Column

নির্বাচনমুখী বাংলাদেশে বি এন পি-জামাতের সন্ত্রাস

নির্বাচনমুখী বাংলাদেশে বি এন পি-জামাতের সন্ত্রাস

| | 03 Aug 2013, 01:27 am
মঞ্জুর আহমেদ : আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে সম্প্রতি তিনদিনের মধ্যে দু’জন শীর্ষস্থানীয় জামাত-এ-ইসলামি নেতার বিরুদ্ধে দন্ডাদেশ ঘোষিত হওয়ার সাথে সাথেই সাধারন নির্বাচনমুখী বাংলাদেশে শুরু হয়েছে চরম অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা।

 পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তানে উনিশশো একাত্তর সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং বুদ্ধিজীবীসহ নিরস্ত্র অসামরিক ব্যক্তিদের নিধনের লক্ষ্য হিসেবে যারা বেছে নিয়েছিল, সেইরকম আরও চারজন জামাত নেতার বিরুদ্ধে আদালত এর আগেই সাজা ঘোষণা করেছিল। সেই সময় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল,তাই হয়েছে এবারও। অর্থাৎ শেখ হাসিনা-সরকারকে সম্পূর্ন বিপরীত দু’টি দিক থেকে প্রতিবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে—যারা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এবং দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সবার জন্যই ফাঁসির হুকুম হয়নি বলে যারা অখুশী—তাদের থেকে।

 
বেশ কয়েক মাস ধরেই, প্রকৃতপক্ষে আদালতের প্রথম রায় ঘোষণা হওয়ার আগে থেকেই, যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিষয়টিকে সামনে রেখে জামাত এবং তাদের ছাত্র-যুব সংগঠণ, শিবির, প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে।
 
প্রধান বিরোধী দল, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি  এই প্রতিবাদে সরাসরি অংশ নিচ্ছেনা, কিন্তু দলের রাজনৈতিক মিত্র জামাত, যাদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে তারা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেছিল, তাদের সমর্থনে বি এন পি হরতালসহ নিজেদের বিক্ষোভ কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। বি এন পির অবস্থান শুধুমাত্র কৌশলগতভাবে  জামাতের থেকে ভিন্ন, কিন্তু বাস্তবে দু’দলের কর্মীরাই রাস্তায় একজোট হয়ে নেমে সরকারকে কঠিন সমস্যায় ফেলেছে।
 
তবে  দলের প্রবীণ নেতা সালাউদ্দিন চৌধুরি, যিনি  জামাতের বাইরে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তাঁর শাস্তির আদেশ হলে নিশ্চয়ই বি এন পি প্রতিবাদে প্রকাশ্যে আসবে।
 
যা চলছে এখন, তাতে সংসদ বা অন্য কোনও মঞ্চে নয়,  দু’পক্ষের লড়াই চলছে রাস্তায়। বহু বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির এটাই বৈশিষ্ট্য যে, ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলের মধ্যে কোনওরকম সহযোগিতাই থাকেনা।
 
এই পরিস্থিতিতে হিংসাকে সরকার হিংসা দিয়েই মোকাবিলা করছে, এবং তাতে আইনরক্ষক এবং বিক্ষোভকারীদের  অনেকেই প্রাণ হারিয়েছে, নয়তো সাঙ্ঘাতিকভাবে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে গেছে।
 
এদিকে দেশের অর্থনীতির খারাপ অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে অব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা বেড়েই চলেছে। কোনও বিদেশী লগ্নি আসছেনা, আর তার ফলে বড়্মাপের  পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি রুপায়িত হতে ক্রমেই দেরি হচ্ছে।
 
তার সঙ্গে একের পর এক বিপর্যয়। সে ধরণের বড় কোনও বন্যা, দুর্ভিক্ষ অথবা সাইক্লোনের আঘাত না এলেও সম্প্রতি দুর্ঘটনার কবলে পড়া দেশের  বস্ত্র শিল্পের সংকট এবং বিপণি কেন্দ্র ধসে পড়ার মত ঘটনাগুলি  মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করছে।
 
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, ক্ষমতাসীন আওয়ামি লীগ সম্প্রতি ছ’টি জায়গায় গুরুত্বপূর্ন পুর নির্বাচনে হেরে গেছে। এই জায়গাগুলির মধ্যে এমন কেন্দ্র আছে, যেগুলি লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হত এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সেগুলির কয়েকটিতে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভালমত উপস্থিতি আছে।  এর থেকে পরিষ্কার, এই সম্প্রদায়ও বর্তমান সরকারের ব্যাপারে খুশি নয়। আগের মতই এই সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও মনে করছেন যে, তাঁরা বৈষম্যের শিকার।
 
এর আগে বেগম খালেদা জিয়ার দু’ দফা শাসনকালে (১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬) বহু বিষয়ে সরব যে মধ্যবিত্ত শ্রেনী এবং কর্পোরেটকুল বিশেষ সুবিধা পেয়েছিল, স্বাভাবিকভাবেই তারা প্রকাশ্যেই বর্তমান সরকারের সব থেকে কঠোর সমালোচক।
 
এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধ বিচারের ব্যবস্থা করতে হাসিনা সরকার অনেক দেরি করে ফেলেছিল। তার অন্যতম প্রধান কারন, বিচারের যে পদ্ধতি-প্রকরণ এবং নিয়মকানুন ঠিক করা হয়েছিল, তাতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলির যথেষ্ট সায় ছিলনা। আমেরিকা কিংবা গ্রেট ব্রিটেনের কিছু বিশেষজ্ঞ সদর্থক কথাবার্তা বললেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলি, এমনকি রাষ্ট্র সংঘ থেকেও সরকারিভাবে সমর্থন পাওয়া যায়নি। ওদিকে আবার সমালোচনায় মুখর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষা সংগঠনগুলি একাধিকবার এই বলে মত প্রকাশ করেছে যে, এই বিচার স্বচ্ছ নয় এবং তার পদ্ধতি-প্রকরণ ত্রুটিপূর্ন। তার মুখ্য কারন, যে পদ্ধতিতে এই বিচার হচ্ছে তাতে আত্মপক্ষ সমর্থনকারী কোনও রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার যথেষ্ট সুযোগ পাবেনা।
 
এদিকে দেশের অভ্যন্তরে যখন সাধারন মানুষ দোষীদের বিচার এবং শাস্তির দাবিতে মুখর, তখন জামাত সর্বশক্তি দিয়ে বিরোধিতায় নেমে পড়েছে। তাদের চেষ্টা, যে কোনওভাবে যুদ্ধাপরাধ বিচারকে  আগামী সাধারণ নির্বাচন অবধি টেনে নিয়ে যাওয়া। এর কারন, জামাত আশা করছে, নির্বাচনে হাসিনার দল পরাজিত হবে এবং তখন বিচারও থেমে যাবে। তাহলে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া যাবে। বর্তমানে চলতে থাকা হিংসা এবং বিক্ষোভ-আন্দোলনের নিরবিচ্ছিন্নতা বজায় রাখার লক্ষ্যই হল যুদ্ধাপরাধ বিচার এবং শাস্তিদানের ব্যাপারটি থেকে আওয়ামি লীগ যাতে কোনও রাজনৈতিক সুবিধা লাভ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করা।
 
এ’পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে দন্ডপ্রাপ্ত সব ব্যক্তিই জামাতের শীর্ষস্থানীয় নেতা, যে জামাত স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে আল বদর, আল শামস এবং রাজাকারের মত সংগঠন গড়ে তুলেছিল। স্থানীয় শত্রুতার শোধ নিতে  এবং যাদের বিরোধী মনে করা হচ্ছে, এমন মানুষদের ব্যাপক হারে খুন করে  ও তাঁদের সম্পত্তি লুঠ করে এইসব সশস্ত্র বাহিনী সেই সময় তান্ডব চালিয়েছিল। বাংলাদেশের সরকারি বক্তব্য, এই বাহিনীগুলির সাহায্যে পাকিস্তানি সৈন্যরা সেই সময় তিরিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা এবং দু’লক্ষ মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল। নিরপেক্ষ হিসেবমতে অবশ্য মৃতের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ লক্ষ।
 
বর্তমানে চলতে থাকা যুদ্ধাপরাধ বিচারে শেষতম দণ্ডদান হয়েছে জামাত-এ-ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল আলি আহসান মোহাজিদের বিরুদ্ধে। মোহাজিদকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, তিনি কুখ্যাত আল-বদরের সেই সময়কার প্রধান ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল মোহাজিদকে সাংবাদিক সেরাজুদ্দিন আহমেদ, যশস্বী  সংগীত পরিচালক আলতাব আহমেদ রুমি এবং আরও কিছু মানুষকে অপহরণ ও খুনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে। বুদ্ধিজীবী এবং হিন্দুদের গণহত্যা, খুন, ষড়যন্ত্র এবং স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় অত্যাচারের ঘটনায় লিপ্ত থাকা সহ মোট সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছিলে মোজাহিদের বিরুদ্ধে।
 
তবে গুলাম আজম, যিনি ১৯৭১ সালে জামাতের প্রধান ছিলেন এবং তারপর থেকে একজন ধর্মীয় নেতা, তাঁর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দন্ডাদেশই এ’পর্যন্ত সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ঘটনা। বিচারচলাকালে সরকারি আইনজীবীরা আজমকে তুলনা করেছেন অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে। জুলাই মাসের ১৫ তারিখে তাঁকে ৯০ বছরের কারাবাসে দন্ডিত করা হয়।  বয়সে এবং স্বাস্থ্যের  কারনে হুইল চেয়ারে চলাফের করা ৯১ বছরের গুলাম আজম মৃত্যুদন্ড থেকে অব্যহতি পান। হত্যা এবং নির্যাতনসহ পাঁচটি মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
 
“গুলাম আজমের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি অন্য আর সবকিছু থেকে আলাদা। অপরাধগুলি ঘটার সময় সেইসব জায়গায় তিনি শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিলেননা। কিন্তু একাত্তরের বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় তাঁকেই মূল ব্যক্তি বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে,” তিন-সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চেয়ারম্যান, বিচারক এ টি এম ফজলে কবির বলেছেন।  ভিড়ে ঠাসা আদালত কক্ষে বিচারক তাঁর পঁচাত্তর পৃষ্ঠার রায়ে আজমের ৯০ বছর কারাবাসের হুকুম দেন। ভাবলেশহীন মুখে আজম পুরো সময়টাই আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
 
গুলাম আজমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলির মধ্যে একটিতে বলা হয় যে, ১৯৭১ সালের ১১ই নভেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়  মহম্মদপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর শিরু মিয়াসহ ৩৮ জন মানুষকে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন তিনি। আজমের চরম দন্ড চেয়ে সরকারি কৌঁসুলিরা তাঁকে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের কাছে এক ‘আলোকস্তম্ভ’ অর্থাৎ তাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে বর্ণনা করেন। ন’মাস ব্যাপী যুদ্ধের শেষ দিকে যখন ভারত হস্তক্ষেপ করে এবং পরিষ্কার হয়ে যায় যে পাকিস্তান হারছে, তখন রাজাকার, আল বদর এবং আল শামসের সশস্ত্র সদস্যরা অধ্যাপক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকদের পাইকারি হারে হত্যা করেছিল। এই ‘বিকৃত বিচার’এর বিরুদ্ধে তিনি আপীল করবেন জানিয়ে আজমের উকিল তাজুল ইসলাম বলেছেন তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে সবকটি অভিযোগই যুদ্ধের সময় তিনি যে সব ভাষণ দিয়েছিলেন, খবরের কাগজে সেইগুলির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আনা হয়েছে।
 
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাইব্যুনালে জামাত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ হওয়ার পরে শাহবাগ স্কোয়ারে মৌলবাদের বিরুদ্ধে যাঁরা নাগরিক আন্দোলন শুরু করেছেন, আজমের ব্যাপারে আদালতের রায় তাঁদের হতাশ করেছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দশটি অরাজনৈতিক সংগঠনকে নিয়ে তৈরি ‘গণজাগরন মঞ্চ’ দেশব্যাপী চব্বিশ ঘন্টার হরতালের ডাক দেয়। এই বছরের শুরুর দিকে এই মঞ্চ সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যু দন্ড চেয়ে শেখ হাসিনার সরকারের কাছে একটি দাবিপত্র জমা দিয়েছিল।
 
 ‘দ্য ডেইলি স্টার’ কাগজের ১৭ই জুলাই সংখ্যায় একটি নিবন্ধে সইয়দ বদরুল আহসান লিখেছেন,” গুলাম আজমের দোষ এটা নয় যে, তিনি পাকিস্তানে বিশ্বাস রাখতেন।তাঁর দোষ এখানে যে, রাষ্ট্রীয় মদতে গণহত্যা শুরু হওয়ার পরেও তিনি পাকিস্তানের দিকেই ছিলেন। আরও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে যে, আজম এবং তাঁর মত আরও কেউ কেউ তাঁদের নিজেদের দেশের মানুষকে ভুল বুঝতে অসাধারন পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন, এমনকি সেনাবাহিনীর লাম্পট্যের বিরুদ্ধে প্রতিটি প্রতিরোধের ঘটনাকেও তাঁরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিপদ হিসেবে দেখেছিলেন। আজমের চোখে প্রত্যেক স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন দুষ্কৃতি অথবা ভারতের চর এবং ‘পূর্ব পাকিস্তানে’ প্রতিটি অশান্তির ঘটনাকেই তাঁরা হিন্দুদের তৈরি করা বলে মনে করতেন। তাঁদের চোখে যৌন লালসা-তাড়িত পাকিস্তানি সৈন্যরাই ছিল ইসলাম এবং পাকিস্তানের একমাত্র রক্ষাকারী।“
 
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, জামাত নেতারা কখনও কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক এবং মতাদর্শগত অবস্থানের সমর্থনে কিছু বলেননি। বরং সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন অপরাধগুলির সময় তাঁরা অকুস্থলে ছিলেননা অথবা দেশের বাইরে ছিলেন। নিজেদের সম্পূর্ন নির্দোষ বলে দাবি করে তাঁরা এও বলেছেন যখনই তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ব্যাপক হারে মানুষ খুনের কথা জানতে পারেন, তখন থেকেই তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে চলে যান। অভিযুক্ত জামাত নেতাদের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে যখন তাঁদের ১৯৭১ সালে ছাপা হওয়া খবরের কাগজের রিপোর্টের অংশবিশেষ দেখান হয়, তখন তাঁরা বলেন যে, তাঁরা পাকিস্তানি বাহিনীর ভূমিকার বিরোধিতা করলেও সেকথা সেই সময়কার সংবাদপত্রে লেখা হয়নি।
 
এই বছরের জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে গ্রেপ্তার হওয়ার পর একটি বিবৃতিতে গুলাম আজম বলেছিলেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পিছনে যদি ভারতের সাহায্য না থাকত, তবে তিনি ও তাঁর মত রাজনৈতিক নেতারা তাতে যোগ দিতেন। দু’হাজার সালে জামাতের ‘আমির’ পদ ছেড়ে দেওয়া গুলাম আজম তাঁর বিবৃতিতে কোথাও বলেননি যে, তিনি এবং তাঁর দল বাংলাদেশ সৃষ্টিরই বিরোধিতা করেছিলেন। বরং তিনি দাবি করেছেন, “আমি এবং আমার মত রাজনৈতিক নেতারা, যারা ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে পারিনি, তারা পাকিস্তানি সেনাদের হাতে মানুষ যাতে অত্যাচারিত না হয়, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম।
 
“ যে ভাবে ভারত আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত সম্প্রসারণবাদী মনোভাব দেখিয়ে এসেছে, তাতে আমার এই বিশ্বাসই দৃঢ় হয়েছিল যে, যদি ভারতের সাহায্য নিয়ে দেশ স্বাধীনতা লাভ করে, তবে ভারতের বশম্বদ হয়েই আমাদের থাকতে হবে,” আজম বলেছেন।
 
“সেই কারনে কিছু বামপন্থী, সমস্ত দক্ষিনপন্থী ও ইসলামি দলগুলি এবং সেই সাথে ইসলাম-অনুসারী ব্যক্তিত্বরা সকলেই ভারতের সহায়তায় চলা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া উচিত মনে করেননি।“
 
আজম দাবি করেন তাঁর বিরুদ্ধে আনা ৬২টি অভিযোগের সবকটিই মিথ্যা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং কাল্পনিক। প্রকৃতপক্ষে গুলাম আজম কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জুড়ে, এমনকি পাকিস্তানেও (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান) প্রচার চালিয়েছিলেন। “পৃথিবীর মুসলমানদের কাছে পাকিস্তান ইসলামের নিজভূমি। তাই পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলে জামাতের কর্মীদের বেঁচে থাকার আর কোনও মানে হয়না,” বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দলের কর্মী-সমর্থকদের একজোট করার উদ্দেশ্যে একটি ভাষণে তিনি বলেছিলেন, যার রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল জামাতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে, ১৯৭১ সালে।
 
শোনা যাচ্ছে আজমের পুত্র, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমন আজমি নির্বাচনের সময় দিয়ে জামাতের পরবর্তী আমির পদে আসীন হতে পারেন।