Column

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়েছিল মুজিব-ঘাতকদের

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়েছিল মুজিব-ঘাতকদের

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 30 Aug 2018, 07:48 am
বাংলাদেশের প্রথম সামরিক একনায়ক তথা বিএনপি-র প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় দফার শাসনকাল(২০০১-০৬) পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীরা বিভিন্ন রকমের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এসেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা করা হয়েছিল শেখ মুজিবকে।

  যাতে এই হত্যাকারীদের অভিযুক্ত করে বিচার না করা যায়, তার জন্য আইনের আড়ালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছিল দেশে। এর পরের ঘটনাবলী মাফিয়া রাজত্বে যা হয়ে থাকে, তার থেকে কিছুমাত্র কম নয়।

 

জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনকালে, ১৯৭৬ সালে, শেখ মুজিবের হত্যায় জড়িত ১২ জন সামরিক অফিসারকে কূটনৈতিক দায়িত্ব দিয়ে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৮০ সালে এদের সবাইকেই ফরেন সার্ভিস ক্যাডারে নিয়ে নেওয়া হয়।

 

জিয়াউর রহমান থেকে তাঁর পত্নী খালেদা জিয়ার শাসনকালের মধ্যে লেঃ কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লেঃ কর্নেল এ এম রশিদ চৌধুরি, লেঃ কর্নেল এস এইচ এম বি নূর চৌধুরি, লেঃ কর্নেল আজিজ পাশা এবং ক্যাপ্টেন আবদুল মজেদের মত  অনেক মুজিব হত্যাকারীই বিদেশে কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন। লেঃ কর্নেল শরিফুল হক ডালিম হং কং, চিন এবং কেনিয়াতে কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন, লেঃ কর্নেল আজিজ পাশা ছিলেন আলজেরিয়া এবং জিম্বাবোয়েতে, মেজর বজলুল হুদা পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডে, লেঃ কর্নেল এ এম রশিদ চৌধুরি সৌদি আরব এবং জাপানে, এবং লেঃ কর্নেল এস এইচ এম বি নূর চৌধুরি পাকিস্তানে।

 

পূর্বসুরীর এই  কৌশল নিয়ে চলেছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমানের পর ক্ষমতায় আসা স্বৈরাচারী শাসক  জেনারেল এরশাদও।  তার পরে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার তথাকথিত গণতান্ত্রিক শাসনকাল, যা প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের সামরিকই শাসনেরই সম্প্রসারিত রূপ ছিল, সেই সময়েও একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। 

 

স্বঘোষিত মুজিব হত্যাকারী লেঃ কর্নেল রশিদের ফ্রিডম পার্টিকে যে শুধু ১৯৯৬ সালের সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়েছিল তা নয়, নানা রকমের অসুদপায়ে এই ব্যক্তিকে নির্বাচনে জিতিয়েও দেওয়া হয়েছিল। এর আগে, জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের আমলে মুজিব হত্যাকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং এদের অনেকেই আবার রাজনীতিতেও প্রবেশ করেছিলেন।

 

মুজিব হত্যাকারীরা কোথায় আছে, তা চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য ১৯৯৭ সালে তৎকালীন  আওয়ামি লিগ সরকার ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়ে বিদেশে গা ঢাকা দিয়ে থাকা ১৫ জন মুজিব হত্যাকারীর নামে রেড কর্নার নোটিশ জারি করেছিল আন্তর্জাতিক পুলিশ ইন্টারপোল। পরবর্তীকালে এদের মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁরা হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা এবং মহিউদ্দিন আহমেদ।

 

কিন্তু মুজিব হত্যাকারীদের বিচারের যে প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল,  খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তা ধাক্কা খায়। এই সময় এই খুনিদের নাম ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।  যে প্রক্রিয়া ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকার শুরু করে, তাকে আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ২০০১ সালে ক্ষমতার রাশ হাতে তুলে নেওয়ার পর খালেদা জিয়া  ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশ পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করেননি এবং ফলতঃ তা তামাদি হয়ে যায়।

 

  শুধু তাই নয়, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা আওয়ামি লিগ সরকার  বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকা মুজিব হত্যাকারীদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য বিদেশ মন্ত্রকে যে বিশেষ সেল খুলেছিল, সেটিও বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে আবা ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা আবার সেই সেল চালু করেন।

 

খুনে মেজরেরা (এই নামেই মুজিব হত্যাকারীদের ডাকা হত) সমস্তরকমের সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে থাকলেন, ফরেন পোস্টিং এবং ফরেন সার্ভিস ক্যাডার অফিসার পদে প্রোমোশনও পেয়ে গেলেন।  বিএনপি-র দ্বিতীয় দফার শাসনকালে, (২০০১-০৬) এদের এক জন, মেজর (অবঃ) খয়রুজ্জামানকে পুনর্বাসিত করে এমন কি  বিদেশ মন্ত্রকের অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারিও বানিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে, আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকার সময় ,১৯৯৬ সালে এই ব্যক্তির চাকরি চলে গিয়েছিল।

 

আর এক মুজিব হত্যাকারী  আজিজ পাশা। আওয়ামি লিগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ১৯৯৬ সালে এই ব্যক্তির চাকরি যায়। তাকে পরবর্তী বি এন পি সরকার সমস্ত অবসরোত্ত সুবিধা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অবসর গ্রহণ করায়। পাশা অবশ্য ২০০২ সালে জিম্বাবোয়েতে  মারা যান।

 

১৯৮৮ সালের বিতর্কিত সংসদীয় নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টিকে অংশ নিতে দেওয়া হয় এবং মুজিব হত্যাকারী মেজর বজলুল হুদাকে  সুযোগ করে দেওয়া হয় সংসদে এম পি হিসেবে বসার। একই ব্যাপারের পুনরাবৃত্তি দেখা যায় যখন ১৯৯৬ সালের সংসদীয় নির্বাচনের পর  আর এক মুজিব হত্যাকারী এবং ফ্রিডম পার্টির নেতা লেঃ কর্নেল রশিদকে  এক জন  সদস্য হিসেবে  সংসদে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয় খালেদা জিয়া সরকার।  

 

বহু বছর পার হয়ে যাবার পর অবশেষে মুজিব হত্যাকারীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেন শেখ হাসিনাই।  ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করা সহ প্রয়োজনীয় সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালের ২৭শে জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের রায় মান্য করে পাঁচ মুজিব হত্যাকারীর প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হয়। এঁরা ছিলেন এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, ব বজলুল হুদা, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, ফারুক রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমেদ। বাকি ছ'জন মুজিব হত্যাকারী এখনও পলাতক। তবে যাতে এদের সকলেরই বিচার সম্পন্ন করে দেশের কলঙ্কমোচন করা যায়, তার জন্য সর্বোত চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020