Finance
উচ্চ কর ও নেটওয়ার্কে ব্যাপক বিনিয়োগের কারণে রবি’র মুনাফা আশাব্যাঞ্জক হয়নি
তবে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের প্রথম একীভূতকরণকে গ্রাহকরা স্বাগত জানিয়েছেন। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) একীভূত কোম্পানিতে ৩৪ লাখ নতুন গ্রাহক যোগ হওয়া সে দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। সব মিলিয়ে এখন রবি’র মোট গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৯৬ লাখ।
২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভয়েস ও ডেটা সেবায় রাজস্ব বৃদ্ধি পেলেও একীভূতকরণের পর নেটওয়ার্ক বিস্তারে ব্যাপক বিনিয়োগ (৫৪০ কোটি টাকা) এবং উচ্চ কর হারের কারণে কোম্পানির রাজস্বের ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ায় একীভূত কোম্পানি রবি’র মুনাফা হয়েছে সমান্য। উচ্চ করারোপ দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে কতটা হুমকিতে ফেলতে পারে এ ফলাফলে সেটিরই প্রতিফলন ঘটেছে।
২০১৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের সাথে ২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
একীভূত হওয়ার পর অন-নেট সুবিধার মাধ্যমে রবি ও এয়ারটেলের গ্রাহকরা সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ও বিস্তৃত নেটওয়ার্ক উপভোগ করছেন। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি’তে ৩৪ লাখ নতুন গ্রাহক যোগ হওয়ায় বর্তমানে রবি’র মোট গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৯৬ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের ২৯ দশমিক ২ শতাংশ। একীভূতকরণের ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ভয়েস সেবা থেকে রাজস্ব ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ডেটা সেবা থেকে রাজস্ব ১০৬ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমাণ ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ। ৩.৫জি ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য নেটওয়ার্ক খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ এবং সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহক-বান্ধব ডেটা অফারের ফলে ইন্টারনেট থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি’র পরিচালন মুনাফার (ইবিটিআইডিএ) পরিমাণ ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। একীভূতকরণের ফলে এয়ারটেলের মুনাফা কম হওয়ায় এমনটি হয়েছে। এ সময় রবি’র কর পরবর্তী মুনাফা ৪ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা টাকার অঙ্কে ৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক ও প্রথম প্রান্তিকের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
সফলভাবে রবি-এয়ারটেল একীভূতকরণের ফলে ২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রাহক সংখ্যা ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৯৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। ভয়েস (+৮.০%) ও ডেটায় (১৪.৮%) আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ফলে গত প্রান্তিক থেকে এ প্রান্তিকে রাজস্ব ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা টাকার অঙ্কে ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। মূলত নেটওয়ার্ক ও বিপণন কার্যক্রমে বিনিয়োগের ফলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইবিটিআইডিএ একই রয়েছে- ২৭০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি’র কর পরবর্তী মুনাফা ৪ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
গ্রাহকদের আরো মানসম্মত ভয়েস ও ডেটা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৩.৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তার এবং ২.৫জি নেটওয়ার্কের মান আরো বৃদ্ধির জন্য ক্রমাগত বিনিয়োগ করছে রবি। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ৫৪০ কোটি টাকাসহ কোম্পানির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রবি’র মোট মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ ১৯ হাজার ২১০ কোটি টাকা (চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৪৫০ কোটি টাকা)। ১১ হাজারের বেশি সাইট নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলাতেই রয়েছে রবি’র নেটওয়ার্ক যার মধ্যে ৮ হাজার ৫ শ’টির বেশি ৩.৫জি সাইট।
রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “রবি-এয়ারটেল নেটওয়ার্ক একীভূতকরণ এবং গ্রাহকদের সেরা সেবা প্রদানের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০১৭ সালের শুরু। এ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় আমরা রবি ও এয়ারটেল নেটওয়ার্কের একীভূতকরণ কার্যক্রম শেষ করার মাধ্যমে দেশের এক নম্বর ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার শেষ প্রান্তে রয়েছি।’’
রবি-এয়ারটেল নেটওয়ার্কে অব্যাহত বিনিয়োগ এবং কার্যকর একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক প্রদান করছি যার ফলে গ্রাহকরা আরো মানসম্মত ডেটা সেবা উপভোগ করছেন। এ ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে পাওয়া ইতিবাচক সাড়া আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। কারণ গ্রাহকদের পরিপূর্ণ ডিজিটাল লাইফস্টাইল সেবা প্রদানই আমাদের লক্ষ্য।
২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আমরা গ্রাহকদের জন্য সবচেয়ে উদ্ভাবনী ও সাশ্রয়ী পণ্যের অফার অব্যাহত রেখেছি। বিশেষ কলরেট এবং আকর্ষণীয় ইসলামিক ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভিএএস) সেবার সমন্বয়ে দেশের প্রথম ইসলামিক মোবাইল প্যাকেজ ‘নূর’ চালু করেছে রবি। গ্রাহকদের সেরা স্মার্টফোনের অফার প্রদান করতে সম্প্রতি ই-শপ চালু করেছি আমরা।’
রবি সিইও বলেন, আবারো আমাদের ওপর আস্থা রেখে আগামী দুই বছরের জন্য জাতীয় ক্রিকেট দলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রবি’কে নির্বাচন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড।
২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ৭৯০ কোটি টাকা, যা এ প্রান্তিকের মোট রাজস্বের ৪৬ দশমকি ৮ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রবি এ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ১৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে একই সময়ে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসেবে প্রদান করেছে ২৯০ কোটি টাকা।