Column

বি এন পি-র নেতৃত্বের সংকট

বি এন পি-র নেতৃত্বের সংকট

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 21 Jul 2018, 06:17 am
বি এন পি-র চেয়ারপার্সন এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট দূর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকার একটি আদালত পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ তম অনুচ্ছেদ  অনুযায়ী, কোনও  ব্যক্তি যদি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্তত দু'বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তবে তিনি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে কোনও নির্বাচপনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

 

এ বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবাসে গেছেন এবং দেশের পরবর্তী নির্বাচন হতে চলেছে ডিসেম্বরের শেষের দিকে। নিম্ন আদালতের দেওয়া এই শাস্তির বিধান যদি উচ্চ আদালতেও বজায় থাকে, তাহলে খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

 

তাঁর বিদেশে পালিয়ে থাকা পুত্র তারিক রহমান, যাঁকে খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারের পরে বি এন পি-র অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান করা হয়েছে, তিনিও এই অনাথ তহবিল তছরুপের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এর জন্য তাঁর দশ বছরের কারাদণ্ড এবং ২.১০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। তাঁকে বি এন পি-র অ্যাক্টিং প্রেসিডেন্ট করার আগে দলীয় সংবিধানে সংশোধনী এনে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, যদি কেউ ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্তও হন, তাহলেও তিনি যে কোনও দলীয় পদে থাকতে পারবেন।

 

দূর্নীতি মামলায় দোষী প্রমাণিত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন, তাহলে ইতিমধ্যেই ছত্রভঙ্গ বি এন পি নিদারুণ নেতৃত্ব সংকটে পড়বে। তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে তারিক রহমানকে দ্রুত তুলে আনার যে পরিকল্পনা খালেদা জিয়া করেছিলেন, তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মা এবং পুত্র দু'জনেই এখন একই সংকটে। উভয়েই দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বি এন পি- হাতে এখন নির্ভরযোগ্য এমন কোনও নেতা অথবা নেতৃ নেই, যিনি দলকে এই নির্বাচনে চালনা করতে পারেন। দল ২০১৫ সালে যে হিংসাত্মক কাজকর্ম করেছিল, যাতে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন, তাতে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেক বি এন পি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধেই ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

তারিক রহমানকে বি এন পি-র অ্যাক্টিং প্রেসিডেন্ট করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে এটা পরিষ্কার যে, খালেদা জিয়া চান না  দলের কোনও বর্ষীয়ান নেতা শীর্ষ পদে আসীন হোন, যদিও ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে এই তারিকেরই নির্দেশে রাস্তায় নেমে দলের হিংসাত্মক প্রতিবাদের রাজনীতি দলেরই বিরুদ্ধে গিয়েছে এবং তার নির্বাচনী ভবিষ্যতের ক্ষতি করেছে।

 

এখন থেকে এই তারিক রহমানই লন্ডনে বসে থেকে দলের কাজকর্ম দেখাশোনা করবেন। এই লন্ডনে তিনি ২০০৮ সালে থেকে আস্তানা গেড়ে বসে আছেন। বি এন পি-র তৃনমূল স্তরের কর্মী অথবা নেতাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই তাঁর নেই।

 

বেশ অনেক দিন ধরেই বি এন পি বিভিন্ন স্তরের জনগণের  সমর্থন এবং সহানুভূতি হারিয়েছে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত বি এন পি নিয়েছিল, তাতে অনেক দলীয় নেতাই অখুশি। এর উপরে, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে রাস্তায় নেমে যে চরম হিংসাত্মক প্রতিবাদের পথ নিয়েছিল দল, তা বহু মানুষের জীবন ও জীবিকার বিরাট ক্ষতি করেছিল। বি এন পি-র শাসন কালের মধ্যে খালেদা জিয়া এবং তাঁর দুই পুত্র বিপুল পরিমাণের অবৈধ সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন, যা ১২টি দেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। খালেদা জিয়ার এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার করা এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং আই এস আই -এর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগও আছে। এই সমস্ত ব্যাপারগুলিই দলের সমর্থনভিত্তি এবং জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দিয়েছে।

 

খবরে বলা হচ্ছে, বি এন পি ভীষণভাবে চাইছে খালেদা মুক্তি পান এবং দল সামনের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এ ব্যাপারটি জানা যে, তারিক রহমান ব্রিটিশ হাউজ অফ লর্ডসের সদস্য অ্যালেক্স চার্লস কার্লাইল  কিউ সি-কে দলের হয়ে  বলার জন্য দিল্লীতে পাঠাতে চাইছেন। এই ব্রিটিশ এম পি বি এন পি-র লিগাল সেলের সদস্য।  আগামী নির্বাচনের আগে যাতে খালেদা জিয়া মুক্তি পান, সে ব্যাপারে জনমত তৈরির উদ্দেশ্যে লর্ড কার্লাইল দিল্লি আসছেন। অবশ্য তাঁর আসার আগেই ভারতে আসবেন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর এনার্জি অ্যাডভাইসার ডঃ তৌফিক-ইলাহি চৌধুরী।

 

তারিক রহমানের নির্দেশানুযায়ী বি এন পি সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ভারতের সাহায্য চাইছে। তিন জন বি এন পি নেতা ৭ই জুন তারিখে ভারতের বিদেশ উপমন্ত্রী এম জে আকবরের দেখা করে আগামী নির্বাচনে ভারত যাতে বি এন পি-কে সাহায্য করে তার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনও রকম হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নেই। এ ব্যাপারে ভারতে সরকার পরিষ্কার অবস্থান সত্ত্বেও বি এন পি নেতারা এবং দলের   লবির লোকজন মরীয়া প্রচেষ্টায় ভারতে আসছেন প্রভাবশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য। তিন বি এন পি নেতার ভারতে আসার আগে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি ওবাইদুল কাদের। 

 

বি এন পি ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক বেশি মূল্য তাদের দিতে হয়েছে। এর পরে আবার দ্বিতীয়বার নির্বাচন বয়কট করা যায়না। তা যদি তারা করে, তাহলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নাম রেজিস্টার থেকে বাদ পড়ার ঝুঁকি থাকবে। তেমন হলে দলই ভেঙ্গে যাবে তাদের সংগঠনের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়বে।

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020