Column

ঈশ্বর-অবমাননা বিরোধী আইনের দাবি ও বাংলাদেশ

ঈশ্বর-অবমাননা বিরোধী আইনের দাবি ও বাংলাদেশ

| | 27 May 2013, 11:40 am
ঈশ্বর- অবমাননা(ব্লাসফেমি) বিরোধী আইন প্রণয়ন এবং ইসলাম ও হজরত মহম্মদের সমালোচনার দায়ে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের মৃত্যুদন্ডের দাবি নিয়ে সম্প্রতি লক্ষ মানুষের মিছিল দেখল ঢাকা শহর। ইসলামের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজেদের দাবি করা এইসব আন্দোলনকারীদের রাগের কারন, তারা মনে করে তাদের বিশ্বাসে আঘাত করা হয়েছে। তাই শাহবাগ স্কোয়ারের যুব আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, \'নাস্তিক\' ব্লগার আহমেদ রাজীবকে খুন হতে হয়েছিলে এদেরই হাতে। ধর্মনিরপেক্ষতার হয়ে কাজ করার জন্য রাজীবকে কুপিয়ে, গলা কেটে হত্যা করে ইসলামপন্থীরা। নিজেদের কাছে যা অপ্রিয়, শুধুমাত্র তাই লেখার জন্য যারা একজন নিরীহ মানুষের গলা কাটে, তারাই এখন ঈশ্বর-অবমাননা আইন বানাতে চাইছে!

 যখন ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগারদের নেতৃত্বে শাহবাগের আন্দোলন শুরু হয়, তখন শেখ হাসিনার সরকার যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে যাতে বাংলাদেশ জন্মগ্রহন না করতে পারে, সেই উদ্দেশ্য  উনিশশো একাত্তর সালে যারা হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন জঘন্যতম মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিল, তাদের মৃত্যুদন্ডের দাবিতে শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন। শেখ হাসিনা খুশি হয়েছিলেন এই ভেবে, যে এই আন্দোলন স্বাধীনতাপন্থী শক্তিগুলিকে ঐকবদ্ধ করবে এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ এতে উজ্জ্বল হবে। 

 
প্রথম দিকে, বি এন পি সতর্কতার সঙ্গে শাহবাগ আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু তারা একইসাথে সরকার যেন যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের দাবি থেকে কোনও রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা না করে, এই বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি দেখালে তা যে বি এন পির জোট সঙ্গী জামাত-এ-ইসলামিকে বিপদে ফেলবে, এই সার সত্য বুঝে অনতিবিলম্বেই বি এন পির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাঁর অবস্থান বদল করে ফেললেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি যে প্রচার চালাতে লাগলেন, তার উদ্দেশ্য ছিল জনগনের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে, ব্লগাররা প্রায় সবাই নাস্তিক এবং ইসলাম বিরোধী এবং সেই কারনে মোল্লাদের চোখে তারা \'মুর্তাদ\' অথবা ধর্ম থেকে বিতাড়িত। 
 
এই নোংরা প্রচারে কাজ হল। শেখ হাসিনা এবং তাঁর সহযোগীরা প্রমাদ গনলেন। কেননা আর যাই হোক, নির্বাচনে তাঁর দলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাননা আওয়ামী লীগ নেত্রী। সংসদীয় নির্বাচনের এক বছরও বাকী নেই। এই অবস্থায় ধর্মীয় তাস খেলে ইসলাম বিরোধী \'মূর্তাদ\'দের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে  আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করছেন খালেদা জিয়া! আর এর ফলেই \'নাস্তিক\' ব্লগারদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠলেন কঠোর। অতি শীঘ্রই বেশ কিছু ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হল এবং ধর্মীয় আবেগে আঘাত করার দায়ে অভিযুক্ত করা হল তাঁদের। তবে যে সব ব্লগার আবার হিন্দু অথবা খ্রিস্টান ধর্মের বিরুদ্ধে লিখেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলনা।  
 
আসিফ মহিউদ্দিন এইরকম একজন গ্রেপ্তার হওয়া ব্লগার, গোঁড়া ইসলামিদের ছুরির আঘাত নিয়ে যে এখন দেখার অপেক্ষায় আছে তার আক্রমণকারীদের দাবি সরকার মেনে নেয় কিনা। উগ্র ইসলামিদের দুনিয়ায় তাদের পছন্দ নয় এমন কোনও কথা বলা মানেই শয়তানি। তাই একজন শয়তানকে ছুরি মারা তাদের পবিত্র কর্তব্য।গ্রেপ্তার হওয়া এইরকম আরও দু\'জন ব্লগার--সুব্রত অধিকারি শুভ এবং রাসেল পারভেজও দিন গুনছে তাদের ভাগ্যের পরিণতি দেখার অপেক্ষায়। 
 
হেফাজত-এ-ইসলাম নামে অপেক্ষাকৃত নবীন একটি সংগঠন ঈশ্বর অবমাননা বিরোধী আইন প্রণয়ন সহ তাদের ১৩-দফা দাবি নিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য অল্প কিছুদিন আগেই ঢাকার রাস্তায় ব্যাপক সন্ত্রাস ও তান্ডব চালিয়েছে। এই হিংসাত্মক ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮ জন। আর ও দিকে তান্ডবকারী ইসলামিদের উপর নিরাপত্তাবাহিনীর \'অত্যাচারের\' প্রতিবাদে সারা দেশে দু\'দিনের হরতাল ডেকে দিল বি এন পি।হেফাজতের কালচারাল সেক্রেটারি আশরাফ আলি নিজামপুরি হুমকি দিয়ে রেখেছেন যে তাঁদের দাবি না মানা হলে এবং সংগঠনের গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের অনতিবিলম্বে মুক্তি না দিলে আরও আক্রমনাত্মক কর্মসূচী নেওয়া হবে। 
 
এদের প্রস্তাবিত আইনে  ইসলামের অবমাননাকারীদের \'দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি\', এমনকি মৃত্যুদন্ডের ব্যবস্থা রাখার দাবি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকটি তালিবানি দাবি তোলা হয়েছে। যেমন, বাংলাদেশের মহিলাদের জন্য উন্নয়নমূলক কর্মসূচী বাতিল করতে হবে, প্রকাশ্যে পুরুষ ও মহিলাদের মেলামেশা নিষিদ্ধ করতে হবে, \'নির্লজ্জ ব্যবহার এবং পরিধান চলবেনা। একই সাথে, সংস্কারমুখী বলে পরিচিত আহমেদিয়া সম্প্রদায়কে \'অমুসলমান\' বলে ঘোষণা করতে হবে।তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈশ্বর-অবমাননা বিরোধী আইনের দাবি  খারিজ করে দিয়েছেন।  
 
শাসক ও বিরোধী, উভয় শিবিরের রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা যদি মৌলবাদীদের এই হুজুগে দাবির কাছে নতি স্বীকার করেন, তবে সেই মধ্য যুগে পিছু হাঁটা এবং একটি উগ্র রাষ্ট্রে পরিনত হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনও উপায় নেই।

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020