Column

প্রয়াত স্বামীর পথে হাঁটছেননা খালেদা জিয়া

প্রয়াত স্বামীর পথে হাঁটছেননা খালেদা জিয়া

| | 27 May 2013, 11:27 am
জামাত-এ-ইসলামি সহ বিভিন্ন চরমপন্থী ইসলামি শক্তিগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গভীর সখ্যতা বহুদিনের। তাই জামাতের যুদ্ধাপরাধ বিচার \'প্রতিরোধ\' করার চেষ্টায় তিনি যে সমর্থন জানাচ্ছেন, তা আশ্চর্যের ব্যাপার নয়। এমনকি তিনি সরকারকে এই বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, \'ধর্ম\' অথবা \'স্বাধীনতা\'র উপর কোনওরকম আক্রমণ তাঁর দল, বি এন পি, বরদাস্ত করবেনা। তিনি বলেছেন, \"ইসলামের সঙ্গে স্বাধীনতার কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দীপনার নামে ইসলাম, আল্লাহ এবং হজরত মহম্মদকে অবমাননা করা হচ্ছে।\"

 এমন একটি সময়ে তিনি এই বিবৃতি দিয়েছেন যখন জামাত, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, নতুন করে দাঙ্গা, সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে দেশকে উত্তাল হিংসার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। 

 
স্বাধীন বাংলাদেশ সব থেকে খারাপ সময় প্রত্যক্ষ করেছে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে, যখন ক্ষমতায় আসীন ছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বি এন পি, জামাত এবং আরও দুটি দলের জোট সরকার। ব্যাপকভাবে দূর্নীতিগ্রস্ত চার দলের এই সরকারের কাজ ছিল সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে মদত দেওয়া, চরম ইসলামপন্থা অনুসরণ করা এবং প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ হানা। খালেদার সঙ্গে তুলনা করলে, তাঁর স্বামী, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কিন্তু ছিলেন বাস্তববাদী এবং শক্ত। প্রশাসক হিসেবে তিনি এমনকি তাঁর পুত্রদের এবং শ্যালককেও রেহাই দেননি। 
 
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর শাসনকালে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন দূর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে খালেদার ভাই সাঈদ ইসকান্দার মির্জাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করেন। এক সময়ে বি এন পির এম পি থাকা কুখ্যাত ইসকান্দার যে শুধুমাত্র জনগনের টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন তাই নয়, তাঁর সঙ্গে পাকিস্তান এবং আই এস আই-এরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এই বছরের গোড়ার দিকে ইসকান্দারের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অল্প কিছু সৎ ব্যক্তিদের অন্যতম জিয়াউর রহমান তাঁর পরিবারের কাউকেই কখনও রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবহার করে বিত্তশালী হওয়ার সুযোগ দেননি। 
 
শুধু তাই নয়, ঢাকার সব থেকে মর্যাদাপূর্ন স্কুল, সেন্ট যোসেফ থেকে যখন তাঁর দুই পুত্রকেই বের করে দেওয়া হয়, তখনও জিয়াউর রহমান কোনওরকম হস্তক্ষেপ করেননি। জিয়ার ছেলেদের স্কুল ছাড়তে হয়েছিল, কারন তারা ছিল অত্যন্ত অমনোযোগী।যখন তারেক এবং তার ভাই তাদের বাবাকে আবার সেন্ট যোসেফ স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করে, ক্রুদ্ধ জিয়া বলেছিলেন, "আমার অমনোযোগী ছেলেদের সাহায্য করার জন্য আমি ক্ষমতায় বসে নেই।"
 
সেই দিক দিয়ে খালেদা জিয়ার চার দলের জোট সরকারের শাসনকাল নানা অপকর্মে কলঙ্কিত । দক্ষিনপন্থী ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকে এই সময়ে রাজনৈতিক মান্যতা দেওয়া হয়। এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী ব্যক্তি এবং সংগঠনগুলির মধ্যে ছিল বাংলাভাই এবং তার জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জে এম বি) এবং পাকিস্তানের আই এস আই মদত-পুষ্ট হরকত-উল-জিহাদি-ইসলামি (হুজি)। দুদুদু\'হাজার পাঁচ সালের অগাস্ট মাসে, যে দিন বি এন পি চেয়ারম্যান এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জিয়া চিন সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন, সেই দিনই জে এম বি দেশের ৬৪ টির মধ্যে ৬৩ টি জেলায় একই সঙ্গে বোমা বিস্ফোরন ঘটায়। 
 
 ্যদিও শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর জামাতের উপর থেকে নিষধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং বি এন পির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে জামাতের নেতাদের দেশে ফিরে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন, তবু কিন্তু তিনি ধর্মীয় সন্ত্রাস অথবা সন্ত্রাসবাদী দলগুলিকে মদত দেননি, যা করেছেন তাঁর স্ত্রী। সরকারি প্রশাসনে ইসলামের ভূমিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করলেও চরমপন্থী ইসলামকে তিনি উৎসাহ দেননি। প্রশাসনে ইসলামকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য সমালোচিত হলেও কড়া হাতে দেশ শাসন করা জিয়া ছিলেন একজন শক্ত প্রশাসক। 
 
কিন্তু খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনকালে নানা ঘটনা, এমনকি আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা অথবা হত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটতে থাকে। লীগের প্রধান শেখ হাসিনার প্রাণ নাশের চেষ্টা হয় তিন-তিনবার। এর মধ্যে ২০০৪ সালের অগাস্ট মাসে লীগের জনসভার উপর গ্রেনেড হানায় শেখ হাসিনা গুরুতর আহত হন। ঐ আক্রমণে লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সম্প্রতি প্রয়াত বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান ও আরও ২১ জন নিহত হন। প্রধান অপরাধী, হুজির কম্যান্ডার মুফতি হান্নান     অপরাধ স্বীকার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে বেশ কিছু বি এন পি নেতার নাম করে। ন্যাশনাল সিকিওরিটি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্সের তৎকালীন প্রধান গ্রেনেড আক্রমণে খালদার ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছিলেন।  
 
বি এন পি-জামাত জোটের প্রধান ব্যক্তি, খালেদা জিয়া এবং জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান জিয়াই আসলে সব দিক দিয়ে এই সরকারের প্রধান চালক ছিলেন। ভারতের উপর সন্ত্রাসী হানা চালানোর জন্য পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করার অবাধ সুযোগ দেওয়া হল, মাফিয়া নেতা দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে হল গোপন বোঝাপড়া এবং জামাত, আই এস আই ও পাকিস