Column

লশকরের গ্রেনেড ও বাংলাদেশের রাজনীতি

লশকরের গ্রেনেড ও বাংলাদেশের রাজনীতি

| | 27 May 2013, 11:33 am
দু\'হাজার চার সালের ২৭শে জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এস এ এম এস কিব্রিয়াকে হত্যা করতে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামি (হুজি) যে গ্রেনেডগুলি ব্যবহার করেছিল, সেগুলি লশকর-এ-তৈবার জন্য ভারতে চালান হতে যাওয়া অস্ত্রভান্ডার থেকে নেওয়া হয়েছিল বলে পরে জানা গেছে। পাকিস্তানে বসে থাকা হুজি কর্তারা বাংলাদেশ হয়ে সাতক্ষিরা বর্ডার পার করে ভারতের কাশমীরে তাঁদের লোকেদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওই অস্ত্রগুলি পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু হুজি নির্দেশিকা পালনে কিছু ভুল করে বসে এবং তার ফলে ঠিক আগের চালানটি বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্সের হাতে ধরা পড়ে যায়। তাই পরের চালানের ৩২টি গ্রেনেড বাংলাদেশেই থেকে যায় এবং পরবর্তীকালে হুজি সেই গ্রেনেডগুলিকে বিভিন্ন বড় হামলায় কাজে লাগিয়েছিল।

 ওই বছরেরই ২১শে অগাস্ট দলের প্রধান এবং সেই সময়কার বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড আক্রমণ হয়।আক্রমণ হয় তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরি এবং আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাইদা জেবুন্নেসা হক এবং সিলেটের মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরানের উপরেও। গ্রেনেড বিষয়ে এই তথ্য কিব্রিয়া হত্যার বেশ কয়েক বছর পরে প্রকাশ পায় এবং তার সাহায্যে ঘটনার আট বছর বাদে চক্রীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। 

 
প্রকাশ পেয়েছে, কাশমীরে কেন্দ্র করা লশকরের নেতা মোজাফফর শাহ ওই গ্রেনেডগুলি পাকিস্তান থেকে জাহাজে চট্টগ্রামে পাঠিয়েছিল। চট্টগ্রামে \'কনসাইনমেন্ট\' নেওয়া এবং তা রাজধানিতে পাঠানোর দায়িত্বে ছিল মজিদ বাট এবং মৌলানা তাজুদ্দিন। \'ইউসুফ বাট\' নাম ব্যবহার করা মজিদ বাট একজন পাকিস্তানি নাগরিক এবং কাশমীর-কেন্দ্রিক জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের একজন উঁচুতলার নেতা। নিজের পরিচয় গোপন রাখতে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে মজিদ ঢাকা সহ বাংলাদেশের নানা জায়গায় শুধু যে দীর্ঘদিন বাস করেছিল তাই নয়, সে পাবনার এক মহিলাকেও বিয়ে করেছিল। ঢাকায় ২০০৯ সালের ৭ই জানুয়ারি মজিদ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়। তদন্ত চলাকালীন প্রকাশ পায় যে, ছদ্মপরিচয়ের আড়ালে আসলে সে একজন জঙ্গি। 
 
অন্যদিকে, মৌলানা তাজুদ্দিনের পরচয়, সে প্রবীণ বি এন পি নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই। দু\'হাজার চার সালের ২১শে অগাস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের  জনসভায় শেখ হাসিনার প্রাণ নাশের উদ্দ্যেশ্যে গ্রেনেড বিস্ফোরণের মামলায় সে এখন বিচারাধীন হয়ে জেলে। লশকরের বাংলাদেশ শাখার প্রধান তাজুদ্দিন ২১শে অগাস্টের ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন করেছিল। 
 
পাকিস্তান-কেন্দ্রিক লশকর, হিজবুল মুজাহিদিন এবং জইশ-এ-মহম্মদ কাশমীরে তাদের কার্যকলাপের ব্যাপারে জোটবদ্ধ। ওদিকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলা-বারুদ এবং বিস্ফোরক ভারতে পাঠানোর ব্যাপারে হুজি স্থানীয় সাহায্যকারীর ভূমিকায় কাজ করে থাকে।দু\'হাজার তিন সালে বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্স অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচারের এই ধরণের একটি চেষ্টা ধরে ফেলে।হাতে নাতে ধরা পড়ে যাবার ভয়ে হুজি তখন ৩২টি গ্রেনেড কাশমীরে আর না পাঠানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশেই রেখে দেয়। মজিদ বাটের সহায়তায়  সেই গ্রেনেডগুলিকে ঢাকায় নিয়ে আসে মৌলানা তাজুদ্দিন  ।   
 
ওই ৩২ টি গ্রেনেডের মধ্যে ন\'টি পাঠানো হয় হুজির সিলেটের ঠিকানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং তখনকার ব্রিটিশ হাই দমিশনারের উপর আক্রমণের উদ্দ্যেশ্য।  গ্রেনেডগুলি যে নেয় এবং তারপরে প্রয়োজন অনুযায়ী বিতরন করে,হুজির সিলেট অঞ্চলের নেতা সেই শরিফ শহিদুল আলম বিপুল,  একটি রেখে দিয়েছিল কিব্রিয়াকে হত্যার জন্য। 
 
বিপুলের নির্দেশমত জনৈক নঈম আহমেদ আরিফ, ওরফে লিমু কিব্রিয়াকে হত্যা করতে ওই গ্রেনেডটি দেয় বদরুল আলম মিজানকে। কিব্রিয়ার উপর আক্রমণের সময় মিজানের সঙ্গে ছিল মিজানুর রহমান মিঠু, মোহাম্মদ আলি এবং মোহাম্মদ বদরুল। দু\'টি দলে ভাগ হয়ে গিয়ে মিজান এবং মোহাম্মদ আলি ছিল মোটর সাইকেকের সওয়ার হয়ে, আর অন্য দু\'জন একটি অটো রিকশা নিয়ে পৌঁছোয় বৈদ্যের বাজারে, যেখানে স্থানীয় এম পি কিব্রিয়া একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 
 
যদিও গ্রেনেডটি ছোঁড়ার ভার ছিল মোহাম্মদ আলির উপর, সে ঘাবড়ে যায় এবং মিজানকে বলে কাজটি করতে। বিস্ফোরকের ব্যাপারে প্রশিক্ষিত মিজান কাজটি সফলভাবেই করে। হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে বলতে গিয়ে তদন্তকারীরা গ্রেপ্তার হওয়া হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, হুজির সর্ব্বোচ্চ নীতি নির্ধারন কমিটি, মজলিশ-এ-সুরার বিচারে আওয়ামী লীগ ইসলাম-বিরোধী এবং ভারতপন্থী একটি রাজনৈতিক দল এবং তাই সেই দলের নেতাদের খতম করা দরকার। 
 
বি এন পি এবং জামাত-এ-ইসলামির অনেক নেতাই হুজির এই পরিকল্পনার কথা জানতেন। তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে তাঁরা চুপ থেকে হুজিকে তাদের প্ল্যানমাফিক কাজ করতে উৎসাহিতই করলেন। তদন্ত চলাকালে এইরকম অনেকের কথা জানা গেলেও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রাক্তন রাষ্ট্র মন্ত্রী লুৎফোজ্জামান বাবরই তাঁদের মধ্যে একমাত্র, যিনি কিব্রিয়া হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। 
 
"এই ঘটনায় বাবর সম্পর্কে এ\' পর্যন্ত আমরা যা জানতে পেরেছি তা হল, তিনি মৌলানা তাজুদ্দিনকে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন," তদন্তকারী সি আই ডি অফিসার র

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020