Column
জামাতকে ত্যাগ করবেনা বি এন পি
যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত, যাদের বেশ কিছু নেতা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার জন্য ফাঁসিতে ঝুলেছে, তারা বি এন পি-র নেতৃত্বাধীন ২৪ দলের জোটের অন্যতম বৃহৎ শরিক।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের একটি প্রস্তাবে জঙ্গি কাজকর্ম নির্মুল করতে বাংলাদেশকে জামাত-এ-ইসলামির উপস্থিতিকে দমন করার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে। আমেরিকার কংগ্রেস সদস্য জিম ব্যাংকস তাঁর ওয়েবসাইটে বলেছেন যে, ২৮শে ফেব্রুয়ারি তিনি এই প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন। এর শিরোনাম " এক্সপ্রেসিং কনসার্ন অ্যাবাউট দ্য থ্রেট পোজড টু ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস বাই থিওক্র্যাটিক গ্রুপ্স অপারেটিং ইন সাউথ এশিয়া।" প্রস্তাবটি কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বি এন পি-র শীর্ষ নেতারা বলছেন, দেশের ভিতর এবং বাইরে চাপ থাকার দরুন দল এখন জামাতের সংগে "কৌশলগত দূরত্ব" (স্ট্র্যাটেজিক ডিসট্যান্স) বজায় রাখছে, কিন্তু তাদের সংগে সম্পর্কচ্ছেদ চায়না। পশ্চিমি দেশ এবং সংস্থাগুলি কিন্তু জামাতকে একটি সন্ত্রাসবাদী দল অথবা টেররিস্ট গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর কারণ আল কায়দা এবং তালিবানের মত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সংগে এদের যোগাযোগ।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনা পার্লামেন্টে বলেছেন, আদালতে এ বিষয়ে মামলা চলতে থাকার দরুন জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারে এই মূহুর্তে সরকারের কিছু করনীয় নেই। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন যে, যখনই আদালত এ বিষয়ে সরকারের পক্ষে তার রায় দেবে, তখনই জামাতকে নিষিদ্ধ করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া শর্তগুলি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় জামাত ইতিমধ্যেই তার রেজিস্ট্রেশন হারিয়েছে, যা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য যে কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে আবিশ্যিক, তিনি বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটি খুব দুঃখজনক ঘটনা যে,
গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পেরে জামাতের সদস্যরা বি এন পি-র ধানের গোছা চিহ্নের আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বি এন পি-র স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মাহ্বাবুর রহমান মন্তব্য করেছেন, "জামাতের সংগে বি এন পি-র সম্পর্ককে আমি কখনওই সমর্থন করিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জামাতের যে ভূমিকা ছিল, তার জন্য আমি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার জন্য আমি সব সময়েই দলীয় নেতৃত্বকে বলেছি।"
বি এন পি নেতাদের একাংশ বলেছেন, দল তার প্রধান মিত্র জামাতের সংগে সম্পর্ক ছেদ করতে চায়না। এর কারণ যে হেতু দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জামাতকে বি এন পি-র পক্ষপুটে নিয়ে এসেছিলেন, সেই হেতু দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া চান এদের সংগে সম্পর্ক বজায় রাখতে।
আমেরিকান কংগ্রেসে যে প্রস্তাবটি নেওয়া হয়েছে, তাতে বলা আছেঃ যেখানে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র স্থাপন করে, যেখানে ১৩০ মিলিয়ন মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান এবং নিরীশ্বরবাদীরা বাস করে;
যেখানে এই স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছিল আনুমানিক তিরিশ লক্ষ মৃত্যু, এক লক্ষ মানুষের ঘর ছাড়া এবং দু'লক্ষ নারীর ধর্ষনের মূল্যে এবং যার অনেকটাই ঘটেছিল জামাতের নেতৃত্বাধীন ইসলামি জঙ্গিদের হাতে;
যেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং আহমেদিয়া মুসলিম সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর জামাত-এ-ইসলামি এবং তার সহযোগী ইসলামি ছাত্র শিবির আক্রমণ নামিয়ে এনেছে , যার ফলে শত শত গৃহ এবং দোকান ধ্বংস অথবা লুণ্ঠিত হয়েছে এবং মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে;
যেখানে জামাত-এ-ইসলামি সদস্যরা আল কায়দা এবং তালিবানের সংগে যুক্ত; যেখানে জামাত-এ- ইসলামি এবং তার মদতপুষ্ট ইশ্বরতন্ত্র সমর্থক উগ্রপন্থী দলগুলি দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়িত্ব এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের প্রতি আশু বিপদ, সেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চলমান হিংসার থেকে এক গভীর বিপদের মধ্যে আছেন;
যেখানে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টিকে দ্বিধাহীনভাবে জামাত-এ-ইসলামির সংগে দূরত্ব বজায় রাখতে আহ্বান করেছে;
যেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর পুনঃ পুনঃ আক্রমণ, ধর্মীয় উগ্রপন্থার সম্প্রসারণ এবং জামাত-এ-ইসলামি এবং তার মদতপুষ্ট চরমপন্থি দলগুলি কৃত ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা বাংলাদেশে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক এবং স্থাণীক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করছে;
প্রস্তাবটিতে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানকে বলা হয়েছে, তারা যেন ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক স্থায়িত্ব বিপন্ন করার থেকে জামাত-এ-ইসলামি এবং তার মদতপুষ্ট শক্তিগুলিক বিরত করে তাদের ছিন্নভিন্ন করে। প্রস্তাবটি বি এন পি এবং দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও আহ্বান জানিয়েছে জামাতের থেকে দ্বিধাহীন দূরত্ব বজায় রাখতে।
১১তম সংসদীয় নির্বাচনে বিধ্বস্ত হওয়ার পরে বিশাল সংখ্যক বি এন পি নেতা এবং কর্মী দাবি করেছেন যে ঘরে এবং বাইরে বি এন পি-র ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার কারণে জামাতের সংগে সম্পর্ক ছিন্ন করা হোক। কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের একাংশ তা চান না, কারণ তাঁরা মনে করেন সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় রাস্তায় নেমে হিংসাশ্রয়ী হবার ক্ষমতা রয়েছে এই ইসলামি দলটির কর্মীদের। এ ছাড়া জামাতের নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংকও রয়েছে, যা ভবিষ্যতে বি এন পি কে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করবে। সর্বোপরি, জামাতের সাহায্য ছাড়া বি এন পি রাস্তায় নেমে আন্দোলন এবং নির্বাচনে ভালো করতে পারবেনা। "দলের এই সংকটময় সময়ে বি এন পি জামাতকে ছাড়তে পারবেনা, কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন করার মত যথেষ্ট সাংগঠনিক শক্তি এই মূহুর্তে দলের নেই।"
জামাতকে ত্যাগ না করার ইংগিত দিয়ে বি এন পি-র সেক্রেটারি জেনারেল মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগির সম্প্রতি বলেছেন, " আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, যে যা-ই ভাবুক না কেন, ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই। ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বি এন পি জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট এবং ২০ পার্টির মধ্যে সেতু রচনা করেছে। এখনও প্রয়োজন আছে একে বজায় রাখার।"