Column

যুদ্ধ যখন মৌলবাদের সঙ্গে

যুদ্ধ যখন মৌলবাদের সঙ্গে

| | 27 May 2013, 11:31 am
ভিনোদ সায়গল: সাম্প্রতিক কালে উপমহাদেশে যা যা ঘটেছে অথবা এখনও ঘটে চলেছে, তা যদি বাতাসের গতিমুখের নির্ণায়ক হয়, তবে বলতে হয়, শেষ পর্যন্ত সেখানকার মানুষ গোঁড়া ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পথে হাঁটছেন।এই কঠোর অনুশাসনতন্ত্র এতদিন তাঁদের সেই স্বাধীনতা ও আনন্দের স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। প্রথম ঘটনা আফগানিস্তানের পাঞ্জোয়াইতে। ন্যু ইয়র্ক টাইমসে কার্লোত্তা গলের \'ইন তালিবান হার্টল্যান্ড, ভিলেজারস ডিক্লেয়ার এনাফ\' প্রবন্ধ পড়লে মনে হয়, তালিবান দৌরাত্মে অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে তাদের গ্রাম এবং সংলগ্ন অঞ্চলকে তালিবানমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিক থেকে যখন গ্রামবাসীরা পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে দক্ষিন-পশ্চিম কান্দাহারের আঙ্গুর ক্ষেত আর ফল বাগিচা-সমৃদ্ধ এই এলাকা থেকে তালিবান যোদ্ধাদের তাড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই শ\'য়ে শ\'য়ে স্থানীয় বাসিন্দা দলবদ্ধভাবে সরকারকে সমর্থন জানাতে থাকে। প্রায় ১০০ প্রবীণ গ্রামবাসী তালিবানদের ঢুকতে না দেওয়ার শপথ নেন। পাঞ্জোয়াই জেলার এই ঘটনা তালিবান আন্দোলনের ঘাঁটি দক্ষিন আফগানিস্তানে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ। পরিস্থিতি চরমে ওঠে ্যখন তালিবানদের আক্রমণে এবং তাদের ঘটান বোমা বিস্ফোরনে ছ\'মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ অসামরিক নাগরিক নিহত অথবা আহত হলেন। জেলার গভর্নর হাজি ফজেল মোহাম্মদ জানিয়েছেন, তাদের আঙ্গুর ক্ষেত এবং ফলের বাগানের ভিতর মাইন পাতা হয়েছিল, এই কারনে গ্রামবাসীরা তালিবানদের উপর আরও ক্রুদ্ধ ছিলেন।

 এবার আরও পূব দিকে নজর ঘোরালে দেখা যাবে, বাংলাদেশের ঘটনাবলী অত্যন্ত আগ্রহ এবং দুশ্চিন্তা নিয়ে লক্ষ্য করছে ওই অঞ্চলের দেশগুলি এবং সারা পৃথিবী। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের বিচারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যা ঘটে চলেছে, তার শাখা বিস্তার কিন্তু সেই দেশের অভ্যন্তরীন স্থিতিশীলতার পরিপন্থী।উনিশশো একাত্তরে গণহত্যা এবং ব্যাপক ধর্ষণে ্যারা পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল, তাদের মৃত্যুদন্ডের দাবিতে ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ারে মানুষের স্বতস্ফূর্ত বিক্ষোভর পরিবর্তী ক্রিয়ায় ঘটে চলা ঘটনাগুলি অত্যন্ত অশুভদিকে মোড় নিয়েছে। বাংলাদেশের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী,একাত্তর সালে দখলদারি পাক সেনারা ৩০ লক্ষ বাংলাদেশী যোদ্ধা, স্বাধীনতা কর্মী, ছাত্র এবং শিক্ষাবিদকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে দু\' লক্ষ

বাঙ্গালি মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল। অনেকেরই এ\' কথা মনে থাকেনা যে, এইসব অত্যাচার যখন চলেছিল, সেই সময় বাংলাদেশ নামে কোনও দেশ তখনও তৈরি হয়নি। যাঁরা পাশবিকতার শিকার হয়েছিলেন, খুন অথবা ধর্ষিতা হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক। সেই সময় জামাত-এ-ইসলামির
রাজাকাররা তাদের নিজেদের লোকের উপর পাকিস্তানি পাশবিকতা সমর্থন করেছিল।
 
জামাত, যাদের নেতারা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত, তাদের অনুগামীদের একত্রিত করে যে সব বাংলাদেশী একাত্তরের অপরাধীদের প্রাণদন্ডের দাবি করে জনমানসে জায়গা করে  নিয়েছে, তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। এই পালটা শক্তিপ্রদর্শন প্রশাসনের কর্তাদের বিচলিত করে তুলেছে। জামাত এবং তাদের  ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মীদের হিংসাত্মক আন্দোলনের ফলে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গা-সংঘর্ষ এখনও পর্যন্ত কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। এ\' বিষয়ে কখনও কোনও সন্দেহ ছিলনা যে,
জামাত অত্যন্ত সংগঠিত দল এবং তাদের বহু অনুগামী আছে। কিন্তু বর্তমান অশান্ত সময়ে জামাত কর্মী হিসেবে দেশজুড়ে জিহাদিদের প্রকাশ্যে জড়ো হওয়া উগ্রপন্থীরা দেশের কতটা গভীরে অনুপ্রবেশ করেছে, তারই ইঙ্গিত দেয়। এদের সংখ্যা আগে যে রকম মনে করা হত, তার থেকেও বহুগুন বেশি। ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদারপন্থীদের সঙ্গে জিহাদিদের এই সংগ্রামের পরিণতি কী হয়, তা বাংলাদেশের শুভার্থীরা আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন। বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসারকে সমর্থন যোগায় এমন সব দেশ যখন কেবল অপেক্ষা করা আর দেখে যাওয়া ছাড়া কিছু করতে পারছেনা, তখন কিন্তু পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের মত দেশগুলি নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকবে বলে মনে হয়না। বাংলাদেশ মৌলবাদের বাড়বাড়ন্তের জন্য এই দু\'টি দেশই দায়ী। পাকিস্তানের আই এস আই এবং সৌদি আরবের বিপুল অর্থ--এই দুইয়ে মিলে শুধু উপমহাদেশে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ইসলামি
মৌলবাদের প্রসার ঘটিয়েছে।অনেক বছর ধরে অনেক চেষ্টায় যে জায়গাটা তারা তৈরি করেছিল, তা হারাতে এবং বাংলাদেশকে নাগালের বাইরে চলে দিতে তারা চাইবেনা।
 
আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমী দেশগুলি সাধারনত শুধু পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনেই নিবিষ্ট থাকে। কিন্তু  বাংলাদেশ ইসলামিদের কবজায় চলে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনার সময় তারা হয়তো সেই দেশের পরিস্থিতির উপর নজর রাখবে। যদি বাংলাদেশের উদারপন্থীরা সেই দেশের মৌলোবাদীদের কোনঠাসা করতে পারে, তবে তার প্রভাব কিন্তু পূর্বে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া এবং পশ্চিমে ভারত ও পাকিস্তানেও পড়বে। সুতরাং ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হওয়ার এই সংগ্রাম সফল করার দায়িত্ব যেমন বাংলাদেশের মানুষের, তেমনি
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের।
 
সামান্য কয়েকটি দেশকে বাদ দিলে কিন্তু প্রায় সব জায়গাতেই উদার দৃষ্টিভঙ্গী অল্প বিস্তর জায়গা করে নিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পাকিস্তানের মত দেশে, যে দেশে কোনও এক সময় উগ্রপন্থীরাজ কায়েম হয়ে যেতেই পারে, সেখানে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই আরও মুক্ত জীবন, সন্তানদের জন্য আরও বেশি সুযোগ চাননা এমন নয়। আরও উদাহরণ দেওয়া ্যায়ঃমিশরে, যেখানে ইসলামি ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আছে এবং ইসলাম-শাসিত টিউনিসিয়ায় বহু সংখ্যক মানুষ প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন। একনায়ক শাসনের বিষ ফল ভোগ করার পরে তাঁরা সময়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ন রক্ষণশীলতায় জারিত আরও একটি দমনমূলক শাসন
চাইছেননা।তাঁরা যদি সত্যিই নিজেদের জন্য আরও উদার শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেন, তবে তার সদর্থক প্রভাব পশ্চিম এশিয়ার &agr

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020