠ বলে দেখা হয় ঠিকই, কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, দেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের বেশীরভাগ সদস্যদের হত্যায় সামরিক উর্দিধারীরা লিপ্ত থাকলেও  আওয়

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020