Column

বি এন পি-র শাসনকালে ব্যাপক দূর্নীতি

বি এন পি-র শাসনকালে ব্যাপক দূর্নীতি

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 25 Jun 2018, 07:32 am
২০০৮ সালে প্রকাশ পায় যে, অতি বৃহৎ জার্মান টেলিকম এবং আই টি কোম্পানি সিমেন্স তাদের বিরুদ্ধে আনা বেশ কয়েকটি উৎকোচের অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য আমেরিকা এবং জার্মান সরকারকে ১.৬ কোটি ডলার দিতে চায়।

এই অর্থের মধ্যে সিমেন্স বাংলাদেশ আমেরিকা সরকারকে দেবে পাঁচ লক্ষ ডলার। উদ্দেশ্য, ২০০৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় পুত্র আরাফত রহমান কোকোকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ যাতে তুলে নেওয়া হয়। এই সময় দিয়েই আর একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে, যখন সিঙ্গাপুর সরকার সিদ্ধান্ত  ঘোষণা করে যে, সে দেশে রাখা আরাফত রহমান কোকোর সম্পত্তি, যার পরিমাণ ১১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা, ফ্রিজ করা হবে।


আরাফত  রহমান কোকোকে উৎকোচ দেওয়ার কথা সিমেন্স স্বীকার করে নেওয়ায় জানুয়ারি ৮, ২০০৯ তারিখে ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস ৩০ লক্ষ ডলারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চেয়ে মামলা দাখিল করে। এই মামলা করা হয় সিমেন্স এবং চায়না হারবার দূর্নীতি মামলায় আরাফত রহমান কোকোকে উৎকোচ দেওয়ার ব্যাপারে। ডি ও জে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জোর দেয় এই কারণে যে, সিংগাপুরে কোকোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত অর্থের একটি অংশ আমেরিকার একটি ব্যাংক থেকে এসেছিল। যে উৎকোচ কোকোকে দেওয়া হয়েছিল, তা ডলারে দেওয়া হয়েছিল এবং পাঠানো হয়েছিল আমেরিকার  আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেই।


{special_block_1}বিদেশের মাটিতে সঙ্ঘটিত উৎকোচ প্রদান কিংবা জোর করে অর্থ আদায়ের মত অপরাধগুলি, যেগুলির লেনদেন আমেরিকার মাধ্যম দিয়ে হয়েছে, আমেরিকার অর্থ পাচার আইনের আওতায় পড়ে। মার্কিন দেশের এই বাজেয়াপ্তকরণ আদেশ কার্যকর করার জন্য আমেরিকা এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে একটি পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি সম্পাদিত করে। এর লক্ষ্য ছিল আরাফত রহমান কোকোর মালিকানাধীন সিংগাপুরের জেড এ এস জেড নামের কোম্পানির কর্পোরেট অ্যাকাউন্টে রাখা অর্থ বাজেয়াপ্ত করা। এই কোম্পানির নাম কোকোর পরিবারের সদস্যদের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে- জাফিরা (কোকোর কন্যা), আরাফত (কোকো নিজে), শমিলা (কোকোর স্ত্রী) এবং  জাহীভা (কোকোর দ্বিতীয় কন্যা)।

 

সিমেন্সের সংগে টেলিকম চুক্তি স্বাক্ষর বাবদ পাওয়া যে অর্থ কোকো বিদেশে অবৈধভাবে জমা করে রেখেছিল, তা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছিল বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে কলাম্বিয়া ডিসট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেটি বর্তমানে বিচারাধীন। বিদেশে পাচার করা কোকোর ১.৬ মিলিয়ন ডলার  (১১০ মিলিয়ন টাকা)। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক তৈরি করার বরাত পাইয়ে দিয়ে সিমেন্সের কাছ থেকে পাওয়া উৎকোচের অর্থের একটি অংশ এই টাকা।

 

এ ছাড়া কোকোর তৈরি করা 'ফেয়ারহিল' নামে সিংগাপুরের আর একটি কোম্পানি সহ আরও কিছু সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

 

২০০৯ সালের ১৭ই মার্চ মাসে বাংলাদেশের অ্যান্টি করাপশন কমিশন কোকোর বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা করে। বাংলাদেশের আদালতে কোকোর অনুপস্থিতিতেই তার বিচার হয় এবং তার ছ' বছরের কারাদণ্ড হয়, সেই সংগে ৩৮. ৮৩ কোটি টাকা জরিমানা।

 

২০১৩ সালের ২৭ শে অগাস্ট এ সি সি সিংগাপুরের কোকোর পাচার করা অর্থের একটি অংশ- ৭.৪ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনে। এর আগে, ২০১২ সালের ২২ নভেম্বরে সিংগাপুর থেকে প্রথম কিস্তিতে ১৩.৬ কোটি টাকা ফেরত আনা হয়েছিল।{special_block_2}

 

কোকো, যে আইন থেকে বাঁচতে ২০০৭ সাল থেকে বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, মালয়েশিয়ায় ২০১৫ সালে হার্ট ফেল করে মারা যায়।

 

এ দিকে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফ বি আই) খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং বি এন পি -র অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান তারিক রহমান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা ব্যবসায়িক সহযোগী গিয়াসুদ্দিন আল-মামুনের বিরুদ্ধে উৎকোচ এবং অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত চালাচ্ছে। জানা গেছে, সিংগাপুরের একটি ব্যাঙ্কে তারিক এবং মামুনের নামে সাড়ে সাত লক্ষ ডলার জমা পড়েছিল। এই অর্থ এসেছিল নির্মান কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ডিরেক্টর তথা চিনের হারবিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির লোকাল এজেন্ট খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে টঙ্গিতে একটি ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার বরাত পাওয়ানোর জন্য।

 

এফ বি আই এজেন্ট ডেবরা লাপ্রেভোট, যিনি তদন্তকারী অফিসার, ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের একটি আদালতে জানিয়েছিলেন যে খাদিজা ইসলামের সিংগাপুরের ও সি বি সি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে  মামুনের সিংগাপুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো ঘুষের টাকার হদিশ করতে পেরেছে এফ বি আই। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তারিক রহমানের নামে একটি সাপ্লিমেন্টারি গোল্ড ভিসা কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল। তারিকের ব্যবহৃত এই গোল্ড কার্ডের সূত্র ধরেই এফ বি আই ঘুষের এবং সেই সংগে তারিকের গ্রিস, জার্মানি, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর এবং ইউ এ ই ভ্রমণের হদিশ পায়। যে সব কোম্পানি বাংলাদেশে কাজের কন্ট্রাক্ট পেতে চাইত, তারা সিংগাপুরে মামুনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে উৎকোচের টাকা পাঠাত। মামুনের নামে হলেও এই  অ্যাকাউন্ট সরাসরিভাবে  ব্যবহার করতে পারত তারিক। তারিকের নামে বাংলাদেশে এক ডজনেরও বেশি দূর্নীতি মামলা ঝুলে আছে।

 

জুলাই ২১, ২০১৬ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন তারিক রহমানকে অর্থপাচার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে সাত বছরের কারাবাস এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেয়। এই শাস্তি ঘোষণা করার সময় আদালত বলে, যে আর্থিক অপরাধ তারিক করেছে, তার ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যহত হয়েছে। আদালত বলে, যে অর্থ 'কনসালটেন্সি ফি' হিসেবে দাবি করা হয়েছে, তা আসলে উৎকোচ। মা জিয়ার সংগে তারিক রহমান একটি অনাথ তহবিল তছরুপের জন্যেও দশ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে।

 

২০১১ সালের ২৩ শে জুন কানাডার আদালতে নিকো কানাডা দোষ স্বীকার করে বলে যে, বাংলাদেশে বি এন পি -র শাসন চলার সময় তারা তৎকালীন বিদ্যুৎ এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশারফ হোসেনকে ১৯০,৯৮৪ কানাডিয়ান ডলার মূল্যের একটি গাড়ি উৎকোচ হিসেবে দিয়েছিল। নিকো কানাডা এ ছাড়াও এই মন্ত্রীকে  ৫,০০০ ডলার এবং আমেরিকায় পরিবারের লোকেদের সংগে দেখার করার জন্য ভ্রমণের খরচ দিয়েছিল উৎকোচ হিসেবে।  নিকো যাতে একটি গ্যাস ক্রয় এবং বিক্রয়ের বরাত পায়, তার জন্য এই ঘুষ দেওয়া হয়েছিল।

 

বিচারাধীন  আরও কয়েকটি বৃহৎ দূর্নীতি মামলা


জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট কেসঃ খালেদা জিয়ার প্রয়াত স্বামী এবং দেশের প্রথম সামরিক শাসক   জিয়াউর রহমানের নামে একটি দাতব্য ট্রাস্ট তৈরির নাম করে ৩১.৫৫ মিলিয়ন টাকা অবৈধ লেনদেন সংক্রান্ত মামলা এটি।

 

বরপুকুরিয়া কোল মাইন উৎকোচ মামলাঃ  এই মামলাতেও বেনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যম্য একটি চিনা কোম্পানিকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত খালেদা জিয়া এবং আরও ১৫ জন। চায়না ন্যাশনাল অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনকে এই কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেওয়ায় সরকারের ক্ষতি হয় ১৫৮.৭১ কোটি টাকা।

 

গ্যাটকো মামলাঃ তেজগাঁও থানায় এসিসির দায়ের করা একটি অভিযোগে বলা হয়েছে যে, ২০০৩ সালের পয়লা মার্চ খালেদা জিয়া বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ না করে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি(গ্যাটকো)কে অবৈধ ভাবে ঢাকার ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো এবং সাউথ ইস্টার্ন চিটাগং পোর্টের ঠিকাদারি বরাত পাইয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে রাষ্ট্রের ১৪০ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

 

নিকো মামলাঃ .এই মামলায় এসিসি খালেদা জিয়া এবং অন্য দশ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে। কেস রিপোর্ট জানাচ্ছে যে, প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন ব্যাপারে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কানাডার তেল এবং গ্যাস অনুসন্ধানকারী সংস্থা নিকোর সঙ্গে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে চুক্তি অনুমোদন করা হয়, এবং তা করা হয় অর্থের বিনিময়ে। পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড  প্রোডাকশন কোম্পানি এই চুক্তির বিরোধিতা করে, কিন্ত এ সব কিছু অগ্রাহ্য করে নিকোকে বরাত দেওয়া সমর্থন করেন এবং তার ফলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় ১৩,৭৭৭ কোটি টাকা।

সর্বশেষ শিরোনাম

বাংলাদেশে পশ্চিমের ‘গণতান্ত্রিক বিতর্কের’ শূন্যতা Tue, Jan 02 2024

হাসিনার ১৫ বছর: আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির একটি অনুকরণীয় গল্প Thu, Dec 07 2023

বাংলাদেশ: পাকিস্তানের ছায়া থেকে পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ Fri, Dec 01 2023

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মতন্ত্র: বাংলাদেশ - এবং পশ্চিম - হুমকির মুখে Thu, Nov 16 2023

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের সূচক - বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা Tue, Jan 17 2023

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ব্যাপক দুর্নীতি ও উগ্র ইসলামবাদ Sat, Nov 19 2022

বিডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশ Wed, Dec 08 2021

Manipulating institutions: The Chinese Way in Bangladesh Sat, Dec 04 2021

শিল্পদ্রব্যের গুনমাণ: কোথায় চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা Tue, Sep 15 2020

চিন থেকে সাবধান হওয়ার সময় এখন Mon, Aug 31 2020