Column

যৌথ নদী কমিশন পুনর্গঠন করা হোকঃ রাউন্ড টেবল

যৌথ নদী কমিশন পুনর্গঠন করা হোকঃ রাউন্ড টেবল

| | 14 Jul 2013, 12:06 pm
মুম্বাই, জুলাই ১৩ ঃ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নদী জল বন্টণের ব্যাপারে দীর্ঘকালীন সহযোগিতার উদ্দেশ্যে যৌথ নদী কমিশন পুনর্গঠণ করার কথা বলা হল সম্প্রতি মুম্বাইতে হয়ে যাওয়া পূর্ব হিমালয়ের ব্লু পিস রাউন্ড টেবল বৈঠকে।

 ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারনের ব্যাপারে নতুন চিন্তা ভাবনা দিয়ে সহায়তা করা সংস্থা স্ট্র্যাটেজিক ফোরসাইট গ্রুপের ডাকা এই রাউন্ড টেবলে যুগ্মভাবে সভাপতিত্ব করেন দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক করিম এবং ভারতের প্রাক্তন বিদেশ সচিব প্রোফেসর মুচকুন্দ দুবে।দু\' দেশ থেকে মোট ২৫ জন প্রবীণ কূটনীতিক, সংসদ সদস্য, প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিশেষজ্ঞরা পয়লা জুলাই থেকে হওয়া দু\'দিনের এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

 
স্ট্র্যাটেজিক ফোরসাইট গ্রুপের সভাপতি ডঃ সন্দীপ ওয়াসলেকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, " স্বল্পকালীন রাজনীতির ঝড়ঝাপটা সামলে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে যাতে জলকে ব্যবহার করা যায় তার জন্য একটি শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উপর জোর দেয় রাউন্ড টেবল। যে কাজ যৌথ নদী কমিশন এখন করছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। এর কারন, প্রকৃতপক্ষে এর পাশাপাশি আরও দু\'টি জাতীয় নদী কমিশন আছে।"
 
"সুতরাং প্রয়োজন, একটি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন প্রতিষ্ঠা করা, যার শীর্ষে পালা করে থাকবেন একজন ভারতীয় ও একজন বাংলাদেশী নেতা," তিনি বলেন।
 
ডঃ ওয়াসলেকার বলেন, প্রস্তাবিত কমিশনে দু\'দেশ থেকেই প্রতিনিধি থাকা দরকার এবং তাঁরা যৌথ সহযোগিতার ভিত্তিতে জলসম্পদ ভাগাভাগির জন্য দীর্ঘকালীন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় কাজ করবেন।
 
আলোচনায় রাউন্ড টেবলে অংশগ্রহনকারীরা দু\'দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদীর জলসম্পদের উপর আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব পরিমাপ করার উপরে বিশেষ জোর দেন। যে হেতু আবহাওয়ার পরিবর্তন বন্যা, খরা, সমুদ্র পৃষ্ঠ,বৃষ্টি এবং সমুদ্রের জলের লবনাক্ততাকে প্রভাবিত করে, তাই জলসম্পদ ব্যবহারের ব্যাপারে যে কোনও দীর্ঘকালীন পরিকল্পনায় আবহাওয়া এবং পরিবেশের পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়টি মনে রাখা দরকার বলে তাঁরা জানান।
 
বৈঠকে জলসম্পদ ব্যবহার এবং রক্ষা করার ক্ষেত্রে সুদৃঢ় প্রশাসন এবং জলে দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপরেও জোর দেওয়া হয়।
 
প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করার ব্যাপারে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার যে নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার উল্লেখ করে অংশগ্রহনকারীরা জলসম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দু\'দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বোঝাপড়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন।
 
দুই দেশ ইতিমধ্যেই সুন্দরবনে জীবন শৃংখলা রক্ষার ব্যাপারে যৌথ সহযোগিতার কর্মসূচী নিয়েছে।পরিবেশের প্রভাব খতিয়ে দেখার জন্য এবং টিপাইমুখ প্রকল্পের উপর তথ্যের আদানপ্রদানের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারেও দু\'দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে।
 
 
 জলসম্পদ ভাগাভাগির ব্যাপারে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা দু\'দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলির এবং অন্যান্য মহলের সমর্থন লাভ করে বৃহত্তর ক্ষেত্রেও গতি পাবে বলে প্রত্যয় জানিয়ে রাউন্ড টেবলের বৈঠক শেষ হয়।
 
 এই রাউন্ড টেবল বৈঠক এমন একটি সময়ে করা হল, যখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়ে চলেছে, বিশেষত২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এবং পরের বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর থেকে। সীমান্ত অতিক্রমকারী জলসম্পদের ব্যবহার নিয়ে দু\'দেশের মধ্যে বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে যেগুলির আশু সমাধান প্রয়োজন।
 
রাউন্ড টেবলে অংশগ্রহনকারী অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা ডঃ গওহর রিজভি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টি-এরশাদের নেতা, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা আনিল দাভে, প্রাক্তন মন্ত্রী ডঃ সঞ্জয় পাসোয়ান, বি জে পির পশ্চিমবঙ্গ নেতা তথাগত রায়, কংগ্রেস এম পি সঞ্জয় নিরুপম এবং ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ডসের প্রাক্তন প্রধান রাজন মেধেকার।