Column

আওয়ামী লীগঃ যাত্রার ৬৯ বছর

আওয়ামী লীগঃ যাত্রার ৬৯ বছর

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 21 Aug 2018, 05:44 am
২৩শে জুন, ২০১৮ তে আওয়ামী লীগ তাদের ৬৯তম বার্ষিকী পালন করল। শুরুতে দলের নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে, ১৯৫৫ সালে, 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে পার্টির নতুন নাম হয় আওয়ামী লীগ এবং এইভাবেই দেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পথে যাত্রা শুরু হয় তাদের।

১৯৪৯ সালে দলের গঠনের সময় থেকে  বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ-ভাষাভিত্তিক রাজনীতির সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে এসেছে আওয়ামি লিগ। অনেক সীমাবদ্ধতা এবং ত্রুটি সত্ত্বেও বাংলাদেশকে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক বিশ্বাসযোগ্যতাসম্পন্ন, তুলনামূলকভাবে উদার মুসলমানপ্রধান একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে অবদান রেখেছে এই দল।

 

তবে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বড় সময় জুড়ে এই দলটিকে তথাকথিত ইসলামি জাতীয়তাবাদী এবং পাকিস্তানপন্থী শক্তিগুলির হিংস্র চ্যালঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই শক্তিগুলির প্রতিনিধি মূলত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) এবং জামাত-এ-ইসলামি।  এই শক্তিগুলি সবসময়েই ধর্মকে একটি সুবিধাজনক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে এবং তাই তারা একটি  জোরালো ইসলামি জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের পক্ষে সওয়াল করে।  মানুষের মধ্যে মনস্তাত্বিক নিরাপত্তাহীনতা জাগিয়ে তুলতে ভারতের নেতিবাচক চিত্র আঁকে এরা।

 

দেশে এখনও আওয়ামী লীগেরই বৃহত্তম সমর্থনভিত্তি রয়েছে, যদিও সামরিক বাহিনী, সংবাদমাধ্যম এবং ব্যবসাক্ষেত্রের মত বৃহৎ ক্ষমতাকেন্দ্রিক পরিকাঠামোগুলিতে এদের উপস্থিতি সীমাবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার, বাংলাদেশ সৃষ্টির দাবিদার এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিভূমির প্রতিষ্ঠাতা এই  দলটিকে একটি অনন্য প্রতীকী পরিচিতি এনে দিয়েছে।

 

অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে। আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সব থেকে ন্যায়নিষ্ঠ নির্বাচন বলে বর্ননা করা হয়েছিল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ  উন্নয়নমূলক বিষয়গুলিতে মনোযোগ দেয় এবং দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে 'চার্টার ফর চেঞ্জ' শিরোনামে সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রতিশ্রুতি দেয়।

 

ডিসেম্বর, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল জয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীত্বের পদে আসীন হওয়ার পর তিনি দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করা  একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন।

 

তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন, কিন্তু মৌলবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের শিকড় ইতিমধ্যে এতটাই গভীরে গিয়েছে যে, শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারকে বিপুল বাধা এবং চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে এবং কোনও কার্যকরী ফল পেতে হলে যথেষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হবে। দু'হাজার ন' সাল থেকে পাঁচ বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে সরকার চালানোর পর মানুষের বিশ্বাস, নিজের কর্মক্ষমতা এবং 'ভিশন ২০২১' পরিকল্পনার গ্রহনযোগ্যতার জোরে ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা আবারও পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় ফেরেন।

 

এখন আওয়ামি লিগ-নেতৃত্বাধীন সরকারের  আশু লক্ষ্য তাদের রাজনৈতিক জয়কে সুসংহত করা। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা  দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অতি সচেতন। দলের মধ্যে এ কথা তিনি বার বার বলেছেন যে, দূর্নীতি দমন এবং মানুষের  আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থতা দলের ভাগ্যে বিএনপি-র মতই দুর্দশা নিয়ে আসতে পারে।

 

সাতচল্লিশ বছর আগে স্বাধীনতা ছিল জাতির স্বপ্ন  জাতিকে সেই স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিল যে দল, তার নাম আওয়ামী লীগ। জাতির এখন অন্য স্বপ্ন- বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের রূপে দেখা। এই লক্ষ্যে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই আওয়ামী লীগই। দলের লক্ষ্য অর্থনীতির উন্নতি ঘটানো, যাতে করে জি ডি পি-র বৃদ্ধি ঘটে ৭.৬৫ শতাংশ হারে, মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬১০ ডলারে এবং দারিদ্র্য হার কমে অর্ধেক হয়ে ২২ শতাংশ হয়। জুলাই ২০১৭ থেকে মে, ২০১৮-র মধ্যে অনাবাসী বাংলাদেশীরা ঘরে পাঠিয়েছেন ১৩.৫৭ বিলিয়ন ডলার।

 

আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ে তোলার। এই লক্ষ্যে পৌঁছোতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অক্লান্তভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। চেষ্টা চলছে যাতে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা প্রত্যেকটি নাগরিকের অধিগত হয়। স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পরে আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল গড়েছে। যথাযথ আইনি  প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে এ পর্যন্ত ছ' জনের ফাঁসি হয়েছে।

 

আওয়ামী লীগই পৃথিবীর একমাত্র দল যারা জাতির ভাষা, স্বাধীনতা এবং পতাকার জন্য লড়াই করেছে। উনিশশো একাত্তরে যখন এই দল দেশকে স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদান করে, সেই সময় তারা ছিল আশার প্রতীক। তার সুদীর্ঘ যাত্রাপথের বছরগুলিতে এই দল সবসময় সমস্ত সংগ্রামের পুরোভাগে থেকেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনও, যা অবশেষে স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে এগিয়ে যায় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম নেওয়ার পিছনে কাজ করে। স্বাধীনতার কয়েক দশক পরে, বর্তমানে, সেই আওয়ামী লীগ এখনও দেশে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মানবিকতার সব থেকে বড় পূজারী।

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020