Finance

আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ২০১৭ সালে রবি’র লোকসান ২৮০ কোটি টাকা

আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ২০১৭ সালে রবি’র লোকসান ২৮০ কোটি টাকা

| | 22 Feb 2018, 06:00 am
ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২২ঃ গ্রাহক ও রাজস্ব উভয় ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সত্ত্বেও ২০১৭ সালে রবি কোন মুনাফা করতে পারেনি। নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগের পাশাপাশি বাজার, রেগুলেটরি ও পরিচালন সংক্রান্ত কয়েকটি কারণে ২০১৭ সালে রবি’র মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮০ কোটি টাকা।

ডেটা ও ভয়েস সেবার মূল্য নিয়ে বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা ২০১৭ সালের ব্যবসায়িক ফলাফলে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বর্তমান ত্রুটিপূর্ণ মূল্য কাঠামোর কারণে পণ্য ও সেবার আগ্রাসী মূল্য নির্ধারণ এবং এক খাতের আয় দিয়ে অন্য খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে বাজারে। ফলে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকায় চলমান সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে।

 

সর্বোপরি উচ্চ করারোপের ফলে তুলনামূলক ছোট কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ফলাফলে চাপ তৈরি হচ্ছে। ফোরজি’র যুগে প্রবেশ করেছে দেশ। কিন্তু রবি’র ব্যবসায়িক ফলাফল এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ডিজিটাল বিপ্লব আনতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিনিয়োগের সক্ষমতা ক্ষীণ হয়ে আসছে।

 

২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালের ব্যবসায়িক ফলাফল

 

২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে গ্রাহক বৃদ্ধির হার ২৬ দশমকি ৮ শতাংশ বেশি। ৯১ লাখ নতুন গ্রাহক নিয়ে রবি’র বর্তমান গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ২৯ লাখ যা দেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা, কার্যকর দ্বৈত তরঙ্গ কৌশল এবং সেরা ডেটা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য গ্রাহক বৃদ্ধি করেছে রবি।

 

এয়ারটেল’র সাথে সফলভাবে একীভূতকরণের ফলে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে রাজস্ব ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা টাকার অঙ্কে ৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ডেটা থেকে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ। একীভূতকণের পর দেশব্যাপী সফলভাবে নেটওয়ার্কের সমন্বয় এবং উদ্ভাবনী ডেটা অফারের ফলে ডেটা খাতে এই রাজস্ব বৃদ্ধি হয়েছে।

 

প্রাথমিকভাবে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় ব্যয় বৃদ্ধি এবং মূল্য নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার ফলে ২০১৭ সালে ইবিআইটিডিএ মার্জিন’র (পরিচালন মুনাফা) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশ। দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ক্রমাগত মূলধনী বিনিয়োগ এবং উচ্চ পরিচালন ব্যয় ও খাতভিত্তিক করের কারণে উখেøখযোগ্য পরিচালন ব্যয়ের ফলে ২০১৭ সালে কর পরবর্তী ক্ষতির পরিমাণ ২৮০ কোটি টাকা।

 

২০১৭ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনামূলক আলোচনা

 

২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রবি’তে ১৭ লাখ নতুন গ্রাহক যোগ হয়ে মোট গ্রাহকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৯ লাখে। তৃতীয় প্রান্তিক থেকে চতুর্থ প্রান্তিকে রাজস্ব ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৮৬০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ‘মাই প্ল্যান’র মাধ্যমে গ্রাহকরা নিজেদের সুবিধা মতো ডেটা ও ভয়েস সেবা গ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় চতুর্থ প্রান্তিকে ডেটা থেকে রাজস্বের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের ফলে তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকে পরিচালন মুনাফা (ইবিআইটিডিএ) ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে যা টাকার অঙ্কে ৩৭০ কোটি টাকা। বিশেষত ইডটকো’র সাথে মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত এককালীন ব্যায়ের কারণে ২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে কর পরবর্তী মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।

 

২০১৬ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের সাথে ২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনামূলক আলোচনা

 

২০১৬ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রবি’র উল্লেখযোগ্য রাজস্ব বৃদ্ধি হয়েছে- ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রবি’র ২০ দশমকি ১ শতাংশ পরিচালন মুনাফা (ইবিআইটিডিএ) হয়েছে। মূলত দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ব্যয়ের ফলে এই প্রান্তিকে কর পরবর্তী ক্ষতি হয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।

 

মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামোয় বিনিয়োগ

 

গ্রাহকদের আরো মানসম্মত ভয়েস ও ডেটা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ফোরজি নেটওয়ার্ক তৈরি এবং দ্রুত ৩.৫জি নেটওয়ার্কর বিস্তারের জন্য ক্রমাগত বিনিয়োগ করে চলেছে রবি। ২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের ১ হাজার ১২০ কোটি টাকাসহ কোম্পানির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রবি’র মোট মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ ২০ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। ১০ হাজার ৬৫০’টির বেশি সাইট নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলাতেই রয়েছে রবি’র নেটওয়ার্ক যার মধ্যে ৯ হাজার ২শ’টির বেশি ৩.৫জি সাইট।

 

এমডি অ্যান্ড সিইও’র বক্তব্য

 

এমডি অ্যান্ড সিইও’র বক্তব্যরবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “দেশের সেরা নেটওয়ার্কে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে রবি। ফোরজি ও এমএনপি নিয়ে আলোচিত এই সময়ে আমাদের বিশ্বাস, আমরা আমাদের গ্রাহকদের আরো ডেটা স্পিড ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক প্রদান করতে পারব। ‘ইয়ুথ ব্র্যান্ড’ হিসেবে এয়ারটেল ও ‘ডিজিটাল’ ব্র্যান্ড হিসেবে রবি প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় ২০১৭ সালে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা ২৬ দশমকি ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

নেটওয়ার্ক বিস্তারের পাশাপাশি রবি প্রতিনিয়ত উদ্ভাবনী ডিজিটাল সল্যুশন আনছে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকদের বিভিন্ন অনলাইন ও সোশ্যাল প্লাটফরম ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। ভিডিও অন ডিমান্ড সেবা প্রদান করতে ওটিটি (ওভার দি টপ) প্লাটফরম ‘আইফ্লিক্স’ চালু করেছে রবি। এছাড়া ‘মাইপ্লে’ নামে দেশের বৃহত্তম গেমিং প্লাটফরম এবং ‘মাইহেলথ’ কম্বো নামে স্বাস্থ্য সেবা চালু করেছি আমরা। এসব ডিজিটাল প্রডাক্ট ‘ডিজিটাল ও ইনোভেটিভ ব্র্যান্ড’ হিসেবে রবি’র ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করেছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সবার মাঝে স্বাধীনতার ইতিহাস ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ‘বিজয় ইতিহাস’ অ্যাপ চালু করেছে রবি যা আমাদের আবারো জাতীয় ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।"

 

স্টেকহোল্ডারদের পরিশোধিত অর্থের বিবরণ

 

২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ৭৬০ কোটি টাকা যা এ প্রান্তিকের মোট রাজস্বের ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রবি এ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ২০ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে একই সময়ে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসেবে প্রদান করেছে ২৯০ কোটি টাকা।