Column

জাতীয় শোক দিবস

জাতীয় শোক দিবস

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 04 Sep 2018, 09:14 am
বাংলাদেশে অগাস্ট মাস শোকের মাস। উনিশশো পঁচাত্তর সালের ১৫ অগাস্টের অভিশপ্ত রাতে এক দল সেনা অফিসার রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমান এবং দু'জন বাদে তাঁর পরিবারের সবাইকে বর্বর ভাবে হত্যা করেছিল।

 এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানেরই বিশ্বস্ত সহকারী খোন্দকার মুস্তাক আহমেদের সঙ্গে যোগসাজশে । শেখ মুজিবের দুই কন্যা-শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সেই সময় লন্ডনে ছিলেন। তাঁদের দেশে ফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।  বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী, পুত্র, ভাই, ভাইপো এবং শ্যালক সহ পরিবারের ১৬ জন নিহত হন এই হত্যালীলায়।   বাংলাদেশের মানুষ হারান তাঁদের বিগ্রহস্বরূপ নেতাকে, যাঁর কাছে স্বাধীন জাতি হিসেবে ঋণবদ্ধ ছিলেন তাঁরা। পাকিস্তানের জেলে বন্দী থাকার সময়েও বাঙ্গালি জনগণের উপর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রভাব এমনই ছিল যে তা বর্বর পাকিস্তানের মুঠো থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে তাঁদের ক্রমাগত অনুপ্ররনা দিয়ে গেছে এবং পথ দেখিয়েছে। যে পরিচয় নিয়ে  আজকের বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে, তার ভিত্তি তৈরির পিছনে ছিল শেখ মুজিবের দর্শন।     

 

পাকিস্তানপন্থী ইসলামি শক্তিগুলি, যাদের কাছে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কখনওই গ্রহণযোগ্য হয়নি, তারা শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল ব্যক্তিত্ব এবং বাঙালিদের মধ্যে তাঁর প্রশ্নাতীত নেতৃত্বকে সহ্য করতে পারেনি। অবশ্য  শেখ মুজিবুর রহমানকে  হত্যা করে বাংলাদেশের মানুষকে তাদের শক্তি এবং উদ্দীপনার উৎস থেকে বঞ্চিত করার অশুভ চক্রান্ত রূপায়নে তারা  সফল হয়েছিল।

 

এই ইসলামি শক্তিগুলি, যারা আগে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম নেওয়া রুখতে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একটি পাকিস্তান-বাংলাদেশ কনফেডারেশন তৈরি করা। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের পুনর্মিলনের যারা বিরোধী, তাদের খতম করে দিতে চেয়েছিল এরা। এদের পথে শেখ মুজিবুর রহমানকে  সব চেয়ে কঠিন প্রতিবন্ধক বলে মনে করা হত এবং তাই তাঁকে শেষ করে দেওয়া হয়। এর পর চার জন জাতীয় নেতা, যাঁরা   শেখ মুজিবুরের সব থেকে বিশ্বাসভাজন ছিলেন, তাঁদেরও ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের ভিতরে হত্যা করা হয়। যে হেতু সেই সময় আর  নবজাত রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে দেওয়া সম্ভব ছিলনা এবং তেমন কিছু করলে জনগণও তা মেনে নিতেন না, সেই হেতু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করাই এদের সামনে একমাত্র পথ ছিল।

 

সেই ঘৃণ্য ঘটনার একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ মুজিবুরের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লিগ ক্ষমতায় আসে এবং ১৫ই অগাস্টের দিনটিকে তারা জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু অদভুত ব্যাপার, আওয়ামী লিগ ক্ষমতা থেকে চলে গিয়ে বি এন পি - জামাত সরকার আসতেই এই দিনটি পালন করা বন্ধ করে দেওয়া হল।

 

শুধু তাই নয়, দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীতের দায়িত্ব নিয়ে খালেদা জিয়া ঘোষণা করলেন যে ১৫ই অগাস্ট না কি তাঁর জন্মদিন। তাঁর উদ্দেশ্য আর কিছুই না, এই দিনটি শোক দিবস হিসেবে পালন না করে আনন্দ-ফূর্তির দিন হিসেবে কাটানো। এর পর যে সব উদ্ভট কান্ডকারখানা ঘটতে লাগল, তার সঙ্গে কোনও সভ্য সরকারের থেকে মাফিয়া রাজত্বেরই মিল বেশি।  এ সব কিছুই করা হয়েছিল জাতির জনক হিসেবে শেখ মুজিবুর যাতে ইতিহাসে তাঁর প্রাপ্য সম্মান না পান, সেই উদ্দেশ্যে।

 

পশ্চাদগামী রাজনীতির এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে জাতি সহসা সহর্ষে শুনল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (২০০৭-০৮) চালিকাশক্তি জেনারেল মইন ইউ আহমেদের বিবৃতি। জোরালো ভাষায় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রের জনক এবং এ ব্যাপারে দ্বিতীয় কোনও মতের অবকাশ নেই।

 

১৫ই অগাস্টে জাতীয় শোক দিবস পালন করা বন্ধ করতে বি এন পি -জামাত সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, ২০০৮ সালে একটি স্মরণীয় রায়ে এরপর  তা বাতিল করে হাইকোর্ট। বহু বছর ধরেই বাংলাদেশের মানুষের এই অভিমত যে অগাস্ট ১৫, ১৯৭৫ সালে যা ঘটেছিল, তা মনুষ্য বিবেকে কলঙ্ক লেপনকারী।

 

১৫ই অগাস্টের হত্যাকান্ডকে জাতি সব সময়ই বাংলাদেশের অন্ধকারতম অধ্যায় বলে মনে করে এসেছে এবং  যাঁরা বিবেকবান মানুষ , তাঁরা সবসময়ই এই কথাই জোরের সঙ্গে বলে এসেছেন, যে সব ব্যক্তি এই ঘৃণ্যতম কর্ম করেছে, তাদের বিচার হওয়া দরকার।

 

১৫ই অগাস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন না করার যে দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত বিএনপি-নেতৃত্বাধীন জোট সরকার নিয়েছিল (২০০২), হাইকোর্ট তা  খারিজ করে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই উল্লসিত পৃথিবীর সমস্ত স্তরের বিবেকবান মানুষ। আদালতের এই পদক্ষেপ দেশের এবং বহির্বিশ্বের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেবে সেই সার্বিক লজ্জা, গ্লানির কথা, যার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হয়েছিল শেখ মুজিবের হত্যার সময় থেকে বহুদিন।

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020