Column

বাংলাদেশকে হিন্দুশুন্য করতে প্রতিজ্ঞা জামাতের

বাংলাদেশকে হিন্দুশুন্য করতে প্রতিজ্ঞা জামাতের

| | 27 May 2013, 11:13 am
যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল গত ফেব্রুয়ারি মাসের আঠাশ তারিখে জামাত-এ-ইসলামির প্রবীণ নেতা দেলওয়ার হোসেন সাইদির মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করার পরেই তাঁর দল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করে। জামাত এবং তাদের ছাত্র ফ্রন্ট ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মীদের আক্রমণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় লুঠ হয়েছে হিন্দুদের সম্পত্তি, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বাড়ি ঘর এবং মন্দির।

 হিন্দুদের মন্দিরে আগুন লাগানো, তাদের দেব দেবীর মূর্তি এবং পবিত্র স্থান অপবিত্র করা, হিন্দু সম্পত্তি লুঠ অথবা হিন্দু মহিলাদের ধর্ষণ এবং নাবালিকাদের শ্লীলতাহানি এখন প্রায় নিত্যদিনের খবর। কিন্তু যারা দেশকে \'কাফির\' মুক্ত এবং হিন্দুশুন্য করার লক্ষ্যে নেমেছে, সেই ইসলামি আক্রমণকারীদের গ্রেপ্তারের কোনও খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। 

 
 এতকিছু সত্ত্বেও ভয়ে এবং নিরাপত্তার অভাবে হিন্দুরা আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করছেননা। সংখ্যালঘুদের উপর এই ধরনের আক্রমণ বন্ধ করার এবং নিরাপত্তার সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কার্যত কিছুই করা হয়নি। খবর পাওয়া গেছে, খালেদা জিয়া সহ বি এন পি নেতৃবৃন্দ আক্রান্তদের কাছে গিয়ে তাঁদের জীবন এবং সম্পত্তির ব্যাপারে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে যদি হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে ভোট না দেন, তবেই। বাংলাদেশের ৩৫ টি সংসদীয় আসনে ভোটের ফলাফল হিন্দুরাই নির্ধারন করেন এবং তাঁদের আওয়ামী লীগের ভোটার বলেই মনে করা হয়। 
 
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও হিন্দুরা যে বাংলাদেশে নিরাপদ নন, এটা তাঁদের ভালমত বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বি এন পি-জামাত জোট অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক সংখ্যালঘু তাস খেলছে। প্রথম দিন থেকে বি এন পি কর্মীরা জামাত-ছাত্র শিবিরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গ্রামাঞ্চল এবং ছোট শহরগুলিতে, যেখানে তাদের সাংগঠনিক শক্তি বেশী, সেখানে হিন্দুদের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। 
 
"সব হিন্দুকে খতম করা হবে আর পাকিস্তানের মতই বাংলাদেশ হবে বাংলাস্তান, যেখানে শুধু মুসলমানরাই থাকবে-"জানাচ্ছে জামাত পরিচালিত ওয়েবসাইট\'বাঁশের কেল্লা\'।
 
 
 
সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ পরিচালিত সরকার হামলাকারী জামাত কর্মীদের চটাতে অনিচ্ছুক। যে রাজনৈতিক কারনে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্মের পরে শেখ মুজিবুর রহমান চরমপন্থী ইসলামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছিলেন, ঠিক সেই বাধ্যবাধকতাতেই  বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও আটকে আছে। যেরকম ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, সেরকমই ঐস্লামিক স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার পরেই এবারেও চলেছে হিন্দুদের উপর নির্যাতন। সেই সময়ে উপলক্ষ্য ছিল দ্বিজাতি তত্ত্ব বর্জন করে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম, আর এখন ইসলামি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। 
হিন্দুদের উপর আক্রমণের আরও একটি দিক আছে। শাহবাগ আন্দোলনের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের কারনেই খালেদা জিয়া এবং অন্যান্য পাকিস্তানপন্থী দলগুলি এই আন্দোলনের নিন্দা করে চলেছেন। এর কারন, এই আন্দোলন যদি সফল হয় তবে তা বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির অবসান ডেকে আনবে। বলাই বাহুল্য, এই রকম কোনও পরিস্থিতি ইসলামপন্থীরা অথবা তাদের পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং অন্যান্য মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলি চাইবেনা। 
 
শাহবাগ আন্দোলনের নেতারা শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বলছেন, "প্রথমে আমি বাংলাদেশী, তারপরে মুসলমান অথবা হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ।" আর এটাই খারিজ করছে দ্বিজাতি তত্ত্বকে। বাঙ্গালি পরিচয় আসলে ইসলামি শক্তিগুলি এবং তাদের বিদেশী মদতদাতাদের কাছে ঘৃণার ব্যাপার। পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের কূটনীতিকরা ঢাকায় বি এন পি এবং জামাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলছেন এবং শাহবাগ আন্দোলনকে ব্যর্থ করার লক্ষ্যে পরামর্শ দিচ্ছেন। অন্যদিকে শাহবাগ আন্দোলনের আদর্শ--বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্র--আগামী সংসদীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে সুবিধাজনক জায়গায় রেখেছে। 
 
বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য শক্তি হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু আওয়ামী লীগ হিন্দুদের উপর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে খুব আগ্রহী নয়। এর কারন, নির্বাচনের আগে তারা চরমপন্থীদের শত্রু বানাতে ভয় পাচ্ছে। 
 
 বাংলাদেশকে একটি উদার মুসলমান-গরিষ্ঠ রাষ্ট্রে পরিণত করার ব্যাপারে যাদের অবদান আছে, সেই আওয়ামী লীগকে দেশের ইতিহাসের অধিকাংশ সময় ধরেই ইসলামি জাতীয়তাবাদী এবং পাকিস্তানপন্থী বি এন পি এবং জামাতের সহিংস চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস না করা এই সব শক্তি চায় ইসলামের নামে রাষ্ট্র শক্তি দখল করতে। সামরিক বাহিনীর একাংশ, কিছু ভাড়াটে শক্তি এবং পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়শই পরস্পর হাত মিলিয়ে  গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংশ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের খেলায় মেতেছে।সেই ভাবেই হিন্দু